কোকোর টাকা ফেরত আনার প্রচারাণাটি ছিল একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ !

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা পালিয়ে বাঁচলেও প্রশাসনের সর্বত্র তার বসানো দলবাজ ব্যক্তিরাই এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অর্ন্তবর্তী সরকার স্বৈরাচারের দোসরদের অদল-বদল ঘটিয়ে যে পরিবর্তনের চেষ্টা করছে তা খুব একটা কাজে আসছে না। দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করে, ব্যাংক জালিয়াতি করে দেশের অর্থনীতিকে ফোঁকলা, ভঙ্গুর ও দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়া হয়েছে। হাসিনার আমলে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা অর্ন্তবর্তী সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক এজেন্ডা হিসেবে ঘোষিত হলেও দুর্নীতি দমন কমিশনের(দুদক) কণ্ঠে এখন উল্টো সুর শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন মিশেল ক্রেজার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠকে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক জানিয়েছে, সে ৭১টি দেশে এ বিষয়ে মিউচুয়াল লিগ্যাল এসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট(এমএলএআর) পাঠালেও এর মধ্যে ২৭টি দেশ থেকে জবাব পাওয়া গেলেও ফলাফল ইতিবাচক নয়। এমনকি জাতিসংঘের দুর্নীতি বিরোধী কনভেনশনে(আনকাফ) স্বাক্ষরকারী দেশগুলোও সাড়া দিচ্ছে না বলে দুদক অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তার দায়িত্ব শেষ করতে চাইছে। অথচ এই দুর্নীতি দমন কমিশন গত ১৮ বছর ধরে জিয়া পরিবার তথা তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা, তারেক রহমান, আরাফাত রহমান কোকো, ডা:জোবাইদা রহমান, তারেক রহমানের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবালমান্দ বানুর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তারা প্রায়শ নানা রকম গল্প ফেঁদে জিয়া পরিবারের দুর্নীতির বয়ান হিসেবে তা মিডিয়ায় প্রচার করতো। খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র অরাজনৈতিক ব্যক্তি আরাফাত রহমান কোকোর নামে দুর্নীতির মামলা দিয়ে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার নামে অনেক নাটক করতে দেখা গেছে দুদক কর্মকর্তাদের। কথিত কয়েক কোটি টাকা ফেরত আনতে তথ্য দাতাদের কোটি টাকা পুরষ্কার ঘোষণা, সংশ্লিষ্ট সিএ ফার্মকে তিনকোটি টাকা কমিশন দেয়াসহ কথিত দুর্নীতির নামে দুদকের কোটি কোটি টাকার বেআইনী লেনদেন তথা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার সুস্পষ্ট তৎপরতা দেখা গেছে।

ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে দেড় দশক ধরে দেশ থেকে শেখ হাসিনার পরিবার এবং তার দোসর অলিগার্করা প্রতি মাসে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, ইসলামি ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতিতে জড়িত কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের মালিক ও পরিচালকদের হাজার হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি নিয়ে দুদক ঠুটো জগন্নাথের ভ’মিকা পালন করলেও শুধুমাত্র জিয়া পরিবার ও বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে কোনো অভিযোগ নিয়ে মাতামাতি ও হয়রানিতে দুদককে ব্যাঘ্রের ভ’মিকায় দেখা গেছে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে বছরের পর বছর ধরে জেলে রাখার মূল কারিগর ছিল শেখ হাসিনা, দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা ও আইনজীবীরা। এ প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত ছিল এটর্নীজেনারেলসহ বিচারক নামধারী দলবাজরাও। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন না হলে কথিত দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া, তারেক জিয়াসহ জিয়া পরিবার ও বিএনপি নেতাদের জেল-জুলুম এখনো চলতো। হাসিনার স্বৈরশাসনে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা যখন অর্ন্তবর্তী সরকারের কাছে দেশের মানুষের অন্যতম প্রত্যাশা, দুদক তখন নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে। মিথ্যা দুর্নীতির মামলায় আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা অর্থ ফেরত আনার নাটক যে সব দুদক কর্মকর্তারা সাজিয়েছিল তারা এখন কোথায়? সেই গোলাম রহমান, দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলমরা কোন আইনে সিঙ্গাপুর থেকে আরাফাত রহমানের টাকা ফেরত এনেছিলেন? সেই আইনে এখন তারা কেন সামিট গ্রুপের টাকা, এস আলমের টাকা, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজিব ওয়াজেদ জয়, পুতুল, ববি, তাপস, শেখ সেলিমসহ আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি, নেতা-আমলাদের টাকা ফেরত আনতে পারবে না? এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, জিয়া পরিবারের নামে দুর্নাম রটানোর উদ্দেশ্যে কোকোর টাকা ফেরত আনার প্রচারাণাটি ছিল একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। অনেকে মনে করেন, মিথ্যা মামলঅ ীধয়ৈ দুদক আরাফাত রহমান কোকোকে হত্যা করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, কোথায় সেই ফেরত আনা টাকা? সে সব অপতৎপরতার সাথে জড়িতদের এখন জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি উঠছে।

রাষ্ট্র সংস্কারের গণদাবির মূল লক্ষ্য হচ্ছে, দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ, বৈষম্যহীন ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। বিগত সময়ে সংঘটিত প্রতিটা হত্যাকান্ড, গুম-খুন, অর্থ কেলেঙ্কারি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতির ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত বিচার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। বড় বড় অর্থ কেলেঙ্কারি সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দায়মুক্তি দিয়ে দুদক কর্মকর্তারা কার্যত অর্থ পাচারে সহযোগিতা করেছে। পাচার হওয়া লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার উপর দেশের প্রতিটি নাগরিকের অংশ ও অধিকার রয়েছে। এসব টাকা ফেরত আনতে সরকারের কাছে সর্বোচ্চ সদিচ্ছার প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ। আইনবেত্তাদের মতে, দুদক আইনে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার পূর্ণ নির্দেশ রয়েছে।সংশ্লিস্ট দেশগুলোর সহযোগিতা নিশ্চিত করতে পারলে অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। দুর্নীতি দমন কমিশনসহ প্রশাসনের সর্বত্র এখনো শেখ হাসিনার দোসর ও দলবাজ কর্মকর্তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এদেরকে বহাল রেখে রাষ্ট্র সংস্কার কিংবা পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ সফল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে প্রধান উপদেষ্টা ড.ইউনূসকে আরো ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সাথে দুদককে বিরোধীদল দমনের হাতিয়ারে পরিনত করে জিয়া পরিবারের উপর অমানবিক নিপীড়ন, জেল-জুলুম ও আরাফাত রহমানকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার জন্য দায়ী দুর্নীতিবাজ দুদক কর্মকর্তাদের ঝেটিয়ে বিদায় করতে হবে এবং আইনের আওতায় আনতে হবে। শেখ হাসিনার ক্লেপটোক্রেটিক মাফিয়াতন্ত্রের সাথে জড়িত দুদকসহ রাজনৈতিক-আমলাতান্ত্রিক নেক্সাসকে অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে নতুন কমিশন বা টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে।

সর্বশেষ আপডেট: ৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:০৩
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও