১৬তম তারাবিহর সালাতে ১৬তম পারার (জুয) তেলাওয়াত সাধারণত সূরা আল-কাহফ (১৮) এর শেষ অংশ, সূরা মারইয়াম (১৯), এবং সূরা ত্বোয়া-হা (২০) এর প্রথম অংশ নিয়ে গঠিত। নিচে এই পারার মূল বিষয়বস্তুর সারসংক্ষেপ দেওয়া হলো:
১. সূরা আল-কাহফ (১৮:৭৫–১১০) এই অংশে নবী মুসা (আঃ) ও খিজির (আঃ)-এর কাহিনী বিস্তারিত বলা হয়েছে। খিজিরের রহস্যময় কাজগুলো (জাহাজ ডুবানো, একটি শিশুকে হত্যা করা, ও একটি দেয়াল মেরামত করা) এর মাধ্যমে আল্লাহর গূঢ় জ্ঞান ও হিকমতের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। মূল বার্তা হলো: মানুষের সীমিত জ্ঞান দিয়ে আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বিচার করা যায় না। পারার শেষে “আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম বর্ণনাই পৌঁছায়” (১৮:৭৮) এর মতো আয়াত দ্বারা তাওহিদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
২. সূরা মারইয়াম (১৯) এই সূরায় নবী ঈসা (আঃ)-এর মা মারইয়াম (আঃ)-এর পবিত্র জীবন, অলৌকিকভাবে ঈসার জন্ম, এবং অন্যান্য নবীদের (হযরত যাকারিয়া, ইব্রাহিম, ইদ্রিস (আঃ) ) কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
* আল্লাহর ক্ষমতায় অসম্ভবকে সম্ভব করা (যেমন: বিনা পিতায় ঈসার (আঃ) জন্ম)।
* ইবাদত ও আত্মসমর্পণের গুরুত্ব।
* কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা এবং অবিশ্বাসীদের পরিণতি।
* “যে ব্যক্তি দয়াময়ের ইবাদত করে, তার জন্য তিনি পথ তৈরি করে দেন” (১৯:৯৬) এর মতো আয়াত দ্বারা আল্লাহর রহমতের প্রতিশ্রুতি।
৩. সূরা ত্বোয়া-হা (২০:১–১৩৫) এই সূরার শুরুতে নবী মুসা (আঃ)-এর সাথে আল্লাহর সরাসরি কথোপকথন, ফেরাউনের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রাম, এবং বনী ইসরাইলের হিদায়াতের কাহিনী রয়েছে। এছাড়া আদম (আঃ)-এর সৃষ্টি ও শয়তানের অহংকারের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। মূল শিক্ষা:
* আল্লাহর নির্দেশনা ছাড়া মানুষ পথভ্রষ্ট হয়।
* অহংকার ও জুলুমের পরিণতি ধ্বংস।
* “নিশ্চয়ই আমার রব ক্ষমাশীল ও প্রেমময়” (২০:৮২) এর মাধ্যমে তাওবার গুরুত্ব।
সারমর্ম: ১৬তম পারায় আল্লাহর অলৌকিক ক্ষমতা, নবীদের সংগ্রাম, তাওহিদের প্রতি আহ্বান, এবং আখিরাতের স্মরণ প্রাধান্য পেয়েছে। এই অংশে ইবাদতের মধ্যে ধৈর্য, আল্লাহর হিকমতে আস্থা, এবং অহংকার ত্যাগ করার মতো শিক্ষাগুলো প্রতিফলিত হয়েছে। তারাবিহর সালাতে এই তেলাওয়াত মুসল্লিদকে আধ্যাত্মিকভাবে উদ্দীপ্ত করে এবং কুরআনের গভীর তাৎপর্য অনুধাবনে সাহায্য করে।
বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর পাপ থেকে বাঁচার উপায়:
১. তাকওয়া অর্জন: আল্লাহর ভয় ও পরকালীন জবাবদিহিতার অনুভূতি (সূরা আল-হাশর ৫৯:১৮)।
২. কুরআন-সুন্নাহর অনুসরণ: দৈনিক কুরআন তেলাওয়াত ও হাদিস অধ্যয়ন।
৩. ফরজ ইবাদতের যত্ন: নামাজ, রোজা, যাকাতের প্রতি যত্নশীলতা (সূরা আল-আনকাবুত ২৯:৪৫)।
৪. দাওয়াত ও সমাজ সংশোধন: সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা (সূরা আল-আসর ১০৩:৩)।
৫. তাওবা ও ইস্তিগফার: নিয়মিত ক্ষমা প্রার্থনা (সূরা আন-নূর ২৪:৩১)।
৬. নেক সঙ্গতি: সৎ ব্যক্তির সংসর্গ ও অসৎ সঙ্গ বর্জন।
৭. মিডিয়া ব্যবহারে সতর্কতা: অশ্লীলতা ও ফিতনা থেকে দূরে থাকা।
৮. ইলম চর্চা: দ্বীনি শিক্ষার প্রসার ও জাগরুকতা (হাদিস: “ইলম অর্জন ফরজ”)।
৯. সাদাকাহ ও খিদমত: গরিব-দুঃখীর সাহায্য ও সমাজসেবা।
১০. পরিবারে ইসলামিক পরিবেশ: ইসলামিক মূল্যবোধে সন্তান লালন।
মূল বার্তা: আত্মশুদ্ধি, সমাজ সংশোধন ও আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করাই পাপ থেকে বাঁচার মূল চাবিকাঠি।
সর্বশেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪১
পাঠকের মন্তব্য