ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিলনায়তনে সা¤প্রতিক ক‚টনৈতিক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৫জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। আদালত এক মাস সময় বেঁধে দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে তাকে ফিরিয়ে আনতে যা যা করা প্রয়োজন তা করবো। কারণ গ্রেফতারি পরোয়ানা গেছে পুলিশের কাছে। পুলিশ এটি পারবে না। কারণ তিনি দেশে নেই। তাই আমাদের যুক্ত হতে হবে।
যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে তারা কে কোন দেশে আছেন, সেটার কোনো নির্দিষ্ট তালিকা আছে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমার কাছে যে তালিকা আছে, সেটি মিডিয়া থেকে নেওয়া। যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, আমরা চেষ্টা করবো তাদের সবার অবস্থান চিহ্নিত করতে।
শেখ হাসিনা কোথায় আছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আনঅফিসিয়ালি যতটুকু জানি তিনি সম্ভবত দিল্লিতে আছেন।
ভারতের ভিসা দেওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভিসা দেওয়া, না দেওয়া একটা দেশের নিজস্ব বিষয়। এটা তাদের জিজ্ঞেস করা যায় না। আমরা যেটা করেছি, ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে বুঝিয়ে বলেছি। তারা এ মুহূর্তে জরুরি মেডিকেল ভিসা ছাড়া অন্য ভিসা দিচ্ছে না। নিরাপত্তার কারণে তাদের লোকবল কম। তাই তারা ভিসা দিচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, কমনওয়েলথ হবে সামোয়াতে। এটি একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা যাবেন না। তবে সেখানে মিনিস্ট্রিয়াল মিটিং আছে, সেগুলো করে আমি আসবো। ছয়দিনের প্রোগ্রাম। যাতায়াতে আরও চার দিন লাগবে।
সরকার পরিবর্তনের পর এবং অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের সঙ্গে কোন দেশের সম্পর্ক উষ্ণ হয়েছে এবং কোন দেশের সঙ্গে শীতল হয়েছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিগত সরকারের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছিল। এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। আমি মনে করি সেটা এখন কেটে গেছে। আমরা সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্কে রাখতে চাই।
এর আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, লেবাননে আমাদের ৭০ হাজার থেকে এক লাখ প্রবাসী আছেন। সঠিক সংখ্যাটা কেউ জানে না। কারণ, সবাই বৈধভাবে যান না। লেবাননে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে সেখানকার বাংলাদেশি প্রবাসীরা যারা ফেরত আসতে চান, তাদের দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এক হাজার ৮০০ জন রেজিস্ট্রেশন করেছেন ফেরত আসার জন্য। অনেকে আবার ফেরত আসতে চান না। বিপদ জেনেও অনেকে সেখানে থেকে যেতে চান।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ইতালিয়ান ভিসা নিয়ে কিছুটা সমস্যা চলছে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি বিষয়টি সমাধান করার। তাদের অভ্যন্তরীণ আইন-কানুনের কারণে এই সমস্যা হচ্ছে। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের জন্য তারা কিছু কঠিন আইন করছে। আমরা তারপরও চেষ্টা করছি যত দ্রæত সম্ভব ইতালি যেতে চাওয়াদের ক্লিয়ারেন্সের ব্যবস্থা করে দেওয়ার।
সর্বশেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:৩০
পাঠকের মন্তব্য