বিশ্বনেতাদের নজরে ড. ইউনূস

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্সঃ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অতিথির বেশে শান্তিতে নোবেলজয়ী বিশ্ব বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস, এ যেন নতুন কিছু নয়। জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে ভাষণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্ব পালন যেন তার জন্য নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। তবে এবার সেই যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রূপে দেখা মিলবে বিশ্ব বরেণ্য এ ব্যক্তির। এবার কোনো অতিথি বক্তা হিসেবে নয়, সরকারপ্রধান হিসেবে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে তুলে ধরবেন তিনি।

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ভিন্ন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সফর ঘিরে জাতিসংঘে নতুন দৃশ্যের অবতারণা হতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ফোরাম থেকে শুরু করে বিশ্বনেতাদের নজর থাকবে বিশ্ব বরেণ্য এ অর্থনীতিবিদের দিকেই। তার মুখ থেকে নতুন বাংলাদেশের কথা উঠবে বিশ্বমঞ্চে।

নিউইয়র্কের কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, ৩০ বছরের ইতিহাসে এবার প্রথম বাংলাদেশের কোনো সরকারপ্রধানের সঙ্গে অধিবেশনের ফাঁকে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ ছাড়া আগামীকাল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন ড. ইউনূস। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ইউনূস-বাইডেন বৈঠকের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে ড. ইউনূস গতকাল (২৩ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।

সাধারণত জাতিসংঘ অধিবেশনে নির্ধারিত বক্তৃতার দিন সকালে নিউইয়র্কে পৌঁছান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। তিনি সেদিন সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তৃতা দেন। এরপর বিকেলে অধিবেশনে আগত রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মানে সংবর্ধনার আয়োজন করেন।

সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলার ফাঁকে কোনো দেশের শীর্ষ নেতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দ্বিপক্ষীয় সাক্ষাৎ প্রায় বিরল। বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সবসময় সংবর্ধনায় দেখা হয়েছে বা কথা হয়েছে। কিন্তু গত তিন দশকে জাতিসংঘের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের কোনো শীর্ষ নেতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কোনো বৈঠক হয়নি, যা এবার ঘটতে যাচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও সম্মানের। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল গত ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা সফর করে গেছে। তার দুই সপ্তাহের মাথায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আজ বৈঠকে বসছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিশ্ববরেণ্য ড. ইউনূসের সঙ্গে। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে একটা সেলফি তুলে জাতির সামনে নিজেকে ‘ক্ষমতাধর’ বলে জাহির করার চেষ্টায় দেখা গেছে সাবেক স্বৈরশাসক হাসিনাকে। ড. ইউনূস সে তলনায় অনেক উঁচুমানের একজন সরকার প্রধান সেটা ইতোমধ্যে বিশ্ববাসী জেনে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের দপ্তরে সাধারণ অধিবেশন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ বিশ্বনেতারাও অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। এ রিপোর্ট প্রকাশিত হতে হতে ড. ইউনূসও যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখবেন। সূচি অনুযায়ী, ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস। তার ভাষণ ঘিরে সবার আগ্রহ। কারণ, বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া বিরল ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নজর ছিল বিশ্ববাসীর। আর বিক্ষোভের মুখে পতন হয় দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ধরে একনায়কতন্ত্র চালানো স্বৈরশাসক হাসিনার।

জানা যায়, জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বীরত্বগাঁথা তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা। একই সঙ্গে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্র মেরামতের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার কার্যক্রম বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করবেন তিনি।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস সারাবিশ্বেই জনপ্রিয় ও পরিচিত এক মুখ। তার ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ তত্ত্ব আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। এর আগে তিনি জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন নামি প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ভাষণ দিয়েছেন সিনেটসহ অনেক রাষ্ট্রের আইনসভায়। তবে এবারের জাতিসংঘ অধিবেশন সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ, তিনি হাজির হয়েছেন সরকারপ্রধান হিসেবে। এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান ও সংস্থার প্রধান নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

কর্মকর্তারা আরও জানান, মূল অধিবেশনের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সাইট ইভেন্টে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। বিভিন্ন সংস্থা প্রধান ও রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে তার দেখা হওয়ার কথা রয়েছে। এবার ড. ইউনূসের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর খুবই সংক্ষিপ্ত হওয়ায় অনেকের সঙ্গে তার বৈঠক সম্ভব হবে না। তবে এবার জাতিসংঘে সবার নজর যে তার দিকে থাকবে সেটা আগে থেকেই আঁচ করা যাচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক বিগত তিন দশকে হয়নি। এটা নিঃসন্দেহে সম্মান ও গৌরবের। তিনি আশা করেন, নতুন বাংলাদেশ ঘিরে ড. ইউনূসের চিন্তাভাবনা, রাষ্ট্র সংস্কারের ভাবনা সেখানে স্থান পাবে। এটা অবশ্যই দেশের গর্ব করার মতো একটা ঘটনা। বাইডেন-ইউনূসের এই বৈঠক শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বনেতারাও নজর রাখবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিন দিনের সংক্ষিপ্ত সফরে প্রফেসর ড. ইউনূস বিভিন্ন সংস্থা প্রধান, ব্যক্তি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুঁতেরেস ও জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক। এ ছাড়া, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনের সঙ্গে বৈঠক করবেন ড. ইউনূস। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গেও দেখা করার কথা রয়েছে।

ড. ইউনূসের সঙ্গে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি, বাহরাইনের ক্রাউন প্রিন্স হামাদ বিন ইসা আল খালিফা, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক শফ, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম খান, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক সামান্থা পাওয়ার, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ. হংবোসহ জাতিসংঘের আরও অনেক সংস্থার প্রধান ড. ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

সফরের সার্বিক বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেন, জাতিসংঘে নিঃসন্দেহে বিশ্বনেতাদের নজর কাড়বেন ড. ইউনূস। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি সহনশীল করতে উন্নয়ন সহযোগী ও দাতা সংস্থারা যেভাবে এগিয়ে আসছেন তা বিস্ময়কর। তারা বাংলাদেশের সংস্কার ও রাষ্ট্রীয় মেরামতে সাহায্যের আগ্রহ প্রকাশ করছেন। শফিউল আলম বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, আর্থিক খাত, প্রশাসনিক রিফর্ম বা সংস্কার করতে গেলে অনেক ক্ষেত্রে অর্থের প্রয়োজন হয়। এসব সংস্কারে বিশ্ব ব্যাংকসহ অন্যান্য সংস্থা আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে প্রস্তুত বলে তারা জানিয়েছে।

বাইডেন-ইউনূস বৈঠক

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠক হবে ড. ইউনূসের। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গেও বৈঠকে করবেন তিনি। নিউ ইয়র্কের এই বৈঠকে ভারত ও বাংলাদেশ বিভিন্ন সংস্কার কর্মকাণ্ডে সহায়তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা আছে। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি, মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে রোহিঙ্গা ঢল যেন আর না হয়, সে বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক লেন্স দিয়ে দেখে। ফলে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে দুই শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে আলোচনা হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয়। এ অঞ্চলে ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। আবার ঢাকার সঙ্গেও ওয়াশিংটন ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়। ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ভালো সম্পর্কের বিষয়ে তাদের আগ্রহ থাকবে বলে মনে করেন এই কূটনীতিক।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ভারত অস্বস্তিকর অবস্থায় রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও আলোচনা করেছে। ওই আলোচনার যতটুকু প্রকাশ পেয়েছে, তাতে প্রতীয়মান হয় যে বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত।

এই কূটনীতিক আরও বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলাপকালে প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি উত্থাপন করে ভারতকে নিবৃত্ত করার জন্য অনুরোধ করতে পারেন।

বাংলাদেশ কী চায়

মার্কিন শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিভিন্ন ধরনের সংস্কার ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টা আলোচনা করবেন।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন বলেন, এই বৈঠকের বার্তা হচ্ছে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় দুই দেশ। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝানোর জন্য এটি একটি সুযোগ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের প্রেক্ষাপট এবং সরকার-গৃহীত বিভিন্ন খাতে সংস্কার পদক্ষেপগুলো নিয়েও আলোচনা করতে পারবেন প্রধান উপদেষ্টা।

মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের একটি প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে ঢাকা সফর করেছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বিভিন্ন খাতে সংস্কার নিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে মার্কিন দলের বৈঠক হয়েছে। ভবিষ্যৎ সহযোগিতা আরও বেগবান করার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্ভাব্য এই বৈঠকটি ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। তিনি জানান, মিয়ানমারে চলমান সহিংসতার কারণে আবারও রোহিঙ্গা সমস্যা জটিল হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ নিয়েও কথা হতে পারে।

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটি বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রত্যাশার সৃষ্টি করেছে। তারা বিশ্বাস করেন, ড. ইউনূস ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের বিষয়টি উপস্থাপন করবেন। তারা রফতানিকারকদের জন্য স্থগিত জিএসপি বাণিজ্য সুবিধা পুনরুদ্ধারের বিষয়টিও দেখতে চান।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্যের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৃহত্তম রফতানি গন্তব্য। রফতাানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৯ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো তা ১০ বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করে। ২০২৪ বছরের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ কমে ৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর মার্কিন সরকার বাংলাদেশের জন্য জিএসপি বাণিজ্য সুবিধা স্থগিত করে। দীর্ঘ ১১ বছরে পোশাক খাতে নিরাপত্তা ও শ্রমের মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হলেও বাংলাদেশি পণ্য শুল্কমুক্ত বাজারের সুবিধা আর ফিরে পায়নি।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি তৈরি পোশাক পণ্যের একক বৃহত্তম রফতানি গন্তব্য। মার্কিন সরকার যদি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত করতে সহায়তা করতে চায়, তাহলে তাকে জিএসপি বাণিজ্য সুবিধার অধীনে পোশাক পণ্যে তাদের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে।

এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির আওতায় মার্কিন সরকার তার দেশ থেকে আমদানি করা তুলা দিয়ে তৈরি পোশাকের জন্য শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিতে পারে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ৮ আগস্ট। সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়ার জন্য তিনি দেশবাসী ও বৈশ্বিক নেতাদের কাছে সহযোগিতা চান। জাতিসংঘের বৈঠকে তিনি বিশ্ব নেতাদের কাছে তার দাবি তুলে ধরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করবেন। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক- উভয় বিষয়ে আলোচনার সুযোগ থাকবে বলে মন্তব্য করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, আমি মনে করি কোন প্রেক্ষাপটে তারা দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন এবং অর্থনীতির পাশাপাশি জনগণের উন্নতির জন্য তারা কী করতে চান তা নিয়ে আলোচনা করবেন। কীভাবে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর করা যায় এবং মার্কিন সরকারের কাছ থেকে আরও সাহায্য পাওয়া যায়, সে বিষয়ও তুলে ধরবেন বলে মনে হচ্ছে।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির রূপরেখা আলোচনায় থাকা উচিত বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক আবাসিক প্রতিনিধি ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, বর্তমানে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিপুল উদ্বৃত্ত নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে তারা বাংলাদেশ থেকে প্রস্তাব জানতে চাইবেন বলে করি।

ড. জাহিদ বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি বড়, তারা কীভাবে মার্কিন বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন তার পরিকল্পনা চাইবে। বাংলাদেশকে ব্যাখ্যা করতে হবে যে কীভাবে আমাদের এখানে বাণিজ্য বাড়াতে সহায়তা করবেন। বাংলাদেশকে সেসব পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত বাজারের সুযোগ নিতে হবে, যেগুলো মার্কিন সরকার অন্য দেশকেও অনুমতি দিচ্ছে।

এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, মার্কিন সরকার যদি বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং পুনর্গঠনে সহায়তা করতে চায়, তবে তাদেরও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য সহায়তা দেওয়া উচিত। আমেরিকান অঞ্চলের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে সাহায্য করতে পারে। বাংলাদেশের আসিয়ানে প্রবেশের বিষয়েও সাহায্য করতে পারে মার্কিন সরকার।

সর্বশেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩৪
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও