পারা ২৬ (সূরা আল-আহকাফ থেকে সূরা আদ-দাহরের কিছু অংশ পর্যন্ত):
১. সূরা আল-আহকাফ (৪৬)
√ এই সূরায় পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের প্রতি আল্লাহর আযাব ও সতর্কবাণী বর্ণনা করা হয়েছে।
√ জিনদের একটি দলের নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর কাছে কুরআন শুনে ঈমান আনার ঘটনা উল্লেখ রয়েছে।
√ পিতামাতার সাথে সদাচরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে (বিশেষ করে মায়ের প্রতি)।
√ কিয়ামত ও পুনরুত্থানের দিনের আলোচনা রয়েছে।
২. সূরা মুহাম্মাদ (৪৭)
√ ঈমানদার ও কাফিরদের মধ্যে পার্থক্য বর্ণনা করা হয়েছে।
√ জিহাদ ও আল্লাহর পথে সম্পদ ব্যয়ের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
√ জান্নাতের বর্ণনা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৩. সূরা আল-ফাতহ (৪৮)
√ হুদাইবিয়ার সন্ধিকে “স্পষ্ট বিজয়” (ফাতহুন মুবীন) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
√ নবী (সা.) ও সাহাবীদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ রহমত ও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
√ মুমিনদের বৈশিষ্ট্য ও জান্নাতের সুসংবাদ বর্ণনা করা হয়েছে।
৪. সূরা আল-হুজুরাত (৪৯)
√ আদব-শিষ্টাচার, সম্মান ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
√ গীবত, সন্দেহ ও উপহাস থেকে বিরত থাকার তাগিদ রয়েছে।
√ তাকওয়া ও আত্মসংযমের গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।
৫. সূরা ক্বাফ (৫০)
√ পুনরুত্থান ও কিয়ামতের প্রমাণ হিসেবে প্রকৃতি ও মানব সৃষ্টির নিদর্শনগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
√ মৃত্যুপরবর্তী জীবন, হিসাব-নিকাশ ও জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনা রয়েছে।
৬. সূরা আদ-দারিয়াত (৫১) ও সূরা আত-তূর (৫২)
√ কাফিরদের শাস্তি ও মুমিনদের পুরস্কারের আলোচনা রয়েছে।
√ নবী-রাসুলদের প্রতি মানুষের অস্বীকৃতি ও এর পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে।
৭. সূরা আন-নাজম (৫৩)
√ নবী (সা.)-এর মিরাজের ঘটনা ও divine revelation-এর সত্যতা নিয়ে আলোচনা রয়েছে।
√ মূর্তিপূজার নিষেধ ও একত্ববাদের প্রতি আহ্বান করা হয়েছে।
৮. সূরা আল-কামার (৫৪)
√ অতীত জাতিগুলোর (নূহ, আদ, সামুদ, লূত ও ফিরাউন) ধ্বংসের ইতিহাস ও শিক্ষা বর্ণনা করা হয়েছে।
√ কুরআনকে সহজ করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু মানুষ উপদেশ গ্রহণ করে না—এমন সমালোচনা রয়েছে।
৯. সূরা আর-রহমান (৫৫)
√ আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামত ও সৃষ্টির নিদর্শন বর্ণনা করা হয়েছে।
√ বারবার “فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ” (অতএব, তোমরা তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে?) এই প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে।
√ জান্নাতের সুখ-সমৃদ্ধির বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
১০. সূরা আল-ওয়াকিয়াহ (৫৬)
√ কিয়ামতের দিন মানুষ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত হবে: আস-সাবিকুন (অগ্রগামী), আসহাবুল-ইমান (ডানপন্থী) ও আসহাবুশ-শিমাল (বামপন্থী/অভিশপ্ত)।
√ মৃত্যু ও পুনরুত্থানের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।
১১. সূরা আল-হাদিদ (৫৭) থেকে কিছু অংশ
√ দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী, আখিরাতই স্থায়ী এই বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
√ আল্লাহর পথে দান-খয়রাত ও সদকার গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।
মূল বার্তা : এই পারায় ঈমান, তাকওয়া, নৈতিকতা, পরকালের প্রস্তুতি ও আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি গভীর চিন্তার আহ্বান রয়েছে। পাশাপাশি, অতীত জাতিগুলোর ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক পথে চলার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
