প্রশাসনে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অসন্তোষের পর দেশের নবনিযুক্ত ৫৯ ডিসির মধ্যে আট ডিসির নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া চার জেলার ডিসি রদবদল করা হয়েছে। ১৬ বছর বঞ্চিত থাকা প্রশাসনে কর্মকর্তাদের ডিসি পদে নিয়োগ দেয়া হয়নি বরং স্বৈরাচার সরকারের উপকারভোগী ছিল তারাই ডিসি হয়েছেন বলে দাবি করেছে বঞ্চিত কর্মকর্তারা। এদিকে ডিসি নিয়োগ নিয়ে প্রশাসনে চলছে অসন্তোষ-হট্টগোল। পরে তদন্ত কমিটি গঠন গঠন করেছে সরকার।
বুধবার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, শরীয়তপুর, দিনাজপুর ও রাজবাড়ী জেলা ডিসির নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উপসচিব সুফিয়া আক্তার রুমী, জয়পুরহাটে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি ২-এর সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) মো. সাইদুজ্জামান, কুষ্টিয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ফারহানা ইসলাম, রাজশাহীতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মাহবুবুর রহমান, সিরাজগঞ্জে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মনির হোসেন হাওলাদার, শরীয়তপুরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ সচিব আব্দুল আজিজ, দিনাজপুরে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোবাশশেরুল ইসলাম, রাজবাড়ীতে আরপিএটিসির উপ-পরিচালক মনোয়ারা বেগমকে ডিসি পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এছাড়া টাঙ্গাইলের ডিসিকে পঞ্চগড়, নীলফামারীর ডিসিকে টাঙ্গাইল, নাটোরে ডিসিকে লক্ষ্মীপুর এবং পঞ্চগড়ের ডিসিকে নীলফামারীতে বদলি করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের ডিসি সাবেত আলী পঞ্চগড়ে, নীলফামারীর ডিসি শরিফা হক টাঙ্গাইলে, নাটোরের ডিসি রাজীব কুমার সরকারকে লক্ষ্মীপুরে এবং পঞ্চগড়ের ডিসি নায়িরুজ্জামানকে নীলফামারীতে বদলি করা হয়। সিনিয়র সচিব বলেন, একটি বাছাই কমিটির মাধ্যমে ফিটলিস্ট তৈরি করা হয়। সেই কমিটি আজকে বসেছিল। পর্যালোচনা করে ইমিডিয়েট যেটা হয়েছে, ইতোমধ্যে আটজনের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। ৫৯ জেলার মধ্যে ১০ সেপ্টেম্বর ৩৪ জেলায় এবং ৯ সেপ্টেম্বর ২৫ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়। এই দুই দফায় ৫৯ জেলায় নিয়োগ পাওয়া নতুন ডিসিদের অনেকের বিরুদ্ধে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্টতা এবং অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বঞ্চিত প্রশাসনে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এই অসন্তোষ নিয়ে বঞ্চিতরা গত ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েল দুইজন যুগ্মসচিবকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এক পর্যায়ে হাতাহাতি ও হট্টগোল হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরে ডিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিলেরও দাবি জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব তাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অসন্তোষ থেকে সৃষ্ট হট্টগোল তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, গত মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদের নেতৃতে এক সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত কমিটি আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিবেন। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ৮ জন জেলা প্রশাসকর নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া, ৪ জন জেলা প্রশাসকের জেলা রদবদল করা হয়েছে। নিয়োগ ও বদলী চলমান প্রক্রিয়া। বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমানের ভিত্তিতে পদায়ন ও বদলী চলমান থাকবে।
এদিকে সচিবালয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হতে ইচ্ছুকদের বিশৃঙ্খলা শোভন হয়নি বলে মনে করেন ডিসি নিয়োগ নিয়ে ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের হট্টগোল তদন্তে গঠিত কমিটির একমাত্র সদস্য, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ। সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এম এ আকমল হোসেন আজাদ বলেন, সব ডেপুটি সেক্রেটারি ডিসি হয় কি না! কম করে হলেও ১ হাজার ডেপুটি সেক্রেটারি থেকে মাত্র ৬৪ জন ডিসি হন। বর্তমান সরকার পাঁচজন বাদে ৫৯ জনকে পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। রেকর্ড আছে একজন ডিসিকে দ্বিতীয় দিনেই প্রত্যাহার করা হয়েছে। যাওয়ার আগে যদি প্রি কন্সেন্ট বলেন, এদের সবাই স্বৈরাচার সরকারের উপকারভোগী ছিল। কয়েকজন সচিবের নেতৃত্বে হাই পাওয়ার কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা যাচাই বাছাই করে দেখেছে, টপ স্কোরার, বেস্টদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এখন বিতর্ক হয়েছে এরা খারাপ, এরা ভালো। এরই মধ্যে জনপ্রশাসন সচিব কয়েকজনকে বাতিল করেছেন।
সচিবালয়ে ডিসি হতে ইচ্ছুকদের বিশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন নিউজ দেখে সাধারণভাবে মনে করি এটা শোভন হয়নি। কারা করেছে, যারা ডেপুটি সেক্রেটারি, সিনিয়র অফিসার, ডিসি হতে ইচ্ছুক, তালিকায় তাদের নাম ছিল, কিন্তু তারা হয়নি। তালিকায় নাম থাকলেই যদি তারা মনে করেন যে তারা ডিসি হয়েছেন, এটা ঠিক নয়। আমাদের বাছাই করে ৬০ জনের তালিকা দিতে বলেছে। যারা ডিসি হন নাই, তারা-তো পদাবনত হননি, ইজ্জতহানি হয় নাই। তারা কেন হয় নাই, আমরা কিন্তু সেটা প্রকাশ করিনি। যদি প্রকাশ করার কোনো আইনগত সুযোগ থাকে, যদিও সেই সুযোগ নাই, তাহলে তারা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হবেন। অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট অনুযায়ী আমরা এটা প্রকাশ করতে পারি না। তিনি সেই পদের জন্য যোগ্য হতে পারেন নাই, অযোগ্য শব্দটা আমরা ব্যবহার করি না। তিনি আরও বলেন, একটা জেলার ডিসি মানে একটি মিনি বাংলাদেশের তিনি নেতা। বর্তমান সময়ে ১২০টা কমিটির সভাপতি তিনি। ডিসির মাধ্যমেই সব কিছু চ্যানেলাইজ হয়ে যায়। সুতরাং ডিসির অভিজ্ঞতা, বয়স, স্বাস্থ্য অনেক কিছু বিবেচনা করতে হয়। আমি কিন্তু তাদের বিভাগীয় মামলা করার অথরিটি না। সাক্ষ্য-প্রমাণে আমি কী পেলাম সেটা বলতে পারি। কারা দোষ করেছে কারা করেনি। ডিসি নিয়োগকে কেন্দ্র করে সচিবালয়ে বিশৃঙ্খলা তদন্তে এক সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির একমাত্র সদস্য এম এ আকমল হোসেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বঞ্চিত এক কর্মকর্তা বলেন,বঞ্চিতরা বাদ দিয়ে স্বৈরাচার সরকারের উপকারভোগীদের জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। উপদেষ্টার কাযালয়ে কয়েকজন কর্মকর্তা এ গুলো কাজের সাথে জড়িত রয়েছে।
সর্বশেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৭
পাঠকের মন্তব্য