বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গত সাড়ে ১৭টি বছর বাংলাদেশের জনগণের জীবনে ছিল দুঃসহ কালো রাত। তারা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পল্টনসহ সারাদেশে লগিবৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে শ’ খানেক মানুষকে হত্যা করেছিল। ফ্যাসিজমের সুত্রপাত ওখানেই হয়েছিল। স্বৈরতন্ত্রের পদধ্বনি ওখান থেকেই এসেছিল।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবারের সাথে মতবিনিময় ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। টাঙ্গাইল জেলা জামায়াত শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
জামায়াত আমির বলেন, ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি ক্ষমতায় আসার পরে তারা রাষ্ট্রের গর্বিত প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনীর কোমড়ে আঘাত দিয়েছে। পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে ৫৪ জন চৌকস সামরিক অফিসারকে হত্যা করেছে। সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার আজও হয়নি। সীমান্তের অতন্ত্র প্রহরী বিডিআরকে ধ্বংস করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এদেশের ১৮ কোটি মানুষ ছিল মজলুম। প্রত্যেকটি মানুষ ছিল জুলুমের শিকার। কোথাও শান্তির লেশমাত্র ছিল না। কেউ কারো বিরুদ্ধে সামান্য কথাও বললে বা মনের দুঃখ প্রকাশ করলে ডিজিটাল আইনে তাদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।
জামায়াত আমির বলেন, আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে জামায়াতে ইসলামীর ওপর। আমাদের মত মজলুম সংগঠন আর কেউ নয়। আর কারো এতগুলো নেতাকে হত্যা করা হয়নি। আর কারো বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ভাঙা হয়নি। আর কারো বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়নি, লুটপাট করা হয়নি। আমাদের পর্দানশীল মা-বোনদের ইজ্জত নিয়েও টানাটানি করা হয়েছে। মজলুমের আহাজারি আল্লাহ শুনেছেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তারা ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের বিশাল সমাবেশে আঘাত দেয়া হয়েছে। অন্যায়ভাবে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বিএনপির ওপর, নির্যাতন করা হয়েছে গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের ওপরও। নির্যাতন করা হয়েছে সাধারণ মানুষের ওপর। হত্যা করা হয়েছে সাংবাদিক বন্ধুদের। কালো আইনে তাদের টেনেহিঁচড়ে নেয়া হয়েছে জেলে।
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে আমিরে জামায়াত বলেন, এমন রাজনীতি করলেন, বললেন উন্নয়নের রাজপথে দেশকে উঠিয়ে নিয়েছেন। বললেন বাংলাদেশ সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এমন মডেল বানালেন আর এমন রাজপথ তৈরি করলেন, গাড়ি চালিয়ে রাজপথ দিয়ে আপনি যেতে পারলেন না। এমন রাজনীতি করলেন, আপনাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হলো।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছিলেন। মেজরিটি-মাইনরিটি আখ্যা দিয়ে মুখোমুখি করে ফেলেছিলেন। ধন্যবাদ জানাই ছাত্র সমাজকে। কারণ আমরা যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলাম সাড়ে ১৫ বছর আগে; তার পরিসমাপ্তি টেনেছে ছাত্র-জনতা। সকল ধর্মের মানুষ এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। সকল ধর্মের মানুষ মারা গেছে, আহত হয়েছে। শহীদদেরকে আমরা কোনো দলের সম্পত্তি বানাতে চাই না। এই শহীদরা জাতীয় সম্পদ। এই শহীদরা আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র। এই শহীদরা আজীবন আমাদের জাতীয় বীর। আমরা তাদেরকে সেই মর্যাদায় দেখতে চাই।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ঐক্যের মাধ্যমে যে পরিবর্তন এসেছে যেকোনো মূল্যে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এই ঐক্য আমাদের ধরে রাখতে হবে। যে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন হয়েছিল, কোনো অবস্থায় এমন আরেকটা স্বৈরশাসন কখনো যেন বাংলাদেশে ফিরে না আসে তার ব্যাপারে আমাদের সকলকে সোচ্চার থাকতে হবে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে আমাদের মাথায় কেউ কাঁঠাল ভেঙে খেতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।
জেলা জামায়াতের আমির আহসান হাবীব মাসুদের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি হুমায়ুন কবির তালুকদারের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা ড. খলিলুর রহমান মাদানী, ঢাকা উত্তর অঞ্চলের টিম সদস্য আবুল হাশেম, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন। টাঙ্গাইল জেলা জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক আব্দুল হামিদ, নায়েবে আমির অধ্যাপক খন্দকার আব্দুর রাজ্জাক, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা শফিকুল ইসলাম খান, হোসনে মোবারক বাবুল।
আরো বক্তব্য রাখেন টাঙ্গাইল শহর ছাত্রশিবিরের সভাপিত মামুন আব্দুল্লাহ, জেলা সভাপতি আনোয়ার হোসেন মতিউল্লাহ, সমন্বয়ক মনিরুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ একরামুল হক সজিবের বাবা জিয়াউল হক ও শহীদ আনাফ আবির আশরাফুল্লাহর বোন সৈয়দা আক্তার প্রমুখ।
এর আগে সকালে ডা. শফিকুর রহমান জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে টাঙ্গাইল জেলা জামায়াতের রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
সর্বশেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:২৫
পাঠকের মন্তব্য