রমজানের ২৬তম তারাবিতে এই পারার তেলাওয়াত সাধারণত শেষ তারাবিহ হিসেবে সম্পন্ন হয় (কারণ কুরআন ৩০ পারায় বিভক্ত)। পরবর্তী দিনগুলোতে বাকি পারাগুলো তেলাওয়াত করা হয়।
রমজানের শেষ প্রহর (অন্তিম সময়) অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ ও মহিমান্বিত মুহূর্ত। এই সময়ে মুসলিম উম্মাহর মুক্তির জন্য করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো নিম্নরূপ:
করণীয় বিষয়সমূহ:1. ইস্তেগফার ও তাওবা: বেশি বেশি ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) ও তাওবা করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,
• “তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সুরা আন-নিসা: ১০৬)
• অতীতের সব গুনাহের জন্য খাঁটি মনে অনুতপ্ত হওয়া।
2. দোয়া ও ইবাদত: শেষ প্রহরে “লাইলাতুল কদর” তালাশ করা এবং বেশি বেশি দোয়া, জিকির, তাসবিহ ও কুরআন তিলাওয়াত করা।
• রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদত করে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (বুখারি: ১৯০১)
• বিশেষভাবে “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি”
• (হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসো, তাই আমাকে ক্ষমা করে দাও) দোয়াটি পড়া।
3. সদকা ও দান: শেষ সময়ে বেশি বেশি সদকা দেওয়া। রাসূল (সা.) রমজানে বিশেষভাবে দানশীল ছিলেন। (বুখারি: ১৯০২)
4. কুরআন অধ্যয়ন ও আমল: • কুরআন তিলাওয়াত, তাদাব্বুর (গভীরভাবে চিন্তা) করা এবং এর শিক্ষা জীবনে বাস্তবায়নের সংকল্প করা।
5. পরিবার-পরিজনকে ইবাদতে উদ্বুদ্ধ করা: পরিবার ও আত্মীয়স্বজনকে শেষ প্রহরের ফযীলত সম্পর্কে সচেতন করা এবং তাদেরকে ইবাদতে শরিক করা।
বর্জনীয় বিষয়সমূহ:1. গুনাহ ও অহেতুক কাজ থেকে বিরত থাকা:
• রমজানের শেষ মুহূর্তেও গিবত, অপবাদ, মিথ্যা, অশ্লীলতা ও সব ধরনের পাপ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকা।
2. অলসতা ও সময় নষ্ট না করা: শেষ সময়টুকু টিভি, সোশ্যাল মিডিয়া, গল্পগুজব বা অন্যান্য বিনোদনে নষ্ট না করে ইবাদত ও দোয়ায় মগ্ন থাকা।
3. রিয়া (লোক দেখানো ইবাদত) পরিহার করা: শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত করা, মানুষের প্রশংসা বা প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য নয়।
4. অহংকার ও বিদ্বেষ ত্যাগ করা: কারো প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ না করে সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া এবং নিজের অহংকার দূর করা।
5. ইফতারের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ইবাদত চালিয়ে যাওয়া: ইফতারের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে শেষ সময়ের ইবাদত থেকে গাফেল না হওয়া।
মুক্তির পথ: রমজানের শেষ প্রহর হলো আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভের সর্বশেষ সুযোগ। এ সময়ে বেশি করে দোয়া করা উচিত:
“হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসো, তাই আমাকে ক্ষমা করে দাও।”
এবং নবীজি (সাঃ)-এর শিখানো এই দোয়াটি পড়া: “আল্লাহুম্মা আজ্জিম্নী ফীহি লি-মুশাহাদাতি আমাদিকা ওয়া আউইন্নী ফীহি আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা।” (হে আল্লাহ! আমাকে এই মাসে তোমার রহমতের সন্ধান দাও, আমাকে তোমার স্মরণ ও শুকরিয়া আদায়ে সাহায্য করো এবং উত্তম ইবাদতের তাওফিক দান করো।)
মুমিন হিসেবে আমাদের উচিত রমজানের শেষ মুহূর্তটুকুও কাজে লাগানো, যাতে আমরা আল্লাহর ক্ষমা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করতে পারি।
সর্বশেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৫, ০৩:২৫
পাঠকের মন্তব্য