জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৮১ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্যবিষয়ক উপ-কমিটি এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি। এরমধ্যে অধিকাংশেরই বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এছাড়া আহত হয়েছেন ৩১ হাজারের বেশি ছাত্র-জনতা। বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে বেসরকারি এই তালিকায় এসব নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে যাচাই-বাছাইয়ের পরই চূড়ান্ত তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। গতকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এ তথ্য জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, শহীদদের অন্তর্ভুক্ত করতেই তালিকাটি তৈরি করা হচ্ছে। তালিকায় নাম আসা ১ হাজার ৫৮১ জন শহীদ হয়েছেন বলেই প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়া হচ্ছে। তবে অন্য কোনো কারণে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের কেউ কেউ এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকতে পারেন। এ কারণে যাচাই-বাছাইয়ে নিশ্চিত হলেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে শহীদের তালিকায় সেই নাম প্রকাশ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্য উপ-কমিটির সদস্যসচিব তারেকুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৭০৮ জন শহীদের একটি তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। সেখানে অনেক শহীদের নাম আসেনি। বেসরকারিভাবে তৈরি করা এই তালিকা সব জেলা প্রশাসনে পাঠানো হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে এগুলো সরকারিভাবে যাচাইয়ের পরই শহীদের তালিকায় চূড়ান্তভাবে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শহীদদের তালিকা তৈরির কাজটি চলমান থাকবে জানিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। যাঁদের নাম এখনো তালিকায় আসেনি, তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য পরিবারগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক বা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে পারে। এতে কাজটি সহজ হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও যাচাই-বাছাই করে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
শহীদদের তালিকাটি দ্রুত সময়ে করার চেষ্টা চলছে জানিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেক মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। তাঁদের অনেকেই নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেক পরিবারকে এখনই অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসন করা প্রয়োজন। এ কারণে তালিকার কাজটি দ্রুত নির্ভুলভাবে করার চেষ্টা চলছে। তালিকায় যে ১ হাজার ৫৮১ জনের নাম এসেছে, সেটি এখনই প্রকাশ করা হবে না বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তালিকা প্রণয়নের কাজে সহায়তা করেছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি, রেড জুলাই ফাউন্ডেশনসহ অংশীজনেরা। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্য উপকমিটির আহ্বায়ক নাহিদা বুশরা, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ফারহাদ আলম ভূঁইয়া।
এদিকে গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৭০৮ জন শহীদ হয়েছেন বলে একটি খসড়া তালিকা প্রকাশ করে। মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এই তালিকা দেওয়া হয়েছে। তালিকা সংশোধন বা সংযোজন করার জন্য আগামী ৬ অক্টোবর পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তালিকায় প্রকাশিত নাম-ঠিকানা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য যাচাই, সংশোধন বা পূর্ণাঙ্গ করতে শহীদ পরিবারের সদস্য, ওয়ারিশ বা প্রতিনিধিকে অনুরোধ জানায় মন্ত্রণালয়।
সর্বশেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৫৭
পাঠকের মন্তব্য