ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক কোন পথে? ড. ইউনূসের মেগাফোন কূটনীতিতে বেকায়দায় দিল্লী

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্স :

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রতিবেশী ভারতে পালিয়ে রয়েছেন। জুলাই ও আগস্টে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময় গণহত্যার জন্য তাকে বিচারের সম্মুখীন করার জন্য দেশে জোরালো দাবি উঠেছে।

এর মধ্যে, যখন হাসিনাকে ভারতের আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে, তখন বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউন‚সের একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকার দু’দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান শীতল ও অনিশ্চিত স¤পর্কের আভাস দিয়েছে, যা বেকায়দায় ফেলেছে ভারতকে।

শেখ হাসিনাকে ভারতপন্থী হিসেবে দেখা হয় এবং তার ১৫ বছরের শাসনামল ঘনিষ্ঠ কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উপভোগ করেছে। হাসিনার শাসনামল ভারতের নিরাপত্তার জন্যও লাভজনক ছিল, কারণ তিনি বাংলাদেশ থেকে ভারতের কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দমন-পিড়ন পরিচালনা করেছিলেন এবং কিছু সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করেছিলেন।

কিন্তু, ভারতে অনির্দিষ্টকালের জন্য হাসিনার অবস্থান দুই দেশের শক্তিশালী সম্পর্ক বজায় রাখার প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলেছে। এটি গত সপ্তাহেই স্পষ্ট হয়ে যায় যখন ভারতীয় সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. ইউন‚স দিল্লিতে থাকার সময় হাসিনাকে কোনও ধরনের রাজনৈতিক বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত রাখতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানান।

ড. ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ তাকে ফেরত না চাওয়া পর্যন্ত ভারত যদি তাকে রাখতেই চায়, তাহলে শর্ত হল তাকে চুপ থাকতে হবে।’

এই মন্তব্যের মাধ্যমে ড. ইউন‚স স্পষ্টতই গত ১৩ আগস্ট শেখ হাসিনার বিতর্কিত বক্তব্যের কথাই উল্লেখ করেছেন। ওই সময় শেখ হাসিনা ‘ন্যায়বিচার’ দাবি করেছিলেন এবং বলেছিলেন, সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কর্মকাÐ, হত্যা ও ভাঙচুরের সাথে জড়িতদের অবশ্যই তদন্ত, চিহ্নিত এবং শাস্তি দিতে হবে। হাসিনার এই বক্তব্য বাংলাদেশে ক্ষোভের সৃষ্টি করে এবং এরপর থেকে হাসিনা আর কোনো প্রকাশ্য বক্তব্য বা বিবৃতি দেননি।

ইউন‚স সাক্ষাৎকারে আরও বলেছিলেন যে, উভয় দেশকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির জন্য একসাথে কাজ করতে হবে, যা তিনি ‘নিম্ন পর্যায়ে’ বলে অভিহিত করেছিলেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্র প্রধানের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে, ভারতীয় কর্মকর্তারা ‘বিমর্ষ’ বলে জানা গেছে।

ঢাকায় ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত বীনা সিক্রি বলেছেন যে, বিষয়গুলিতে যথেষ্ট আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে এবং কিসের ভিত্তিতে (ইউন‚স) দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘নিম্ন’ হিসাবে অভিহিত করেছেন তা স্পষ্ট নয়। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিক্রির সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বিবিসিকে বলেছেন, ‘ভারতীয় নেতারা কি কোনো গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন না? ড. ইউন‚সকে যদি নির্দিষ্ট বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি অবশ্যই তার মতামত প্রকাশ করতে পারেন। সমালোচনা করতে চাইলে যেকোনো বিষয়েই সমালোচনা করতে পারেন।’

ড. ইউন‚স তার সাক্ষাতকারে বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলোর কাছে না পৌঁছানোর জন্যও দিল্লির সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘(ভারতের) আখ্যানটি হল সবাই ইসলামপন্থী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ইসলামপন্থী ও বাকি সবাই ইসলামপন্থী এবং এই দেশকে আফগানিস্তানে পরিণত করবে। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিরাপদ হাতে থাকবে। এই আখ্যানে ভারত বিমোহিত।’

ড. ইউন‚স যেভাবে গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিতর্কিত দ্বিপাক্ষিক বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করছেন, সেটিকে ‘মেগাফোন ক‚টনীতি’ হিসাবে অভিহিত করে সাবেক ভারতীয় ক‚টনীতিকরা বলেছেন, ইউন‚সের এই ‘মেগাফোন ক‚টনীতিতে’ তাদের বিস্মিত করেছে।

কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্র প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউন‚স টেলিফোনে কথা বললেও এখন পর্যন্ত উভয় দেশের মধ্যে কোনো মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়নি। এপ্রসঙ্গে ভারতীয় একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেছেন, ‘ভারত অপেক্ষা করছে এবং বাংলাদেশের চলমান ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখছে। ঢাকা থেকে আসা সরকারি মতামত ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রকাশিত মতামত বিবৃতিগুলোকে আমলে নিচ্ছে ভারত।’

এদিকে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নবনিযুক্ত প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, বিক্ষোভের সময় হত্যাকাÐের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে প্রত্যর্পণের জন্য তারা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করলেও হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করার সম্ভাবনা কম।

ঢাকায় দায়িত্বপালন করা সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রিভা গাঙ্গুলী দাস বলেছেন, ‘তিনি (হাসিনা) এখানে ভারতের অতিথি হিসেবে অবস্থান করছেন। আমরা যদি আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধুর প্রতি মৌলিক সৌজন্য না দেখাই, তাহলে ভবিষ্যতে কেন কেউ আমাদের বন্ধু হওয়াটা গুরুত্ব সহকারে নেবে?’ সূত্র: বিবিসি।

সর্বশেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৫
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও