মাহে রমজানের ১৯তম তারাবির সালাতে ১৯তম পারা তেলাওয়াত করা হয়। এই পারায় সুরা আল-ফুরকান (২৫তম সুরা) এবং সুরা আশ-শুআরা (২৬তম সুরা) এর কিছু অংশ রয়েছে। নিচে এই পারার সারসংক্ষেপ দেওয়া হলো:
সুরা আল-ফুরকান (২৫তম সুরা):এই সুরায় আল্লাহ তায়ালার মহিমা ও ক্ষমতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
* কাফিরদের মিথ্যা দাবি ও তাদের বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে।
* নবী-রাসুলদের প্রতি মানুষের অবিশ্বাস ও তাদের বিরুদ্ধাচরণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
* মুমিনদের গুণাবলি ও তাদের পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে।
* আল্লাহর নিদর্শন ও সৃষ্টির মধ্যে তাঁর মহিমা প্রকাশের কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
সুরা আশ-শুআরা (২৬তম সুরা): এই সুরায় বিভিন্ন নবী-রাসুলদের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে, যেমন মুসা (আঃ), ইব্রাহিম (আঃ), নূহ (আঃ), হুদ (আঃ), সালেহ (আঃ), লুত (আঃ) এবং শুআইব (আঃ)।
* প্রত্যেক নবীর কাহিনীতে তাদের সম্প্রদায়ের অবিশ্বাস ও শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
* কাফিরদের পরিণতি ও মুমিনদের সাফল্যের কথা বলা হয়েছে।
* কুরআনের মহিমা ও এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এই পারায় আল্লাহর একত্ববাদ, নবীদের দাওয়াত, এবং মানুষের দায়িত্ব ও জবাবদিহিতার বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণভাবে ফুটে উঠেছে।
মাহে রমাদানে রোজা কবুল হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। নিম্নে কিছু উপায় উল্লেখ করা হলো, যেগুলো অনুসরণ করে আপনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে পারেন:
১. খালেস নিয়ত (ঈমান ও ইখলাসের সাথে)
* রোজা রাখার সময় শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিয়ত করুন। রিয়া (লোক দেখানো) থেকে দূরে থাকুন।
* রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই কর্মসমূহ নিয়তের উপর নির্ভরশীল।” (সহীহ বুখারী)
২. দোয়া ও ইস্তেগফার
*রোজা রাখার সময় বেশি বেশি দোয়া ও ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করুন। আল্লাহ তাআলা রোজাদারদের দোয়া কবুল করেন।
* রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “রোজাদারের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না।” (সুনানে ইবনে মাজাহ)
৩. কুরআন তিলাওয়াত ও তারাবিহ সালাত।
* মাহে রমজানে কুরআন তিলাওয়াত করুন এবং তারাবিহ সালাত আদায় করুন। কুরআন তিলাওয়াত ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করুন।
৪. সাদাকা ও দান-খয়রাত
* রমজান মাসে বেশি বেশি সাদাকা ও দান-খয়রাত করুন। গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করুন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “সাদাকা গুনাহ মিটিয়ে দেয়।” (তিরমিযি)
৫. ইফতার ও সাহরিতে দোয়া
* ইফতার ও সাহরির সময় দোয়া করুন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “রোজাদারের ইফতারের সময়ের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না।” (সুনানে ইবনে মাজাহ)
৬. তাওবা ও আত্মসমালোচনা
* রমজান মাসে অতীতের গুনাহের জন্য তাওবা করুন এবং ভবিষ্যতে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার দৃঢ় সংকল্প করুন।
৭. সহমর্মিতা ও ভালোবাসা
* রমজান মাসে পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সমাজের সাথে ভালো ব্যবহার করুন এবং সহমর্মিতা প্রদর্শন করুন।
৮. লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান
* রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর (কদরের রাত) অনুসন্ধান করুন এবং এই রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হোন। এই রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম।
৯. দোয়ার জন্য উত্তম সময়
* সাহরি ও ইফতারের সময়, সিজদার সময় এবং তাহাজ্জুদ নামাজের সময় দোয়া করার জন্য উত্তম সময়।
১০. আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা
* রোজা রাখার সুযোগ দেওয়ার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন এবং তাঁর রহমত ও মাগফিরাত কামনা করুন।
দোয়ার উদাহরণ:
“হে আল্লাহ, আপনি আমার রোজা কবুল করুন এবং আমাকে আপনার রহমত ও মাগফিরাত দান করুন।”
“হে আল্লাহ, আপনি আমার গুনাহ ক্ষমা করুন এবং আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিন।”
মাহে রমজান হলো তাকওয়া অর্জন ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাস। এই মাসে বেশি বেশি ইবাদত, দোয়া ও তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করুন।
সর্বশেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪২
পাঠকের মন্তব্য