পবিত্র রমজান মুসলিম উম্মাহর জন্য রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস।
আল্লাহ তাআলা বলেন: “রমজান মাস, যে মাসে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ…” (সুরা আল-বাকারা, ২:১৮৫)। এই মাসে ইবাদতের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বোত্তম সময়।
১. সিয়াম (রোজা) পালন কোরআনের নির্দেশ: “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এই মাস পাবে, সে যেন রোজা রাখে…” (সুরা আল-বাকারা, ২:১৮৫)।
সহি হাদিস: নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়” (বুখারি, ৩৮)।
করণীয়: সাহরি ও ইফতারের সময় মেনে চলুন। নিয়ত (ইচ্ছা) করুন:
২. তারাবিহর নামাজ সহি হাদিস: নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে রমজানে রাতের নামাজ (তারাবিহ) পড়ে, তার পূর্বের গুনাহ মাফ হয়ে যায়” (বুখারি, ৩৭)।
করণীয়: জামাতের সাথে তারাবিহ আদায় করুন কোরআন খতমের চেষ্টা করুন।
৩. কোরআন তিলাওয়াত কোরআনের মর্যাদা: “নিশ্চয়ই আমি একে (কোরআন) নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে” (সুরা আল-কদর, ৯৭:১)।
সহি হাদিস: নবীজি (সা.) রমজানে জিবরাইল (আ.)-এর সাথে কোরআন মুতালা করতেন (বুখারি, ৩৫৫৪)।
করণীয়: প্রতিদিন- এক পারা কোরআন তিলাওয়াত করুন। অর্থ ও তাফসির বোঝার চেষ্টা করুন।
৪. দান-সদকা ও জাকাত কোরআনের নির্দেশ: “যারা গোপনে ও প্রকাশ্যে নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে… তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার” (সুরা আল-বাকারা, ২:২৭৪)।
সহি হাদিস: নবীজি (সা.) বলেছেন,”রমজানে দান করলে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়” (বুখারি, ১৮৯৮)।
করণীয়: জাকাতুল ফিতর আদায় করুন (সুনান আবু দাউদ, ১৬০৯)। প্রয়োজনমতো গরিব-এতিমকে সাহায্য করুন।
৫. লাইলাতুল কদর তালাশ কোরআনের মর্যাদা: “লাইলাতুল কদর এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম” (সুরা আল-কদর, ৯৭:৩)।
সহি হাদিস: নবীজি (সা.) বলেছেন, “রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর খুঁজে নাও” (বুখারি, ২০২০)।
করণীয়: শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করুন বা নফল ইবাদত বাড়ান।
বেশি বেশি এ দোয়া পড়ুন: “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাফু আন্নি” (তিরমিজি, ৩৫১৩)।
৬. গুনাহ থেকে বিরত থাকা সহি হাদিস: নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও খারাপ কাজ ত্যাগ করে না, তার পানাহার ত্যাগে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই” (বুখারি, ১৯০৩)।
করণীয়: গিবত, মিথ্যা, অশ্লীলতা পরিহার করুন।ধৈর্য ও ক্ষমার গুণ অর্জন করুন।
৭. দোয়া ও ইস্তিগফার কোরআনের নির্দেশ: “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব” (সুরা গাফির, ৪০:৬০)।
সহি হাদিস: রোজাদারের ইফতারের সময়ের দোয়া কবুল হয় (ইবনে মাজাহ, ১৭৫২)।
করণীয়: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “মানুষ ততক্ষণ কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যতক্ষণ তারা দ্রুত ইফতার করবে।” (বুখারী, হাদিস নং ১৯৫৭)
রমজান আত্মসংযম ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষের মাস। আল্লাহ তাআলা বলেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে… যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার” (সুরা আল-বাকারা, ২:১৮৩)।
এই মাসকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে গড়ে তুলুন এবং সমাজে ইহসান ও ভ্রাতৃত্ববোধ ছড়িয়ে দিন।
সূত্র: সব কোরআনের আয়াত ও হাদিসের রেফারেন্স সহি সোর্স (বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি) থেকে নেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৪:০৮
পাঠকের মন্তব্য