আশিক চৌধুরীর সাথে বিডার আগের দুই চেয়ারম্যানের তফাৎ কি?

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্সঃ

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডা এর নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী এক উপস্থাপনা দিয়েই মন কেঁড়েছে কোটি বাঙ্গালীর। শুধু যে বাংঙ্গালীদের মন জয় করেছেন তা নয়, সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সম্মেলনে বিদেশী প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের উচ্চপদস্থ নির্বাহী কর্মকর্তাদের সামনে সাবলীল ভাষায় দেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলো নিয়ে তার করা বিশ্লেষণ মন কেঁড়েছে সকলের। বড় বড় বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছেন ইতিমধ্যে। এখন প্রশ্ন হলো আশিক চৌধুরীর আগে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন কারা আর তাদের সাথে আশিক চৌধুরীর মূলত তফাৎটা কি?

আশিক চৌধুরীর আগে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন লোকমান হোসেন মিয়া। ১৯৬৩ সালে বরিশালের গৌরনদীতে জন্ম নেওয়া লোকমান হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তিনি মূলত ইতিহাসের ছাত্র ছিলেন। ১৯৮৬ সালে বিসিএস ক্যাডার হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পান তিনি। তার কর্মজীবনে তিনি সিভিল এভিয়েশন অথোরিটির পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও জীবন বীমা কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক, নরসীংদী জেলা পরিষদের সচিব, মহেশপুর উপজেলার ইউএনও, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক, ঢাকা সিটির জোনাল এক্সিকিউটিভ অফিসার, জাতীয় সংসদের হুইপ এর একান্ত সচিব, নারায়নগঞ্জ ও আড়াইহাজার উপজেলার সহকারী কমিশনারসহ সরকারি বিভিন্ন সেক্টরের প্রায় ৩০ টি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তবে কর্মজীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শিক্ষাজীবনের বিষয় সম্পর্কিত কোন দায়িত্বই পালন করেননি লেকমান হোসেন। সর্বশেষ ২০২২ সালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি।

অন্যদিকে লোকমান হোসেন মিয়ার আগে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন মোঃ সিরাজুল ইসলাম। ১৯৫৮ সালে গাজীপুরে জন্মগ্রহণ করা সিরাজুল ইসলাম শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ের ওপর স্নাতক ও স্নাতকত্তর ডিগ্রী নেন। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রশাসনের উপর স্নাতক ডিপ্লোমাও সম্পন্ন করেন। আইন ও প্রশাসনে পড়াশোনা করা এই ব্যক্তি ১৯৮৩ সালে সিভিল সার্ভিসে তার কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর তিনি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। আইন ও প্রশাসনে পড়াশোনা করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন সিরাজুল ইসলাম। বৈদেশিক বিনিয়োগের নানা খাতেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

এদিকে বিডার বর্তমান নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর সাথে যেনো বিস্তর ফারাক তাদের। আশিক চৌধুরী চাঁদপুরের সন্তান হলেও বাবার চাকরির সুবাদে তার বেড়ে ওঠা যশোরে। তিনি সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি সম্পন্ন করার পর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট আইবিএ-তে। তিনি ২০০৭ সালে স্নাতক শেষ করেই দেশের একটি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন আর সেখানেই ২০১১ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান এবং সেখান থেকেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে নতুন অধ্যায় শুরু হয় আশিক চৌধুরীর। তার কর্মজীবন শুরু করেন ২০০৭ সালে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোতে আঞ্চলিক অফিসার হিসেবে। ২০০৭ সালের আগস্ট মাসে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে যোগ দেন এবং সেখানে মার্চ ২০১১ পর্যন্ত ল্যান্ডিং স্ট্র্যাটেজি এন্ড ফিনান্সিয়াল প্ল্যানিং বিভাগে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন। তিনি দ্যা বেঞ্চ নামে বাংলাদেশে প্রথম স্পোর্টস বার সহপ্রতিষ্ঠা করেন। ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে আশিক লন্ডনে আমেরিকান এয়ারলাইন্সে ফিনান্সিয়াল ও স্ট্র্যাটেজিক এনালিস্ট হিসেবে যোগ দেন এবং মে ২০১৯ এ ইউরোপ ও এশিয়ার ফাইনান্স প্রধান হিসেবে পদত্যাগ করেন। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এ ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবেও কর্মরত ছিলেন আশিক চৌধুরী। বাংলাদেশ ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে পেশাগত কৃতিত্বের জন্য অ্যাওয়ার্ডও পান তিনি। ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইনান্স ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং এ অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর ছিলেন।

আশিক চৌধুরীর আগের যে দুজন বিডার দায়িত্ব পালন করেছেন তারা অনেকটাই নিজেদের শিক্ষাজীবনের সাথে সম্পর্কিত বিষয়ের বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন, কিন্তু এক্ষেত্রে যেনো আশিক চৌধুরী ভিন্ন। শিক্ষাজীবন থেকে ক্যারিয়ারের পুরোটা জুড়েই ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সম্পর্কিত ছিলো তার। এক কথায় পড়াশোনা এবং কর্মক্ষেত্রের সাথে সামঞ্জস্যতাই তাকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে। আশিক চৌধুরী বহুগুণে গুণান্বিত। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বুকে নাম লিখিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পাওয়া স্কাইডাইভার আশিক চৌধুরী এখন দেশের উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। দেশের লাল সবুজের পতাকা নিয়ে ৪১ হাজার ফুট উঁচু থেকে লাফিয়ে গিনেজ ওয়ার্ল্ডস রেকর্ডস বুকে নাম লিখিয়েছিলেন তিনি।

২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর ২০২৫ এর ৭ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ তার পদমর্যাদা প্রতিমন্ত্রীর সমপর্যায়ে উন্নীত করে। বর্তমানে আশিক চৌধুরীর হাত ধরেই বাংলাদেশে আসতে যাচ্ছে বিদেশি বড় বড় নামিদামি সব ব্র্যান্ডের বিনিয়োগ।

সর্বশেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:৪৮
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও