স্বৈরাচার হাসিনা সরকার গত ১৫ বছরে দেশকে খাদের কিনারে নিয়ে গেছে। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান গেছে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে। বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানসহ সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ধ্বংস ও নৈরাজ্যের শেষ প্রান্তে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। ভারতে পলানোর আগে হাসিনা সরকার দেশীয় ব্যাংকব্যবস্থা ও বিদেশি সূত্রগুলো থেকে বিরাট অঙ্কের ঋণ করে দেশকে ঋণ-দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ভগ্নদশা অবস্থায় রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। দেশের প্রধান হয়ে নোবেল বিজয়ী এ খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব হিমালয়সম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। অবশ্য প্রাথমিক ধাপে এই চ্যালেঞ্জ শুধু উতরাননি। দেশকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। গত দেড় মাসে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বগুণ দেশে-বিদেশে বেশ সমাদৃত হচ্ছে।
কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এ সাফল্যকে এগিয়ে নেওয়া বা বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই। কারণ প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখনো আওয়ামী লীগ অনুগত আমলারা সক্রিয়। তাদের মতে, গত দেড় মাসে দেশকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর নেতৃত্বগুণ বা তাঁর প্রতি আস্থা বিশ্বকে নতুন করে বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশ সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। চলমান যুক্তরাষ্ট্র সফরে ইতোমধ্যে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের সহায়তার আশ্বাস মিলেছে। তবে তাঁর এই সাফল্য বাস্তবায়নে প্রতিটি সেক্টরে প্রয়োজন দক্ষ ব্যক্তিদের পদায়ন। যাদের নেতৃত্বে একটি স্বপ্নের বাংলাদেশ বা সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে এগোবো। দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, অল্প সময় দেড় মাস হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা, শিক্ষা ও জ্বালানি, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ কিছু কিছু স্থানে যোগ্যদের পদায়ন করা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সঠিক ব্যক্তি বা যোগ্যদের খুঁজে বের করা কঠিন হচ্ছে। তবে আশাবাদী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ভুলগুলো শুধরে সঠিক পথেই এগোবে বাংলাদেশ।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, গত ১৫ বছরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা যেভাবে দেশকে কলুষিত করেছেন, সে অবস্থা থেকে ফেরাতে কিছুটা সময় লাগবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নিয়েছেন খুবই অল্প সময় হলো। কিছু কিছু স্থানে বিশেষ করে অর্থ উপদেষ্টা, শিক্ষা ও জ্বালানি, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ কিছু পদায়ন ভালো হয়েছে। অল্প সময়ে পুরো আগের বলয় ভাঙা কঠিন বা শূন্যপদে সঠিক ব্যক্তিকে বসানো কঠিন। তবে আমি আশাবাদী কিছু ভুলত্রুটি শুধরে বর্তমান নেতৃত্বে সঠিক পথে এগোবে বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং বাংলাদেশ দেড় মাসের দায়িত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা খুবই ইতিবাচক। বোঝা যাচ্ছে যে, ড. ইউনূস সেখানে বেশ সমীহ পাচ্ছেন। তাঁকে সবাই আগে থেকে চেনেন, নতুন করে চেনানোর কিছু নেই। তবে এবার তিনি একটি বাড়তি পরিচয় নিয়ে সেখানে গেছেন। সেটি হলো বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এটা তাঁর নেতৃত্বের সাফল্যই বলা যায়। সেখানে বেশ বড় অঙ্কের ঋণ সহায়তার আশ্বাস পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুইভাবে আসবে এই সহায়তা। একটি নগদ সহায়তা, আরেকটি প্রকল্প সহায়তা। নগদ সহায়তাটি বাজেটে খরচ করা হবে। এটা তাৎক্ষণিকই পাওয়া যায়। আর প্রকল্প সহায়তা পেতে একটু সময় লাগে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বগুণে উচ্চপর্যায়ে একটা সাফল্য পাওয়া গেছে। এখন এই ঋণ পাওয়ার জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। আর্থিক খাত, জ্বালানি খাত, রাজস্ব খাত, ব্যাংকিং নীতিমালাসহ বেশ কিছু জরুরি সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য একটা ‘টাইমবাউন্ড’ কর্মসূচি তৈরি করে ওদের দিতে হবে। অর্থ বিভাগকে এখন এটি করতে হবে। এ জন্য যথার্থ এবং যোগ্য পদায়ন দরকার বলে উল্লেখ করেন ড. জাহিদ হোসেন।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ এক নিবন্ধে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাজের ধীরগতি নিয়ে বলেছেন, তাঁর কাজে ধীরগতি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে বটে। কিন্তু যে রকম জটিল পরিস্থিতিতে তাকে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে, তাতে ধীরগতি অস্বাভাবিক কিছু নয়। জনগণের আশা, তার সরকার আরও দৃঢ়তা ও ক্ষিপ্রতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে। তিনি বলেন, প্রধান উদ্দেশ্য দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং রাষ্ট্র কাঠামোয় সংস্কার সাধন। ইতোমধ্যে এ লক্ষ্যে ৬টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীতে রদবদল চলছে। হাসিনার সরকার রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানসহ সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ধ্বংস ও নৈরাজ্যের শেষ প্রান্তে গিয়ে পৌঁছেছিল।
