১৫তম পারা (সূরা বনী ইসরাঈল বা সূরা আল-ইসরাঈল এবং সূরা কাহফের অংশবিশেষ) এর সারসংক্ষেপ নিম্নরূপ:
১. সূরা বনী ইসরাঈল (সূরা আল-ইসরাঈল):
* এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এটি বনী ইসরাঈল (ইহুদি সম্প্রদায়) সম্পর্কে আলোচনা করে।
* সূরার শুরুতে আল্লাহ তা’আলা বনী ইসরাঈলকে তাদের প্রতি প্রদত্ত নিয়ামত ও তাদের অবাধ্যতার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
* আল্লাহর একত্ববাদ, নবীদের প্রতি বিশ্বাস, আখিরাতের দিনের প্রতি বিশ্বাস, এবং নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
* এই সূরায় মিরাজের ঘটনার উল্লেখ রয়েছে, যেখানে রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
* সূরাটিতে মানুষের জন্য উপদেশ ও নৈতিক নির্দেশনা রয়েছে, যেমন পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার, দান-খয়রাত, এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।
২. সূরা কাহফ (প্রথম অংশ):
* সূরা কাহফ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা, বিশেষ করে ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য।
* সূরার শুরুতে আল্লাহ তা’আলা কুরআনের মহিমা এবং এটি মানুষের জন্য হিদায়াত হিসেবে প্রেরিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।
* সূরাটিতে আসহাবে কাহফ (গুহাবাসী যুবকদের) এর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে, যারা তাদের ঈমান রক্ষার জন্য একটি গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং আল্লাহ তাদেরকে দীর্ঘ সময় ধরে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলেন।
* এই কাহিনীটি আল্লাহর ক্ষমতা ও তাঁর অলৌকিক কাজের প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে।
সারসংক্ষেপ:
১৫তম পারা মূলত সূরা বনী ইসরাঈল এবং সূরা কাহফের প্রথম অংশ নিয়ে গঠিত। এই পারায় আল্লাহর একত্ববাদ, নবীদের প্রতি বিশ্বাস, আখিরাতের দিনের প্রতি বিশ্বাস, এবং নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও, মিরাজের ঘটনা এবং আসহাবে কাহফের কাহিনী এই পারার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই পারা তেলাওয়াত ও চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে মুমিনদের ঈমান ও নৈতিক চরিত্র উন্নত করার দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
মুমিন মুসলমানদের করণীয় ও বর্জনীয়:
বর্তমান সময়ে মুমিন মুসলমানদের জন্য কিছু করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় নিম্নরূপ:
করণীয়:
১. কুরআন অধ্যয়ন ও আমল : মাহে রমজান কুরআন তেলাওয়াত, অধ্যয়ন এবং আমলের জন্য সর্বোত্তম সময়। প্রতিদিন কুরআন তেলাওয়াত করা এবং এর শিক্ষাগুলো জীবনে বাস্তবায়ন করা উচিত।
২. সালাত ও তারাবিহ : রমজান মাসে তারাবিহ সালাত আদায় করা সুন্নত। নিয়মিত নামাজ আদায় করা এবং তারাবিহে অংশগ্রহণ করা উচিত।
৩. দান-খয়রাত : রমজান মাসে দান-খয়রাতের গুরুত্ব অপরিসীম। গরিব-দুঃখী, অসহায় মানুষের সাহায্য করা এবং সদকা দেওয়া উচিত।
৪. তাওবা ও ইস্তিগফার : এই মাসে তাওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। গুনাহ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা উচিত।
৫. সিয়ামের হক আদায় : রোজা শুধু খানাপিনা থেকে বিরত থাকা নয়, বরং সকল প্রকার গুনাহ থেকে নিজেকে বিরত রাখা এবং আত্মশুদ্ধির চেষ্টা করা।
বর্জনীয়:
১. গিবত ও অপবাদ : রমজান মাসে গিবত, অপবাদ এবং অন্যান্য গুনাহ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা উচিত।
২. অপচয় ও অপব্যয় : রমজান মাসে অপচয় ও অপব্যয় থেকে দূরে থাকা উচিত। ইফতার ও সাহরিতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার না খাওয়া।
৩. অশ্লীলতা ও অহংকার : এই মাসে অশ্লীল কথা, কাজ এবং অহংকার থেকে দূরে থাকা উচিত। বিনয়ী ও নম্র আচরণ করা উচিত।
৪. সময় নষ্ট করা : রমজান মাসে সময়ের সদ্ব্যবহার করা উচিত। অযথা সময় নষ্ট না করে ইবাদত, দোয়া ও কুরআন তেলাওয়াতে সময় দেওয়া উচিত।
৫. রিয়া ও অহংকার : ইবাদতের মধ্যে রিয়া (লোক দেখানো ইবাদত) এবং অহংকার থেকে দূরে থাকা উচিত। ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা উচিত।
মাহে রমজান মুমিন মুসলমানদের জন্য আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি মহান সুযোগ। এই মাসে বেশি বেশি ইবাদত, দোয়া, তাওবা এবং কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করা উচিত।
সর্বশেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০২:২২
পাঠকের মন্তব্য