মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয় নিয়োগে দূর্নীতি,কোটি টাকার বাণিজ্য তোলপাড়

ছবি সংগ্রহঃ
ছবি সংগ্রহঃ
মু. ইমাদ উদ দীন :

একটি নিয়োগ পরীক্ষার রেজাল্ট শিট। নয় ছয় নিয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় সরব। জেলা জুড়ে তোলপাড়। এটা পুকুর চুরি নয়,অনেকটা সাগর চুরি। এমনটি মন্তব্য সুশিল সমাজ ও ক্ষতিগ্রস্থদের।

অভিযোগ উঠেছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ৭টি ক্যাটাগরিতে নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম,দূর্নীতি ও সিন্ডিকেট করে কয়েক কোটি টাকা বাণিজ্য করেছে একটি চক্র। সাম্প্রতিক সময়ে এমন ঘটনা স্যোশাল মিডিয়ায় চাউর হলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জেলাবাসীর। নিয়োগবঞ্চিত ও সচেতনমহল নিয়োগকৃতদের চাকুরী বাতিলের জোর দাবি জানাচ্ছেন। ওই নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত থাকার গুরতরও অভিযোগ উঠেছে নিয়োগ কমিটির সদস্য,পরীক্ষক ছাড়াও ২ জন এমপি ও ১জন মন্ত্রীসহ সিভিল সার্জন অফিসের ৪ জন কর্মচারী ও ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি রেজাল্ট শিটে দেখা যায় পরিসংখ্যানবিদ,স্টোর কিপার,গাড়ি চালক,ক্লোড চেইন টেকনিশিয়ান,ল্যাবরেটরী এটেনডেন্ট ও অফিস সহকারি কাম মুদ্রাক্ষরিক এই ৬টি পদে ১২ জন নিয়োগ পেয়েছেন। এই ১২ জনই সনাতন ধর্মাবলম্বী। এর কারণ অনুসন্ধানে জানা যায় সিভিল সার্জন অফিসের যারা নিয়োগ দূর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন তারা ৫ জনই সনাতন ধর্মাবলম্বী। ওই সময়ের স্রোত ও আর্থিক দূর্নীতির বিষয়টি ধামাচাপ সহজ হবে বলে ওদেরকে নিয়োগ পাইয়ে দেন। ফলাফলের দিক থেকে ১ম হয়ে কমলগঞ্জের রুবেল আহমেদ নিয়োগ বঞ্চিত হলেও ৩য় হওয়ার পরও শুধু টাকা ও সনাতন ধর্মের লোক বলে গাড়ি চালক হিসেবে নিয়োগ পান শুভচন্দ্র পাল। এছাড়া স্বাস্থ্য সহকারী পদে ৭১ টি পদের মধ্যে (৯টি স্থগিত/বাতিল) নিয়োগ পেয়েছেন ৫৫ জন সনাতন ধর্মাবলম্বী। ৭৪ টি পদের মধ্যে কেবল ৬৭টি জনই সনাতন ধর্মাবলম্বী হিসেবে কুট কৌশলের আশ্রয়ে অধিক গুরুত্বে নিয়োগ পান। আর ৪টি কোটায় নিয়োগ পান ২০ জন। অভিযোগ রয়েছে ভুয়া তথ্য দিয়েও অনেকেই টাকার জোরে নিয়োগ পান। জানা যায় ৭টি ক্যাটাগরিতে ২০১৮ ও ২০২৩ সালে দু’টি পৃথক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এতে ৯৫টি পদের জন্য ২০ হাজার ৮ শ ৬৯ জন আবেদন করেন। এরমধ্যে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন ৮ হাজার ১৫৪ জন। উত্তীর্ণ হন ৫৯৭ জন। মৌখিক পরীক্ষা শেষে চলতি বছরের ১৬ জুলাই ৯৩ জনের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয় (আইনগত জটিলতায় স্বাস্থ্য সহকারি ৩ টি পদ স্থগিত থাকে)।

নিয়োগ প্রক্রিয়া,পরীক্ষাসহ সকল আনুষ্ঠানিকতা ঠিকটাক দেখালেও যারা চাহিদা মতো বড় অংকের টাকার যোগান দিয়েছেন কেবল তারাই নয় ছয়ের মাধ্যমে যোগ্য বলে নিয়োগ পান। এমন অভিযোগ চাকুরী বঞ্চিতদের। ভালো পরীক্ষা দেওয়ার পরও অকৃতকার্য হওয়ায় প্রার্থী ও তাদের স্বজনদের সন্দেহ হয়। তখনই নিয়োগে অনিয়ম দূর্নীতি ও অস্বচ্চতা নিয়ে শুরুতেই অভিযোগ তুলেন। চাকুরী বঞ্চিতরা বলছেন যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদেরকে ওই প্রশ্নে আবারও পরীক্ষা নিলে নির্ঘাত অকৃতকার্য হবেন। অভিযোগ উঠেছে সরাসরি এই দূর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারী অসিত চক্রবর্তী,হেড এ্যাসিটেন্ড কাম ক্যাশিয়ার রঞ্জনা দেবী,পরিসংখ্যানবিদ অহিজিৎ দাস রিংকু, ষ্টোর কিপার অলকচন্দ্র পাল ও ২৫০ শয্যা সদর জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সিতাংশ আচার্য্যসহ অন্যরা। এরা দীর্ঘ দিন থেকে একই অফিসে কর্মস্থল হওয়ায় দাপটের সাথে দূর্নীতি,ঘুষ ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ সকল অপকর্মের সাথে জড়িত রয়েছেন। তাদের দাপটের কারণে সিভিল সার্জন অফিসের কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাননা। ওই ঘটনার নেপথ্যে আর্থিক বাণিজ্যে জড়িত ছিলেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের সাবেক এমপি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল,মৌলভীবাজার-৩ (সদর ও রাজনগর) সাবেক এমপি ও অলিলা গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান,মৌলভীবাজার-৪ (কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল) সাবেক এমপি ও কৃষি মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড.আব্দুস শহীদ,বিএম এর মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি ডা: সাব্বির আহমদ খান। ওই নিয়োগ কমিটিতে আহবায়ক ছিলেন বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) সিলেট,ডা: মো: আনিসুর রহমান, সদস্য ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের (স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ) উপ-সচিব মনিরা পারভীন,পিএসসির উপ-পরিচালক মো: জাহাঙ্গীর আলম,মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: আব্দুস সালাম,সদস্য সচিব ছিলেন জেলা সিভিল সার্জন ডা: চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ। অভিযোগ উঠেছে ওই নিয়োগ বাণিজ্যের যাবতীয় কলকাঠি নেড়েছেন সিভিল সার্জন অফিসের ৪ জন,সদর জেনারেল ২৫০ শয্যা হাসপাতালের-১ জন,বিএমএর ১জন ও নিয়োগ বোর্ডের ৩ জন। আর তাদেরকে প্রশ্রয় দিয়ে প্রভাবিত করেন স্থানীয় ২জন এমপি,১জন মন্ত্রী ও বিএমএর নেতারা। এ ক্ষেত্রে তারা দালালের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেন। তারা নিয়োগ কমিটিসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সদস্যদের ম্যানেজ করে চাকুরী দেবার শর্তে অন্তত ৫০-৬০ জন প্রার্থীর কাছ থেকে ৫-৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

নিয়োগের পরও আরেক দফা পোস্টিং বাণিজ্য করেন সিভিল সার্জন অফিসের সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া ২০২৩ সালেও আউট সোর্সিং নিয়োগেও অনুরুপ দূর্নীতি হয়েছিলো বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। ওই নিয়োগেও জড়িত ছিলেন সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তা,কর্মচারী ও বিএমএর নেতারা।

তবে ওই সকল পদে চাকুরী প্রাপ্তরা ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ। এ বিষয়ে নিয়োগ কমিটির সদস্য উপ-সচিব (স্বাস্থ্য-৬ শাখা) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ,স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় মনিরা পারভীন ও সদস্য সচিব মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন ডা. জালাল উদ্দিন মুর্শেদ মুঠোফোনে মানবজমিনকে জানান নিয়োগ পরীক্ষা কোনো দূর্নীতি হয়নি। এবিষয়ে সরকারের সকল নিয়ম কানুন মেনেই নিযোগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

নিউজ সুত্র: মানবজমিন

সর্বশেষ আপডেট: ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:১০
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও