বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নানামুখী চাপ সত্তে¡ও বিজিবি হেলিকপ্টার ব্যবহার করেনি, গণগ্রেপ্তারেও অংশ নেয়নি বলে দাবি করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। তিনি বলেন, একটা বাহিনীর প্রধান হয়ে সরাসরি ঊর্ধ্বতনের আদেশ অমান্য করা বা ডিনাই করা দুষ্কর। তবে অনেক ক্ষেত্রে আমরা ডিনাই করেছি। আবারো বলছি, পরিস্থিতি পরিবর্তিত না হলে আমি এখানে (বিজিবি) থাকতে পারতাম কি না তার নিশ্চয়তা দিতে পারলাম না। বৃহস্পতিবার বিজিবি সদর দপ্তরের কনফারেন্স হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অনেকে বিজিবির গেটে মিষ্টি নিয়ে আসে। বিজিবির এপিসির উপরে অস্ত্র ছিল না। নরমালি কিন্তু এলএমপি বা মেশিনগান থাকে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনেক আহত ছিলেন। আহতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সেখান থেকে আমরা অনেককে আমাদের বিজিবি হাসপাতালে নিয়ে এসে চিকিৎসা দিয়েছি। তাদের মধ্যে এখনো আটজন চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের যাবতীয় খরচ বিজিবি দিচ্ছে। গণগ্রেপ্তারে অংশ নেয়নি বিজিবি।
বিজিবি ডিজি বলেন, জুলাই মাসের শেষের দিকে যখন গণগ্রেপ্তার কার্যক্রম শুরু হলো তখন নির্দেশনা ছিল গ্রেপ্তার কার্যক্রমে অংশ নিতে। কিন্তু বিজিবি একদিনের জন্যও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। আমি বলেছি, গ্রেপ্তার কার্যক্রমের জন্য বিজিবি প্রশিক্ষিত ও প্রস্তুত নয়।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, র্যাবের মতোই বিজিবিকেও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে বলা হয়েছিল। আন্দোলনের মধ্যে বিজিবির হেলিকপ্টার একদিনের জন্যও ব্যবহার করা হয়নি। সার্বিক পরিস্থিতির কারণে এসব বলার বা পরিষ্কার করা সুযোগ তখন হয়নি। আমরা তখন কীভাবে দায়িত্ব পালন করেছি, কী রকম প্রেশার ছিল তা আমাদের কমান্ডাররা জানেন।
বিজিবি ডিজি বলেন, এরপরও এক দুটি ঘটনা ঘটেছে। একজন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার অফিসার গুলির করছেন। ওই ঘটনায় বিজিবি থেকে তাকে অপসারণ করা হয়েছে। তাকে শুধু ওএসডি করা হয়নি, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক শাস্তির জন্য সুপারিশ করে লে. কর্নেল পদমর্যাদার ওই কর্মকর্তাকে বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বিজিবি মহাপরিচালক দাবি করে বলেন, অনেক জায়গায় বিজিবি মোতায়েনই করা হয়নি, কিন্তু বিজিবির কথা বলা হয়েছে। একজন রিকশাচালক বলছেন, তার ছেলে বিজিবির গুলিতে মারা গেছে। আমরা খোঁজ নিয়ে তাকে অনুদান দিয়েছি, জানতে চেয়েছি যে তিনি নিজে দেখেছেন কি না? তিনি বলেছেন, আমি তো দেখিনি। তিনি বলেন, কখনো যদি প্রমাণিত হয় যে, আন্দোলনে বিজিবির হাতে কিছু ঘটেছে বা কেউ মারা গেছে তাহলে তার সুবিচার নিশ্চিতে যা করা দরকার তা করা হবে। এটা শুধু আপনাদেরই বলছি না, অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের গঠিত বিভিন্ন তদন্ত কমিশনকেও আমরা একই কথা বলেছি।
জুলাই থেকে সারাদেশে কী পরিমাণ বিজিবি মোতায়েন ছিল? এখন কতো পরিমাণ মোতায়েন আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ৫ আগস্ট পর্যন্ত গড়ে ২ হাজার মোতায়েন ছিল। সবসময় আমরা চিন্তা করেছি যেখানে প্রয়োজন নেই সেখানে আমরা বিজিবি মোতায়েন করিনি। আন্দোলনের সময় শহীদ মিনারে সবচেয়ে বেশি জমায়েত হয়েছিল। নির্দেশনা সত্তে¡ও আমরা সেখানে যাইনি।
৫ আগস্টে বিজিবিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ঢাকার ১৪টি এন্ট্রি ( প্রবেশপথ) পয়েন্টে নিরাপত্তায় নিয়োজিত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। যাতে করে বাইরে থেকে ছাত্র-জনতা ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারে। কারণ সেদিন গণভবন ঘেরাও কর্মসূচি ছিল। আদেশ একটা জায়গা থেকে পাইনি, দেশের সর্বোচ্চ জায়গা, মন্ত্রী, সিনিয়র ব্যক্তি নাম বলছি না, তারা আমাদের প্রেশারের মধ্যে রেখে ১৪টি জায়গায় পাঠায়। টঙ্গী, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, পোস্তগোলা, আশুলিয়াসহ ১৪টা জায়গায় ৮০/৯০ জনকে মোতায়েন করা হয়।
এখন কেন বলছেন বিগত সরকারের সময় আপনাদের চাপ দিয়ে কাজ করানো হয়েছে? সে সময় কি আপনারা সরকারকে বলেছিলেন ছাত্র আন্দোলন দমন বা প্রতিহতে কাজ করতে পারবেন না? অথবা প্রতিবাদ করেছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, সরাসরি এ ধরনের কথা একটা বাহিনীর প্রধান হয়ে বলা দুষ্কর। সরাসরি বলতে গেলে বিভিন্ন পরিস্থিতি আপনারা জানেন। অনেক ক্ষেত্রে আমরা অর্ডার ডিনাই করেছি। যেমন, গণগ্রেপ্তারে আমরা যাইনি। আবার মব কন্ট্রোল করার প্রশিক্ষণ আমরা পাইনি। পুলিশ যে রায়ট কন্ট্রোলের গিয়ার বা সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে তা আমরা নিজ খরচে কিছু কিছু কিনে ব্যাটালিয়নে দিয়েছি। যাদের দিয়েছি তাদের মারণাস্ত্র দিইনি। আমরা হেলিকপ্টার ব্যবহার করিনি। সে সময় বার বার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনশৃংখলা সংক্রান্ত সমন্বয় সভা হতো। পুলিশ যে ভ‚মিকা পালন করছে সে রকম বিজিবি করতে পারছে না-এ রকম জবাব আমাকে দিতে হয়েছে।
সর্বশেষ আপডেট: ৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:২৭
পাঠকের মন্তব্য