২৪তম পারা (সূরা আয-যুমার ৩২ থেকে সূরা গাফির ৪০ পর্যন্ত) এর মূল বিষয়বস্তুর সারসংক্ষেপ নিচে দেওয়া হলো:
সূরা আয-যুমার (৩৯:৩২-৭৫)
√ আল্লাহর একত্ববাদ : সত্যিকারের মুমিন শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করে এবং শিরক থেকে দূরে থাকে (৩২-৩৫)।
√ পরকালের স্মরণ : মৃত্যুর পর পুনরুত্থান ও আল্লাহর সামনে উপস্থিতির বর্ণনা (৩৬-৪৭)।
√ অনুতাপের গুরুত্ব : আল্লাহ ক্ষমাশীল, গুনাহ থেকে তাওবা করে তাঁর দিকে ফিরে আসার আহ্বান (৫৩-৫৯)।
√ জাহান্নামের ভীতি ও জান্নাতের প্রতিশ্রুতি : কাফিরদের শাস্তি এবং মুমিনদের পুরস্কারের বিবরণ (৬০-৭৫)।
সূরা গাফির (মু’মিন) (৪০:১-৮৫)
√ আল্লাহর ক্ষমা ও শাস্তি : তিনি গুনাহ মাফ করেন কিন্তু শিরকের শাস্তি দেন (১-৩)।
√ প্রাকৃতিক নিদর্শনে আল্লাহর মহিমা: আকাশ, পৃথিবী ও মানবসৃষ্টিতে তাঁর কুদরতের প্রমাণ (৪-২০)।
√ ফেরাউনের কাহিনী : মুসা (আঃ)-এর মাধ্যমে ফেরাউনের অহংকার ও ধ্বংসের ইতিহাস (২৩-৫০)।
√ আখিরাতে বিশ্বাস : মৃত্যুর পর পুনরুত্থান ও হিসাব-নিকাশের ব্যাপারে সতর্কবাণী (৫১-৬০)।
√ দোয়ার গুরুত্ব : আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া এবং তাঁর রহমত কামনা করার নির্দেশ (৬৫-৬৬)।
মূল শিক্ষা:
১. তাওহিদ ও ইবাদত : শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত এবং শিরক পরিহার।
২. তাওবা ও রহমত : আল্লাহর ক্ষমা অসীম, গুনাহ থেকে ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে।
৩. আখিরাতের প্রস্তুতি : মৃত্যু ও পরকালীন জীবনের জন্য নেক আমল করা জরুরি।
৪. প্রকৃতির মধ্যে আল্লাহর নিদর্শন : সৃষ্টিজগৎ সম্পর্কে চিন্তা করে ঈমান বৃদ্ধি করা।
এই পারায় ঈমান, তাওবা, আল্লাহর কুদরত এবং পরকালের চিত্র ফুটে উঠেছে, যা রমজানের তারাবিহতে গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রতিফলিত হয়।
শিরক ও কুফর ইসলামী ধর্মতত্ত্বে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অপরাধ, যা কুরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে সহীহ হাদিসের রেফারেন্সসহ শিরক ও কুফর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
শিরক (شرك)
শিরক হলো আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা বা সমকক্ষ মনে করা। এটি ইসলামে সবচেয়ে বড় পাপ এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
হাদিসে শিরকের গুরুত্ব:
1. সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত: নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন:
> “আমি তোমাদের জন্য যে জিনিসটিকে সবচেয়ে বেশি ভয় করি, তা হলো ছোট শিরক। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! ছোট শিরক কী?’
তিনি বললেন, ‘রিয়া (লোক দেখানো আমল)।
আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন লোকদেরকে তাদের প্রতিদান দেবার সময় বলবেন, ‘তোমরা দুনিয়াতে যাদেরকে দেখাতে চেয়েছিলে, তাদের কাছে যাও এবং দেখো তারা তোমাদেরকে কী প্রতিদান দেয়।’”
(সহীহ বুখারী, হাদিস নং ২৪৮৮; সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ২৯৮৫)
2. সহীহ বুখারীতে বর্ণিত: নবী (সাঃ) বলেছেন:
> “যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করবে, আল্লাহ তার জান্নাত হারাম করে দেবেন এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর যালিমদের (অত্যাচারীদের) জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই। “(সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৪৪৯৭)
3. সহীহ মুসলিমে বর্ণিত: নবী (সাঃ) বলেছেন:
> “আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি সবচেয়ে বেশি অহংকারী এবং সবচেয়ে বেশি অত্যাচারী। যে ব্যক্তি আমার সাথে অন্য কাউকে শরিক করে, আমি তার আমল ধ্বংস করে দিই।’” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ২৯৮৫)
কুফর (كفر)
কুফর অর্থ ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস বা বিধানকে অস্বীকার করা। এটি শিরকের চেয়ে ব্যাপক অর্থবহ, কারণ শিরকও এক ধরনের কুফর।
হাদিসে কুফরের গুরুত্ব:
1. সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত: নবী (সাঃ) বলেছেন:
> “কোনো ব্যক্তি অন্যকে ‘হে কাফির!’ বলে ডাকলে, যদি সে প্রকৃতপক্ষে কাফির না হয়, তবে এই অভিযোগ ডাকনাকারীর উপরই ফিরে আসবে।”(সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৬০৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৬০)
2. সহীহ মুসলিমে বর্ণিত: নবী (সাঃ) বলেছেন:
> “যে ব্যক্তি আমাদের সালাত আদায় করে না, আমাদের কিবলার দিকে মুখ করে না এবং আমাদের জবেহকৃত পশু খায় না, সে মুসলিম নয়।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ১৪৫)
3. সহীহ বুখারীতে বর্ণিত: নবী (সাঃ) বলেছেন:
> “যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম খায়, সে শিরক করেছে।”(সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৬৬৫২)
শিরক ও কুফরের পার্থক্য:
1. শিরক : আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করা। এটি সবচেয়ে বড় পাপ এবং ক্ষমার অযোগ্য, যদি তাওবা না করা হয়।
2. কুফর : ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস বা বিধানকে অস্বীকার করা। শিরকও এক ধরনের কুফর, তবে সব কুফর শিরক নয়।
উপসংহার:
শিরক ও কুফর উভয়ই ইসলামে গুরুতর পাপ। শিরককে সবচেয়ে বড় পাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা আল্লাহ ক্ষমা করবেন না, যদি না তাওবা করা হয়। কুফরও ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসকে অস্বীকার করার কারণে গুরুতর অপরাধ। এই বিষয়গুলো কুরআন ও সহীহ হাদিসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।
রেফারেন্স:
1. সহীহ বুখারী (হাদিস নং ২৪৮৮, ৪৪৯৭, ৬৬৫২)
2. সহীহ মুসলিম (হাদিস নং ২৯৮৫, ১৪৫)
3. সহীহ বুখারী (হাদিস নং ৬০৪৫)
সর্বশেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৫, ০০:০৩
পাঠকের মন্তব্য