বেঞ্চের বাইরে ১২ বিচারপতি

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্সঃ

দুর্নীতিবাজ, দলকানা ও ফ্যাসিবাদের সমর্থক ১২ বিচারপতিকে দীর্ঘ ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাদের কোনো বেঞ্চে রাখা হচ্ছে না। এছাড়া দুর্নীতিবাজ ও দলবাজ ৩১ বিচারপতির ভাগ্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে ‘সুপিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’-এর হাতে।

বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ফের উত্তাল হয়ে ওঠে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গন। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আশপাশের বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষার্থীরা সকাল ১১টার পর দলে দলে প্রবেশ করতে থাকেন সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমের নেতৃত্বে মুহূর্তেই হাজারো ছাত্র-জনতায় ভরে ওঠে অ্যানেক্স ভবনের সম্মুখ স্থান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতির মধ্যে সমাবেশ করেন তারা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রথম হাইকোর্ট বিভাগে ফ্যাসিবাদী সরকারের নিয়োগ পাওয়া আওয়ামী সরকারের দোসর বিচারকদের অপসারণের দাবি তোলেন। তাদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে বেলা ২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই,’ ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ,’ ‘স্বৈরাচারের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান,’ ‘ঘেরাও ঘেরাও ঘেরাও হবে, হাইকোর্ট ঘেরাও হবে,’ ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ,’ ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা,’ ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম,’ ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’ বলে মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে থাকেন তারা। একই সঙ্গে চলে বক্তৃতা। ছাত্র-জনতার সঙ্গে একপর্যায়ে যুক্ত হন সুপ্রিম কোর্ট বার ও ঢাকা বারের তরুণ আইনজীবীরা।

মিছিল ও স্লোগানের আওয়াজ যতই আদালত অঙ্গনে বুলুন্দ হচ্ছিল ততই সুপ্রিম কোর্ট বারে ছড়াতে থাকে নানা গুঞ্জন। বেলা ১২টার দিকে খবর আসে, দুর্নীতিবাজ ও শেখ হাসিনার দোসর বিচারপতিদের মধ্য থেকে ১২ বিচারপতিকে ‘চায়ের দাওয়াত’ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। আগের দিন রাতে দেয়া বিশেষ এই ‘দাওয়াত’-এ প্রধান বিচারপতির কাছে একে একে ছুটে ্আসেন অন্তত ৬ বিচারপতি। তারা হলেনÑ বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, বিচারপতি মো. আক্তারুজ্জামান, বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিন, বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলন ও বিচারপতি মো: আমিনুল ইসলাম। এ সময় বিচারপতি নাইমা হায়দারের নেতৃত্বে বিচারপতিগণ দাওয়াত রক্ষায় আসেন বলেও জানা যায়। কিন্তু পরক্ষণেই জানা যায়, বিচারপতি নাইমা হায়দার এ মুহূর্তে বিদেশে অবস্থান করায় তিনি আসেননি।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, ১২ জন নয়Ñ প্রধান বিচারপতি অন্তত ১৯ বিচারপতিকে আগের রাতে ‘চায়ের দাওয়াত’ দিয়েছেন। এ তালিকায় বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর, বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকার, বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিন, বিচারপতি আকতারুজ্জামান, বিচারপতি আমিনুল ইসলাম, বিচারপতি মাসুদ হোসেন দোলন, বিচারপতি খিজির হায়াত, বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, বিচারপতি রূহুল কুদ্দুস, বিচারপতি খসরুজ্জামানের নাম ছিল। তাদের মধ্য থেকে ৬ বিচারপতি প্রধান বিচারপতির আমন্ত্রণে সাড়া দেন। আগতরা এক এক করে প্রধান বিচারপতির খাস কামরায় গিয়ে সাক্ষাৎ করেন বলে জানা যায়। বেলা দেড়টার দিকে খবর আসে ১২ বিচারপতিকে দীর্ঘ ছুটিতে পাঠানোর তথ্য।

এ সময় আন্দোলনরতরা দুর্নীতিবাজ ও শেখ হাসিনার দোসর বিচারপতিদের অপসারণ দাবি করেন। তাদের পদত্যাগের জন্য বিকেল ৩টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের কাছে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষের এমন বার্তা পাঠানো হয় যে, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করার কারণে বর্তমানে বিচারপতিদের অপসারণের এখতিয়ার সম্পন্ন ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ বিদ্যমান না থাকায় আইনগতভাবে তাদের অপসারণ করা যাচ্ছে না। বার্তা পেয়ে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার একটি প্রতিনিধিদল রেজিস্ট্রার জেনারেলের দফতরে যান। কিছুক্ষণ পর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমেদ ভূঞা আন্দোলনকারী এবং সাংবাদিকদের ‘ব্রিফ’ করেন। তিনি আলোচিত ১২ বিচারপতিকে কোনো বেঞ্চ দেয়া হবে নাÑ মর্মে সিদ্ধান্তের কথা জানান। রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, আগামী ২০ অক্টোবর আদালত খুলবে। তখন বিচারকদের অপসারণ সংক্রান্ত অনিষ্পন্ন মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে তোলা হবে। ইতোমধ্যে ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।’

আজিজ আহমেদ ভূঞা আরো বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি প্রতিনিধিদল আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তাদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় আমরা আলোচনা করেছি। পরবর্তী সময়ে এই বিষয় নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি। বিচারপতিদের পদত্যাগ কিংবা অপসারণের একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে এই সংক্রান্ত কোনো আইন নেই।

এছাড়া বিচারপতিদের পদত্যাগের যে দাবি, এ ক্ষেত্রে বিষয়টি হচ্ছে, বিচারক নিয়োগ দেন মহামান্য প্রেসিডেন্ট। আবার অপসারণও করেন প্রেসিডেন্ট। এখানে প্রধান বিচারপতির যা করণীয় তিনি তা করেছেন। ইতোমধ্যে ১২ জন বিচারককে কোনো বিচারিক বেঞ্চ না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মানে হচ্ছে, ২০ তারিখ তারা বিচারকাজ করতে পারবেন না। আমরা আশা করছি, ২০ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস বিষয়টি আদালতে উত্থাপন করবে। পর্যায়ক্রমে কী হয় সেটি জানা যাবে।

এদিকে রেজিস্ট্রার জেনারেলের এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় আশা করি রোববার আসবে। বিচারপতিদের সেদিনই পদত্যাগ করতে হবে। রায়ের জন্য রবিবার বিকেল পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করবো। ফ্যাসিবাদের দোসর বিচারকরা দেশের বিচারালয়ে দম্ভের সঙ্গে বক্তব্য দিয়েছেন। একশ্রেণির আইনজীবীও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। তারা ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালাতে উৎসাহ দিয়েছেন। তাদের হাতে দুই হাজার শহীদের রক্তের দাগ রয়েছে। তারা চায় খুনি হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে। তাদের অপসারণে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা নেই। তাই আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলব, ভিডিও দেখে এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করুন। পরে হাইকোর্টের ফ্যাসিস্ট ১২ বিচারপতিকে অপসারণের দাবিতে আগামী রোববার পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। রোববার তাদের অপসারণ করা না হলে আরো কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা। সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ উল্লেখ করেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাত করেছি। আমাদের আন্দোলনের প্রতিফলনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। আমরা এ দেশে আর কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার দেখতে চাই না। ফ্যাসিবাদীদের কোনো ঠাঁই দেয়া হবে না।

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট বিচারপতিদের পদত্যাগ করতে হবে। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট দোসরদের যদি কেউ পুনর্বাসন করতে চায়, তাদেরও প্রতিহত করা হবে। পুনর্বাসনের চেষ্টা যে-ই করবে, তাকে ছেড়ে দেয়া হবে না। শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি চলবে না। ছাত্র-জনতা হত্যার প্রতিটি ঘটনার বিচার করতে হবে। শেখ হাসিনাসহ যারা বিদেশে পালিয়েছেন, তাদের ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাশাপাশি দুর্নীতিবাজ ও দলকানা আওয়ামী বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবি করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের আইনজীবীরাও। তারা মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেন। ‘বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ, জাতীয় নাগরিক কমিটি-লিগ্যাল উইং’-এর ব্যানারে আইনজীবীরা এ কর্মসূচি পালন করেন।

