অপরাধী হলে হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের আওতায় আনা উচিত : ড. ইউনূস

ছবি সংগ্রহ
ছবি সংগ্রহ
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্সঃ

ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপরাধ করে থাকলে তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নিউইয়র্ক টাইমস ক্লাইমেট ফরওয়ার্ড সামিট অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক টাইমস ক্লাইমেট ফরওয়ার্ড সামিটে তাকে প্রশ্ন করা হয়, হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করা উচিত কি না? এর জবাবে তিনি বলেন, কেন উচিত হবে না? তিনি যদি অপরাধ করে থাকেন, তাহলে তাকে প্রত্যর্পণ করে বিচারের আওতায় আনা উচিত।

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেওয়া ড. ইউনূসের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার কোনো পরিকল্পনা করছেন কি না। জবাবে তিনি বলেন, আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে যে আমি প্রতিদ্ব›িদ্বতা করব? ড. ইউনূস জানান, বাংলাদেশে কবে নির্বাচন হবে সেই সময়সীমা ঠিক করা হয় নি। যে কমিশনগুলো গঠন করা হয়েছে, সেগুলো আগামী মাসে তাদের সংস্কার সুপারিশ প্রদান করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তারপরে দেশে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। বিশ্ব যতদিন বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে লেগে থাকবে ততদিন পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সীমিত করার জন্য সম্পাদিত প্যারিস চুক্তি কাজ করবে না বলে মনে করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার লক্ষ্য সর্বাধিক মুনাফা করা, যার মাধ্যমে একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর হাতে সম্পদ কেন্দ্রীভ‚ত হচ্ছে এবং ব্যাপক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করেছি তা এই গ্রহের ধ্বংসের মূল চাবিকাঠি। তাঁর মতে, মানুষ একটি ‹আত্ম-ধ্বংসাত্মক সভ্যতা› তৈরি করেছে।

শান্তিতে নোবেলজয়ী এবং ক্ষুদ্রঋণের উদ্ভাবক ড. ইউনূস বলেন, চুক্তিতে যতই পরিবর্তন করা হোক না কেন, বিশ্বের অন্তর্নিহীত সিস্টেমগুলোকে নতুনভাবে ডিজাইন না করা পর্যন্ত কোনো পার্থক্য তৈরি হবে না।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ধনী দেশগুলোর করা জলবায়ু ক্ষতির বোঝা বহন করা উচিৎ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা আমাদের ওপর যেসব ধ্বংসের ভার চাপিয়েছেন, তার ভার কেন আমরা বহন করব? এ বিষয়ে ড. ইউনূস আরও বলেন, ‹আপনারা কারণ, আমরা ফলাফল।›

কম বর্জ্য উৎপাদন ও জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমানোর দায়িত্ব ধনী দেশগুলোরই বহন করা উচিত বলে যোগ করেন তিনি।

অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো সমালোচনায় বিচলিত নয়। তিনি বলেন, আসলে আমরা সমালোচনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। সরকার দেশে কারো কণ্ঠরোধ করবে না। সরকার দেশের মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বুধবার একটি হোটেলে শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংস্থার বেশ কয়েকজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বৈঠকে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান এবং শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের সময় সংঘটিত নৃশংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার ও জবাবদিহিতা নিয়ে আলোচনা হয়। মানবাধিকার কর্মকর্তারা স্বৈরশাসকের সময় সম্পাদিত প্রায় ৩ হাজার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাÐের অধিকতর তদন্তের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।

তারা নিরাপত্তা খাতের সংস্কার, সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রত্যাহার ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তি এবং শেখ হাসিনার স্বৈর-শাসনামলে বলপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের আটক কেন্দ্রের কার্যক্রমের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহŸান জানান।

রবার্ট এফ কেনেডি মানবাধিকারের সভাপতি কেরি কেনেডি নয়জন মানবাধিকার কর্মকর্তার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ডও বৈঠকে যোগ দেন। ক্যালামার্ড বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ‹একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠানো যে, এটি এক নতুন বাংলাদেশ। ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের জন্য তার সরকার পুলিশ সংস্কার সংক্রান্ত একটি কমিশনসহ বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার তার কর্মকাÐের যে কোনো সমালোচনাকে স্বাগত জানাবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। এসময় অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের বাকস্বাধীনতা বজায় রাখার অঙ্গীকার করেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এই সরকার কোনো সমালোচনায় বিচলিত নয়। আসলে আমরা সমালোচনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। সরকার দেশে কারো কণ্ঠরোধ করবে না। হংকং-ভিত্তিক সাবেক মানবাধিকার কর্মী মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সিনিয়র গবেষক জুলিয়া বেøকনারও বৈঠকে বক্তব্য দেন।

সর্বশেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৪১
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও