২৫তম তারাবিহর সালাতে ২৫তম পারার তেলাওয়াতের সারসংক্ষেপ
(সূরা ফুসিলাত [৪১:৪৬] থেকে সূরা আল-জাসিয়া [৪৫:৩৭] পর্যন্ত)
১. সূরা ফুসিলাত (৪১:৪৬-৫৪): আল্লাহর নিদর্শনাবলি ও একত্ববাদের প্রতি আহ্বান।
√ কুরআন সত্য, কিন্তু অহংকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করে।
√আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা প্রার্থনার গুরুত্ব।
২. সূরা আশ-শুরা (৪২:১-৫৩): আল্লাহর কাছ থেকে ওহী প্রেরণের পদ্ধতি বর্ণনা।
√ পার্থিব জীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব ও আখিরাতের স্থায়ী সুখের সতর্কতা।
√ বিবাদ নিষ্পত্তিতে ক্ষমা ও সমঝোতার তাগিদ।
৩. সূরা আয-যুখরুফ (৪৩:১-৮৯): কুরআনের মর্যাদা ও পবিত্রতা।
√ ইব্রাহিম (আ.)-এর প্রতি শত্রুতার জবাবে তার ধৈর্য ও আল্লাহর সাহায্য।
√ দুনিয়ার সম্পদ অহংকারের কারণ না হওয়ার উপদেশ।
৪. সূরা আদ-দুখান (৪৪:১-৫৯): কুরআন নাজিলের ফজিলত ও লাইলাতুল কদরের মর্যাদা।
√\ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়ের ধ্বংসের ইতিহাস।
√ মুমিনদের জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি।
৫. সূরা আল-জাসিয়া (৪৫:১-৩৭): প্রকৃতি ও ইতিহাসে আল্লাহর নিদর্শনসমূহ।
√ ইহুদি ও খ্রিস্টানদের ভ্রান্ত ধারণার খণ্ডন।
√ আখিরাতে প্রত্যেকের কর্মফল প্রদানের ঘোষণা।
এই পারায় আল্লাহর নিদর্শন, নবীদের সংগ্রাম, কিয়ামতের চিত্র ও ইবাদতের গুরুত্ব ফুটে উঠেছে। অহংকার ত্যাগ করে সত্য গ্রহণ ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
মাহে রমজানের শেষ দশকের তারাবিহতে এই তেলাওয়াত মুমিনদের আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনে অনুপ্রাণিত করে।
আল্লাহর নিদর্শন (আয়াত) সম্পর্কে সহীহ হাদিসে অনেক বর্ণনা রয়েছে। নিচে কয়েকটি সহীহ হাদিসের রেফারেন্স সহ আলোচনা করা হলো:
১. প্রকৃতিতে আল্লাহর নিদর্শন: আল্লাহর সৃষ্টির মাঝে অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে, যা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “নিশ্চয়ই সৃষ্টির মাঝে আল্লাহর নিদর্শন রয়েছে, যা বুদ্ধিমানদের জন্য শিক্ষণীয়।” (সহীহ বুখারী, ৩২৮২; সহীহ মুসলিম, ২৮১১)
২. রাত ও দিনের আবর্তন: আল্লাহ তাআলা বলেন: “নিশ্চয়ই রাত ও দিনের পরিবর্তনে এবং আল্লাহর সৃষ্ট আসমান ও জমিনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য।” (সূরা ইউনুস ১০:৬)
> এই আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসূল (সা.) বলেছেন: “আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি গভীরভাবে চিন্তা করো, তবে তাঁর সত্তা সম্পর্কে নয়।” (সুনান ইবনে মাজাহ, ৪১৯৯; আল-মুসনাদ আহমদ, ১৬৮৬৪—হাসান)
৩. বৃষ্টি ও উদ্ভিদের সৃষ্টি: আল্লাহর কুদরাতের নিদর্শন হিসেবে বৃষ্টি ও ফসলের কথা হাদিসে এসেছে:
> “তোমরা কি দেখ না আল্লাহ কীভাবে মেঘমালাকে পরিচালনা করেন, তারপর সেগুলোকে একত্রিত করেন, অতঃপর সেগুলোকে স্তরে স্তরে সাজান? তখন তোমরা দেখতে পাবে তার মাঝ থেকে বৃষ্টি বের হয়। তিনি আকাশ থেকে পর্বতসম তুষার বর্ষণ করেন, অতঃপর তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যার থেকে ইচ্ছা তা ফিরিয়ে নেন।” (সূরা নূর ২৪:৪৩)
> এই বিষয়ে রাসূল (সা.) বলেছেন: “আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি যেমন মৃত জমিনকে সজীব করে, তেমনি তাঁর বাণী মৃত হৃদয়কে সজীব করে।” (সহীহ বুখারী, ১০৩৮; সহীহ মুসলিম, ৫৯১)
৪. মানবদেহে আল্লাহর নিদর্শন: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ”নিশ্চয়ই তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টি মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিনে জমাট রক্তরূপে সংগঠিত হয়… অতঃপর আল্লাহ তাআলা ফেরেশতা পাঠান এবং চারটি বিষয় লিখতে বলেন: তার রিজিক, মৃত্যু, আমল ও সে সুখী হবে না দুঃখী।” (সহীহ বুখারী, ৩২০৮; সহীহ মুসলিম, ২৬৪৩)
> এটি আল্লাহর কুদরাতের অন্যতম নিদর্শন।
৫. কিয়ামতের নিদর্শন: হাদিসে কিয়ামতের ছোট ও বড় নিদর্শন সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। যেমন:
> “কিয়ামত তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে যখন জ্ঞান উঠিয়ে নেওয়া হবে, অজ্ঞতা ছড়িয়ে পড়বে, মদ্যপান বৃদ্ধি পাবে এবং প্রকাশ্যে ব্যভিচার হবে।” (সহীহ বুখারী, ৮০; সহীহ মুসলিম, ২৬৭০)
৬. আল্লাহর কিতাব (কুরআন) নিদর্শন:
রাসূল (সা.) বলেছেন: ”এই কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন, এটি এমন একটি রজ্জু যা আকাশ থেকে তোমাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। অতএব, তোমরা এটি আঁকড়ে ধর।” (সুনান তিরমিযী, ২৯০৬—হাসান সহীহ)
প্রকৃতি, মানব সৃষ্টি, কুরআন ও কিয়ামতের আলামত—সবই আল্লাহর নিদর্শন। এগুলো সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে ঈমান বৃদ্ধি পায়।
আল্লাহ তাআলা আমাদের তাঁর নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করার তাওফিক দান করুন। আমীন!
সর্বশেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫, ১৯:৫০
পাঠকের মন্তব্য