সূত্র মতে, স্বৈরাচার হাসিনার শাসনামলে অনিয়ম-দুর্নীতিতে দেশে অর্থনৈতিক স্থবিরতা আর চরম ডলার সংকট দেখা দিয়েছিল। দায়িত্ব নেওয়ার দেড় মাসের মধ্যেই আশা-জাগানিয়া খবর এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফরেই অন্তত পৌনে সাত বিলিয়ন ডলারের অর্থ জোগাড়ের প্রাথমিক সাফল্য পাওয়া গেছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই বড় অঙ্কের ডলার পাওয়ার আশ্বাস এসেছে। ফলে শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা যোগ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এর বাইরেও চীনের প্রস্তাবে বড় বিনিয়োগের সোলার প্লান্ট স্থাপন, নেপালের পক্ষ থেকে পানিবিদ্যুৎ, জ্বালানি আমদানিসহ বিভিন্ন খাতে সহায়তারও আশ্বাস এসেছে বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে। অর্থনীতিবিদরা এটাকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের প্রাথমিক সাফল্য হিসেবে দেখছেন। তবে এ জন্য ঋণের শর্ত মেনে নানা খাতের সংস্কারগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এখন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ক্ষমতার পালাবদলে বিশেষ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব নিয়ে প্রথমবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিলেও স্বল্প সময়ে তিনি সেখানে এখন বিশ্বনেতাদের মনোযোগের কেন্দ্রে। আগে থেকেই খ্যাতি ও সমীহ পাওয়া ড. ইউনূস এবার যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছেন নতুন পরিচয়ে। এবার তিনি বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েবা, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং উইসহ বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রনায়ক ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
যার সঙ্গেই তার বৈঠক হচ্ছে, সেখানে অর্থনৈতিক সহায়তা ও বাংলাদেশের উন্নয়নে তারা পাশে থাকার আহ্বানকে এগিয়ে রাখছেন। এখনো জাতিসংঘ মিশন শেষ হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে প্রাথমিক সাফল্য পেয়েছেন বলে জোর আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের জন্য ৭০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংস্কারের যেকোনো উদ্যোগে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র সফরের অর্জনকে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রাথমিক সাফল্য হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, এটা নিঃসন্দেহে একটি প্রাথমিক সাফল্য। কারণ এখনো আমাদের কাক্সিক্ষত রিজার্ভ বাড়ছে না। কাজেই রিজার্ভ বাড়াতে হবে। তা না হলে মুদ্রা অবমূল্যায়িত হবে। এতে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। মূল্যস্ফীতি বাড়বে। আমদানি কমে যাবে। ফলে শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি বাধাগ্রস্ত হবে। এর প্রভাব পড়বে উৎপাদনে। এমন পরিস্থিতিতে বড় অঙ্কের ডলার যদি আমরা আনতে পারি, তা অবশ্যই অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারপ্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের জাতিসংঘে উপস্থিতির পর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর বিশিষ্টজনরা উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এটা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক। এর ফলে বাংলাদেশকে নিয়ে তারা নতুনভাবে চিন্তা করবেন। তারা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের খ্যাতি ও ইতিবাচক ইমেজকে মূল্যায়ন করেই সাড়া দিয়েছেন। এভাবে যদি উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তিনি যোগাযোগ বাড়ান, তবে এ থেকে দেশ লাভবান হবে বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা। তবে ড. ইউনূসের এ অর্জনকে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণী পদে যোগ্যদের পদায়ন অতীব জরুরি। যার এখনো কিছুটা ঘাটতি দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, ড. ইউনূস বৈঠক করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গার সঙ্গে। বৈঠকে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সংস্কারে খরচের জন্য সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে। এর মধ্যে দুই বিলিয়ন ডলার দেবে একেবারে নতুন ঋণ হিসেবে আর বাকি দেড় বিলিয়ন ডলার দেবে আগের প্রকল্পগুলো চালিয়ে নেওয়ার অংশ হিসেবে। মোটা দাগে সরকার এই অর্থ ডিজিটাইজেশন, তারল্য সহায়তা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা এবং পরিবহনে খরচ করতে পারবে।
ড. ইউনূস বৈঠক করেছেন আইএমএফের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েবার সঙ্গে। এমন একসময় তিনি আইএমএফপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করলেন, যখন ঋণ দেওয়ার জন্য সংস্থাটির একটি মিশন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এরই মধ্যে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে আইএমএফ। এর পরও সংস্থাটি ড. ইউনূসের নেতৃত্বের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আরো তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে। আইএমএফ মনে করে, একটি বিশেষ সময়ে ক্ষমতায় আসা নতুন সরকার অনেক খাতে সংস্কার করবে। এ জন্য তারা পাশে থাকতে চায়। আইএমএফপ্রধান ড. ইউনূসকে তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতেও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। সাধারণ এ অর্থ বাজেট সহায়তা হিসেবে সরকার খরচ করতে পারবে বলে অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ডলার সঙ্কট কাটাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেকোনো মূল্যে ডলারের মজুদ বাড়াতে চাচ্ছে। নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। বরং রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়িয়ে ডলারের মজুদ বাড়াতে চাচ্ছেন। এরই মধ্যে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা বেড়ে ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
জানা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্র সফরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েং উইসহ বেশ কয়েকজন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সবাই কমবেশি নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশে একটি বড় বিনিয়োগের সোলার উৎপাদন প্লান্ট বসাতে চান বলে প্রস্তাব দেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সোলার প্যানেল বানিয়ে সারা বিশ্বে রফতানির লক্ষ্য চীনের। এর ফলে এখানে বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রার যোগান বাড়বে। বহু লোকের কর্মসংস্থান হবে। চীন মনে করে, সোলার প্যানেলে বাংলাদেশ বিশ্বের বড় রফতানিকারক হতে পারবে।
ইউএসএইড’র প্রধান সামান্তা পাওয়ার ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। বিল ও মেলিন্ডা গেটসের সিইও মার্ক সুজম্যানও বৈঠক করেছেন। তিনিও পাশে থাকতে চান বলে জানিয়েছেন। এর বাইরে ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভের মঞ্চেও বক্তব্য দিয়েছেন ড. ইউনূস। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন নিজেও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রায় প্রতিটি ফোরামে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশকে সহায়তার আহ্বান জানান। যারাই তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন, তাঁদের প্রায় সবাই আন্তরিকভাবেই বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, ড. ইউনূসের প্রতি যে ইতিবাচক মনোভাব বিশ্বনেতারা দেখাচ্ছেন, তার ফলে সামনে এর সুফল পাবে দেশের অর্থনীতি। তবে এর জন্য সবাই নীতিনির্ধারণী শূন্যপদে সঠিক ব্যক্তিকে বসানোর দাবি জানিয়েছেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। আর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী সরকার। ড. ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার দেড় মাসে ইতোমধ্যে বিশ্ববাসীর কাছে নিজেকে আস্থার ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগেই বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সফর করেছেন। বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি ৩ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর আগে বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইসার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তিনি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের জন্য সহায়তার প্রতিশ্রুতি হিসেবে চলতি অর্থবছরের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের প্রায় ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এছাড়াও এর আগে আগামী ৩ বছরে বাংলাদেশকে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তা করার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)। একটা প্যাকেজের আওতায় রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন খাতের জন্য এই অর্থ দেবে তারা। এছাড়া আগামী মার্চের মধ্যে এডিবি ৯০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চতুর্থ কিস্তির ঋণের টাকা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পাবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার খাতে ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) ২২০ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি উন্নয়ন সহযোগিতা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইতোমধ্যে চুক্তিও সই হয়েছে। একই সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক ৭৫০ মিলিয়ন পলিসিভিত্তিক ঋণের প্রস্তাব করেছে। অপরদিকে ২৫০ মিলিয়ন বিনিয়োগ ঋণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন পলিসিভিত্তিক ঋণের প্রস্তাব করেছে। এর সাথে আরও ২০০ মিলিয়ন বিনিয়োগ ঋণপ্রস্তাব করা হয়েছে, যা ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে।
সর্বশেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০৪
পাঠকের মন্তব্য