স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননার মাধ্যমে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র এবং ইসকনের সাংগঠনিক সম্পাদক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার না হলে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের হুংকার দিয়েছেন সনাতন জাগরণ মঞ্চের নেতারা। তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অচল করারও হুমকি দেন। মামলার বাদী বিএনপি নেতা মো. ফিরোজ খানকে হিন্দুদের বিরুদ্ধে মামলা করতে কারা কারা ইন্ধন দিয়েছেন তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে বলেন মঞ্চের নেতারা।
শুক্রবার নগরীর চেরাগী মোড়ে পুলিশের অনুমতি ছাড়াই সড়ক বন্ধ করে সমাবেশ করা হয়। এ সময় পুরো এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ। ওই এলাকার বাসিন্দারা অনেকটা ঘরবন্দি হয়ে পড়ে। পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যস্ততম সড়কের বদলে লালদীঘি মাঠে সমাবেশ করার আহ্বান জানালেও তাতে সাড়া দেয়নি হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা। উল্টো গায়ের জোরে চেরাগী মোড়ে সড়ক বন্ধ করে দিয়ে সমাবেশ করেন তারা। এ সময় সেখানে নানা উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়া হয়। তবে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চরম ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন। নগর পুলিশের উপ-কমিশনার লিয়াকত আলী খান সাংবাদিকদের জানান, চেরাগী মোড়ে সমাবেশ করার ব্যাপারে প্রশাসনের অনুমতি ছিল না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে লালদীঘি ময়দানে সমাবেশ করার জন্য আহ্বান জানালেও আয়োজকরা এখানেই সমাবেশ করেন।
নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে স্বাধীনতা চত্বরে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা তার প্রভু রাষ্ট্র ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার উড়ানো জাতীয় পতাকার উপর সাম্প্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসকনের গেরুয়া রংয়ের পতাকা উড়ানোর মাধ্যমে জাতীয় পতাকার অবমাননা করার অভিযোগ উঠে সনাতন মঞ্চের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে কোতোয়ালী থানায় বুধবার রাতে একটি মামলা হয়।
মামলায় চিন্ময় ব্রহ্মচারীসহ ১৯জনকে আসামি করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিতভাবে দেশের সার্বভৌমত্বকে অবজ্ঞা প্রদর্শনের হীন উদ্দেশ্যে এবং জাতীয় অখন্ডতাকে অস্বীকার করার মানসে দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্বের প্রতি স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার প্রতি অসম্মান প্রদর্শনপূর্বক অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। এ অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হয় তাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বুধবার রাতে দুই যুবককে গ্রেফতারও করে পুলিশ। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা অবমাননার পর রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করার পরও জাতির কাছে ক্ষমা না চেয়ে কিংবা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করে উল্টো রাজপথে আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে সনাতন জাগরণ মঞ্চ। এর অংশ হিসেবে গতকাল কোনরকম পুলিশি অনুমতি ছাড়াই সমাবেশের নামে সড়ক বন্ধ করে সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের হুমকি ধমকি ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন মঞ্চের নেতারা। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা প্রত্যাহার না হলে সোমবার চট্টগ্রাম থেকে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি দেবেন বলে হুংকার দেন তারা।
সমাবেশে সনাতন জাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস মহারাজ বলেন, সামান্য বিক্ষোভ সমাবেশ নিয়ে প্রশাসন বাধা দিয়েছে, এ অবস্থায় যদি আপনারা ভয় পেয়ে যান তাহলে কী হবে। আমাদের সমাবেশ করতে দিতে হবে। আমাদের কারাগারে নেয়ার হুমকি দিচ্ছেন, মামলাও করেছেন সাধু ও সনাতনীদের বিরুদ্ধে। সাধুরা কিন্তু ভয় পায় না। চিন্ময় প্রভুকে কারাগারে থাকলে লাখো চিন্ময় প্রভু রাজপথে আন্দোলন করবে। ৮ দফা আদায় করব।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও চট্টগ্রাম অচল করার হুমকি দেন মঞ্চের অন্যতম সমন্বয়ক জুয়েল আইচ। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি গেট বন্ধ করে দিলে সব বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা শান্তিতে বসবাস করতে চাই। কেউ বাধ্য করবেন না ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ করতে।
সর্বশেষ আপডেট: ২ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:২১
পাঠকের মন্তব্য