এদিকে হাইকোর্টের দলবাজ ও ফ্যাসিস্ট বিচারপতিদের পদত্যাগ চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ আইনজীবীরা। সংগঠনের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল বলেন, গত মঙ্গলবার আমরা প্রধান বিচারপতির কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছি। আমাদের দাবি মানতে হবে। আমরা দলবাজ বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি, তাদের পদত্যাগ চেয়েছি। ছুটিতে পাঠানো কোনো সমাধান নয়। ছুটিতে গিয়েও তারা ‘বিচারপতি’ থাকবেন। এসব বিচারপতির পেছনে রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় করার কোনো যুক্তি নেই। আইনজীবীদের অন্যতম সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা উৎখাতের পর থেকেই আমরা দুর্নীতিবাজ ও দলদাস বিচারপতিদের অপসারণ দাবি করে আসছি। এরই মধ্যে আমরা অন্তত ৩০ বিচারপতির সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির ফিরিস্তি প্রকাশ করেছি। ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ সক্রিয় হলে এই ৩০ বিচারপতিও কাউন্সিলের মুখোমুখি হবেনÑ মর্মে আমাদের বিশ্বাস।

পুনর্বহাল হচ্ছে ষোড়শ সংশোধনী :

সংবিধানের ‘ষোড়শ সংশোধনী’ অবৈধ ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ অবৈধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে এ আদেশ দেন হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে তৎকালীন শেখ হাসিনার সরকার আপিল করলে আপিল বিভাগও হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। ফলে ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ ‘নন-ফাংশনাল’ হয়ে পড়ে। ওই বছর ২৪ ডিসেম্বর বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা এমপিদের হাতে এনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে দেয়া আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করে আ’লীগ সরকার। এতে ৭ বছর ধরে দেশে বিচারপতিদের অপসারণ করার মতো কোনো আইনি পদ্ধতিই বহাল নেই। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে গত ১৫ আগস্ট রিটকারী সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ আপিল বিভাগে আবেদন করেন। তিনি বলেন, অনেক দিন ধরে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে রয়েছে। এটির শুনানি হওয়া প্রয়োজন। পরে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগীয় বেঞ্চ শুনানি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২০ অক্টোবর শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়।

২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা এমপিদের হাতে এনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে দেয়া আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করে। আ’লীগ সরকার ৯০৮ পৃষ্ঠার এ রিভিউ আবেদনে ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে ৯৪টি যুক্তি তুলে ধরে আপিল বিভাগের রায় বাতিল চায়। ২০১৭ সালের ৩ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন। ওই বছর ৮ মে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের ১১ কার্যদিবস শুনানি হয়। এতে ‘অ্যামিকাস কিউরি’ হিসেবে আদালতে মতামত উপস্থাপন করেন দশ সিনিয়র আইনজীবী। তাদের মধ্যে একমাত্র ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মত দেন। অন্যদের মধ্যে অন্যতম সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, সিনিয়র অ্যাডভোকেট এম আই ফারুকী, আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ এফ এম হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, বিচারপতি টি এইচ খান, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, এ জে মোহাম্মদ আলী সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে মতামত দেন।

২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক এবং বিচারপতি আশরাফুল কামালের স্পেশাল বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ‘ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ’ মর্মে রায় দেন। পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনসভার কাছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। দেশের সংবিধানেও শুরুতে এই বিধান ছিল। তবে সেটি ইতিহাসের দুর্ঘটনা মাত্র। রায়ে বলা হয়, মানুষের ধারণা হলো, বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা এমপিদের হাতে থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন্ন হবে। সে ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা দুর্বল হয়ে যাবে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি তুলে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে বিচারকের অপসারণের ক্ষমতা এমপিদের হাতে পুনরায় ফিরিয়ে দেয়া হয়, যা ১৯৭২ সালের সংবিধানেও ছিল। সংবিধানে এই সংশোধনী হওয়ায় মৌল কাঠামোতে পরিবর্তন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করবে; এমন যুক্তিতে ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছর ৫ নভেম্বর রিট করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। বিচারক অপসারণের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে ন্যস্ত করেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সরকার। ১৯৭৮ সালে তিনি অধ্যাদেশ দিয়ে গঠন করেন ‘সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল’। তার সময়ই পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে এই বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়।

সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী আদালত অবৈধ ঘোষণার পর সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনলেও তাতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানে কোনো পরিবর্তন আসেনি। ২০১৪ সালে বিনা ভোটে ‘নির্বাচিত’ হয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারে বহাল থাকে। ওই বছর ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনে। এতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা চলে যায় জাতীয় সংসদের হাতে। ওই বছর ৫ নভেম্বর ষোড়শ সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে ৯ আইনজীবীর পক্ষে রিট করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।

সর্বশেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:২৩
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও