বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় সবার জামিনের পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারাগারে থাকা বিডিআর সদস্যদের মুক্তির আলটিমেটাম দেয়া হয়েছে। বুধবার চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য এবং কারাগারে থাকা সদস্যদের পরিবার এই আলটিমেটাম দেন। এ সময় পিলখানা হত্যাকা-ের দিনটিকে সেনা হত্যা দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়ে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে বিডিআর সদস্যদের দাবিগুলোও অন্তর্ভুক্ত করারও কথা জানান চাকরিচ্যুত ও কারাগারে থাকা বিডিআর সদস্যদের স্বজনরা। এ দিকে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় নিরপরাধদের মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে যমুনায় পদযাত্রা শুরু করলে শাহবাগে পুলিশ বাধা দেয়। পরে সেখানেই অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করেন পরিবারের সদস্যরা।
এর আগে বুধবার ভোরের আলো ফোটার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের পুনর্বহাল এবং কারাগারে থাকা সদস্যদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করা হয় সেখানে। এই মানববন্ধনে সাবেক বিডিআর সদস্যদের পাশাপাশি কারাগারে থাকা পরিবারে লোকজন অংশ নেন। মানববন্ধনে সেøাগানে সেøাগানে প্রতিবাদ জানানো হয় বিগত সরকারের নানা সিদ্ধান্তের। বক্তব্যে ফুটে ওঠে গত ১৫ বছরের ক্ষোভ আর নির্যাতনের কত শত গল্প।
বিডিআর পরিবারের সদস্যরা বলেন, তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনার নীলনকশার অংশ হিসেবেই ২০০৯ সালে পরিক্ষিত সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। একইসঙ্গে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয় বিডিআর সদস্যদের। সমাবেশ থেকে বিডিআর সদস্যদের বিরুদ্ধে করা বিস্ফোরক মামলায় সবার জামিনের পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারাগারে থাকা সদস্যদের মুক্তির আলটিমেটাম দেয়া হয়। বেলা বাড়তেই দাবিগুলোর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন সমাবেশে অংশ নেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও। তারা বলেন, পিলখানা হত্যাকা-ের দিনটিকে সেনা হত্যা দিবস ঘোষণা করতে হবে। জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে বিডিআর সদস্যদের দাবিগুলোও অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তাদের। এ দিকে সমাবেশ শেষে শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল। ৬ দফা দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে গেলে শাহবাগে আটকে দেয় পুলিশ।
জানতে চাইলে রমনা জোনের এসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের পর যারা চাকরিচ্যুত হয়েছে তাদের পরিবারের লোকজন এ আন্দোলন করেন। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার তাদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে তাদের দাবি আদায়ের পক্ষে কথা বলেন।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বুধবার সকাল থেকেই নানা প্রান্ত থেকে মানুষ এসে জড়ো হন। এরপর বেলা সাড়ে ১২টার পর তারা শহীদ মিনার থেকে যমুনার উদ্দেশে পদযাত্রা শুরু করেন। শাহবাগ পর্যন্ত গেলে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। বাধা পেয়ে তারা বর্তমানে শাহবাগ থানা ও জাদুঘরের সামনে অবস্থান করে কর্মসূচি শেষ করে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে শুনতে চেয়েছিলাম আর যেন শুনানি পেছানো না হয়। ৫ আগস্টের পর অনেকবার শুনানি পেছানো হয়েছে। এর পাশাপাশি শহীদ মিনারে বিচারের দাবিসহ বেশ কয়েক দফা ঘোষণা করেছি। কিন্তু এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা কোনো সাড়া দেননি।
তিনি আরো বলেন, যদি ন্যায়বিচারের কোনো ইঙ্গিত না দেখি, আবার বৃহস্পতিবার শাহবাগ ব্লকেড করা হবে। রাতে আমরা শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করব এবং যদি আমরা ন্যায়বিচারের ইঙ্গিত না পাই, কোর্ট ও সরকারের কাছ থেকে অফিশিয়াল স্টেটমেন্ট না পাই, তাহলে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করব। সেটি হবে ‘শাহবাগ ব্লকেড’। এর আগে মাহিন সরকারের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল যমুনায় যান। প্রতিনিধিদলে ছিলেন নাজমুল, মাহবুব, শাকিল, কাজল, মঞ্জুর, খোরশেদ, রিমি, কানিজসহ নয়জন। এতে তিনজন ছাত্র প্রতিনিধি ও ছয়জন বিডিআর ও তাদের পরিবারের সদস্যরা ছিলেন।
আন্দোলনকারীরা জানান, বিডিআর হত্যাকা-ের মাধ্যমে বাহিনীকে ধ্বংস করে দিয়েছে। অনেকে হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন, অনেকে নিরপরাধ হয়ে জেলে আছেন। জেল থেকে তাঁদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। আন্দোলনে অংশ নেয়া মো. জামালুর রহমান বলেন, বিডিআরের ঘটনার সময় বান্দরবানের ট্রেনিং সেন্টারে ছিলাম। কিন্তু তারপরও আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে চাকরি থেকে বাদ দেয়া হয়। তিনি আরো বলেন, বিডিআর হত্যার তদন্তে যেই স্বাধীন তদন্ত কমিশন করা হয়েছে, তারা আগের রায় বহাল রেখে কী কাজ করবে। এতে আমাদের কোনো লাভ হবে না।
আন্দোলনের সমন্বয়ক রোকশাদ আলম বলেন, জেলে থাকা নিরীহ বিডিআর সদস্যদের নিঃশর্ত মুক্তি, চাকরিচ্যুত বিডিআর কর্মকর্তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেয়া ও অসহায় পরিবারকে পুনর্বাসন করতে হবে। এই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।
উল্লেখ্য, বিডিআর হত্যাকা-ের পুনঃতদন্তের দাবিতে ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্য ও ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে বুধবার শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। পরে দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করে শাহবাগ এলে আটকে দেয় পুলিশ। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যস্থতায় একটি প্রতিনিধিদল স্মারকলিপি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে যায়। বাকিরা শাহবাগে অবস্থান নেন। ফলে শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, আশপাশের সড়কেও যানবাহন চলছে ধীর গতিতে। বিকাল ৫টার সময় প্রতিনিধিদল ফিরে এলে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেয় এবং শাহবাগ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে অবস্থান নেয়।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, এ রিপোর্ট লেখার সময় রাত সোয়া ৯টা পর্যন্ত তারা শহীদ মিনারেই অবস্থান করছিলেন।
সর্বশেষ আপডেট: ৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:০২
পাঠকের মন্তব্য