গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হবে গণঅভ্যুত্থান জাদুঘরে তুলে ধরা হবে ১৬ বছরের নির্যাতনের চিত্র : তথ্য উপদেষ্টা

ছবি সংগ্রহঃ
ছবি সংগ্রহঃ
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্সঃ

দেশের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর-এ রূপান্তর করে তা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ জাদুঘরে গত ১৬ বছরের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গণঅভ্যুত্থানের ৩৬ দিনের ঘটনা, শহিদদের তালিকা, স্মৃতি এসব কিছুর একটি সামগ্রিক উপস্থাপনা থাকবে। পাশাপাশি কিছু ডিজিটাল উপস্থাপনা থাকবে। এক্ষেত্রে স্থাপত্যশিল্পী, আর্কিটেক্ট ও বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে আজ রোববারের মধ্যে একটি কমিটি গঠন করে কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

শনিবার গণভবন পরিদর্শন শেষে তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন। এ সময় শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। গতকাল বেলা ১১টার দিকে তিন উপদেষ্টা গণভবন পরিদর্শনে যান। প্রায় এক ঘণ্টা পরিদর্শন শেষে গণভবনের গেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তারা।

তিনি বলেন, অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দ্রুততম সময়ে গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’-এ রূপান্তর করা হবে। সেখানে তুলে ধরা হবে গত ১৬ বছরের গুম, খুন, নির্যাতনের সামগ্রিক চিত্র। অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা ৫ আগস্ট নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। জনগণের বিজয়কে ধারণ করে রাখার উদ্দেশ্যেই গণভবনের বর্তমান ভগ্নাবশেষ অক্ষত রেখেই জাদুঘরে রূপান্তর করা হবে, যা জনগণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচারী এবং খুনি রাষ্ট্রনায়কের কী পরিণতি হয়, পৃথিবীর বুকে তার একটা নিদর্শন রাখার জন্য এই ভবনকে জাদুঘর করা হচ্ছে। আর জনগণই যে রাষ্ট্রক্ষমতার আসল মালিক, সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে গণভবনকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘরে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য একটি কমিটি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এ কাজ সম্পন্ন করা হবে। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও যারা জাদুঘর বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘর করার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাদের পরামর্শ নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে আমাদের কেবিনেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে, গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘর’- এ রূপান্তর করা হবে। যেহেতু ৫ আগস্ট জনগণ গণভবন জয় করেছে এবং অনেক রক্ত ও আত্মত্যাগের ভেতর দিয়ে আমরা ৫ আগস্টের মুহূর্তটি পেয়েছি। ফলে সেটি জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া এবং জনগণের বিজয়কে ধারণ করার উদ্দেশে এই গণভবনকে জাদুঘরে পরিণত করা হবে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো পৃথিবীর বুকে আমরা এটিকে একটি নিদর্শন হিসেবে রাখতে চাই। যে যেকোনো স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট, খুনি রাষ্ট্রনায়কদের আসলে কী পরিণতি হয় এবং জনগণই যে আসল ক্ষমতার মালিক সেই বিষয়টিকে একটি নিদর্শন হিসেবে পুরো পৃথিবীর বুকে রাখার জন্য আমরা এই গণভবনকে সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই উদ্দেশে আজকে আমাদের প্রাথমিক পরিদর্শন ছিল। তিনি বলেন, গণপূর্ত ও স্থাপত্য বিভাগের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের থেকে আমরা প্রাথমিক পরামর্শ নিয়েছি। আমরা আমাদের আকাঙ্ক্ষাগুলো বলেছি যে, আমরা কীভাবে এটাকে দেখতে চাই এবং একটি ফরমাল কমিটি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হয়ত আগামীকালের মধ্যে কমিটি হয়ে যাবে। কমিটি হলে হয়ত আমরা পরবর্তী সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করব। স্বল্প সময়ে আমরা যেন এ জাদুঘর উদ্বোধন করতে পারি, সেজন্য খুব দ্রুত গতিতে কাজ সম্পাদন করার জন্য বলা হয়েছে। কমিটিতে কারা থাকবেন এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, কমিটিতে যারা বিশেষজ্ঞ রযেছেন, স্থাপত্য ও জাদুঘর বিশেষজ্ঞ, আর্টিস্ট, বিদেশে যারা জাদুঘর বিশেষজ্ঞ বা অভ্যুত্থান স্মৃতি ও জাদুঘর করার অভিজ্ঞতা আছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও পরামর্শ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। জাদুঘরে কী থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে প্রথমত ৩৬ দিনের অভ্যুত্থানের স্মৃতি, দিনলিপি থাকবে। যারা এই আন্দোলনে শহিদ হয়েছেন, তাদের স্মৃতি থাকবে, তালিকা থাকবে এবং এই আন্দোলন ছাড়াও গত ১৬ বছরে যে নিপীড়ন হয়েছে, যারা গুম হয়েছেন, যাদের বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হয়েছে তাদের তালিকা থাকবে। এই সকল বিষয়ের একটি রিপ্রেজেন্টেশন থাকবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, গণভবন যে ভগ্নাবশেষ অবস্থায় রয়েছে, তা সর্বোচ্চ সেই অবস্থায় রেখে জাদুঘরটি করা হবে। এখানে কিছু ডিজিটাল রিপ্রেজেন্টেশন থাকবে। পরবর্তী সরকারপ্রধান যিনি হবেন, তার বাসভবন কোথায় হবে জানতে চাইলে এই উপদেষ্টা বলেন, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন বিষয়ে পরবর্তীতে আলোচনা হবে। এখন আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যমুনায় থাকবেন। গণভবন পরিদর্শন করে কী দেখলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন আমরা ভেতরে প্রচুর দেওয়াল লিখন, গ্রাফিতি দেখেছি। লুটপাট হওয়া অনেক আসবাবপত্র আবার মানুষ রেখে গেছেন, সেগুলোও সংরক্ষিত রয়েছে। মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে চারদিকে ভাঙচুর অবস্থা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো এই ক্ষোভগুলোকে যথাসম্ভব ইনটেক রেখেই জাদুঘর করার।

যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমাদের কেবিনেট মিটিং ছিল। সেখানে গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি ও শেখ হাসিনার শাসনকালে জনগণের ওপর যে অত্যাচার, গুম, খুন, নিপীড়নের স্মৃতি তা সংরক্ষণ করে গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হবে এবং জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। আজকে আমরা সেই উদ্দেশেই প্রাথমিকভাবে গণভবন পরিদর্শনে এসেছি। তিনি বলেন, গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তর করতে স্থাপত্যশিল্পী, আর্কিটেক্ট ও বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে একটি কমিটি গঠন করে কার্যক্রম শুরু করব।

সর্বশেষ আপডেট: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৪
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও