একজন ট্র্যাজিক হিরো যেমন সীমাহীন দুঃখ কষ্ট ভোগ করতে করতে তার সত্যকথন ও সৎসাহসের জন্য সহানুভূতি অর্জন করেন, তার বীরত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি মূর্ত হয়ে উঠে সাধারণ মানুষের কাছে, তেমনি দেশনায়ক তারেক রহমান নিরন্তর নিপীড়নের ভেতর থেকে ফিনিক্স পাখির মতো রূপান্তরিত হয়ে জেগে উঠেছেন। কেবল জেগে উঠেননি, জাগ্রত করেছেন তৃণমূল জনতাকে। ইডিপাস, অ্যান্টিগোনে এবং অ্যাকিলিসের মতো চরিত্রগুলো সাহিত্যের পাতায় ট্র্যাজিক নায়ক-নায়িকা হিসেবে স্বীকৃত। মিথের জগতের এই চরিত্রগুলো প্রশংসনীয় গুণাবলীর পাশাপাশি বাস্তবসম্মত ত্রুটিগুলো প্রদর্শনের মাধ্যমে, বিশেষ করে মানুষের ভুলের পরিণাম দেখিয়ে দর্শকদের সহানুভূতি জাগিয়েছে। নায়কের পতনের জন্য মানুষের মায়া জাগ্রত হয়। অন্যদিকে, মানুষ মন্দ চরিত্রের করুণ পরিণতিতে বিলাপ করে না, কিন্তু যে অজ্ঞাত কারণে নায়কের পতন ঘটে, নিয়তির মতো বাইরের জগতের রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় নায়কের অনিবার্য শাস্তি উপস্থিত হয়, তখন মানুষ পরিতাপ-যাতনা অনুভব করে। অ্যারিস্টটলীয় ট্র্যাজিক নায়কের মতোই তারেক রহমান অভিজাত, যোগ্য, সাহসী এবং গুণ ও সম্মানের শাস্ত্রীয় আদর্শের মূর্ত প্রতীক। তিনি অ্যান্টি-হিরোর মতো অসম্মানিত, কাপুরুষ ও স্বার্থপর নন। মূলত তারেক রহমান আধুনিক কালের ট্র্যাজিক নায়ক। ট্র্যাজিক হিরোরা নৈতিকতা এবং জন্মগত দিক দিয়ে উচ্চ মর্যাদার চরিত্র। তারেক রহমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দেশনায়ক হিসেবে মহত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর ইতিবাচক বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রচেষ্টার মধ্যে ষড়যন্ত্রকারীদের অপতৎপরতা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু তিনি সহানুভূতিশীল চরিত্র। দুঃখ ও কষ্টকে সঙ্গী করে তাঁর দীর্ঘদিন কেটেছে। ২০০৬ থেকে ২০০৭ সালে ১৮ মাস কারাগারে কাটিয়েছেন। ২০০৮ সালে দুঃখজনকভাবে তাকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। সবমিলিয়ে তিনি একজন আইকনিক আধুনিক ট্র্যাজিক নায়ক। তিনি এক সৈনিক পরিবার থেকে এসেছেন, জনগণের সহানুভূতি অর্জন করেছেন এবং দেশকে ভালোবাসার কারণে ট্র্যাজিকতার শিকার হয়ে নির্বাসিত হয়েছেন।
দুই.
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সর্বকনিষ্ঠ যুদ্ধবন্দীদের একজন, যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধরত শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর জন্য ৯ মাসের প্রতিটা প্রহর গণনা করেছেন, যিনি শিশুকাল থেকে শিখেছেন দেশমাতৃকার জন্য আত্মত্যাগের মহান ঐশ্বর্য, যিনি অসীম ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার মূর্ত প্রতীক, তিনি হলেন গণতন্ত্রের অগ্রসৈনিক তারেক রহমান (জন্ম ২০ নভেম্বর, ১৯৬৭)। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এর আগে তিনি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও সিনিয়র যুগ্ম স¤পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ছোটবেলায় বিএনপির চেয়ারপার্সন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মা বেগম খালেদা জিয়ার সাথে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের রূঢ় বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। যুদ্ধের সময়, যখন তাঁর পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে দেশকে স্বাধীন করার জন্য প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেন, তখন তাঁকে, তাঁর মা বেগম খালেদা জিয়া এবং তাঁর ছোট ভাই আরাফাত রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তাঁরা মুক্তি পান, যখন বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। তারেক রহমান ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজে প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করে ’৮০ দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক স¤পর্ক বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, হবস, লক, রুশো, ভলতেয়ার, কার্ল মার্কস এবং অন্যান্য ব্যতিক্রমী চিন্তাবিদদের রাজনৈতিক চিন্তাধারা পড়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে, এরশাদ সরকারের পাতানো নির্বাচনের প্রাক্কালে, তিনি গৃহবন্দিত্ব এড়িয়ে প্রেসক্লাবে একটি প্রেস কনফারেন্সে বক্তৃতা করতে উপস্থিত হন। সেখানে তিনি বর্ণনা করেছিলেন, কীভাবে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলনকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তাঁর কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার জন্য, জেনারেল এইচ এম এরশাদের স্বৈরাচারী সরকার তাঁকে তাঁর মা আপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে প্রায়ই গৃহবন্দী করে রাখত। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি মায়ের সাথে রাজপথে নেমেছিলেন এবং ১৯৮৮ সালে দলের উপজেলা ইউনিট গাবতলী উপজেলায় সাধারণ সদস্য হিসেবে বিএনপিতে যোগদান করেন। তিনি তৃণমূল থেকে জনগণকে সংগঠিত করেন এবং এইচ এম এরশাদ সরকারের পতনে অবদান রেখেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে তিনি তাঁর মা বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচনে জয়ী হন। বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হন। তারেক রহমান বগুড়ায় তৃণমূল থেকে নেতা নির্বাচনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সূচনা করেছিলেন, যেখানে তিনি বিএনপি শাখার একজন নির্বাহী সদস্য ছিলেন। ১৯৯৩ সালে বগুড়া জেলা ইউনিটে তিনি একটি কনভেনশনের আয়োজন করেন, যেখানে দলের অন্যান্য জেলা ইউনিটের জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করার জন্য গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। বগুড়ায় সফল সম্মেলনের পর তিনি অন্যান্য জেলা ইউনিটকে গণতান্ত্রিকভাবে নেতা নির্বাচন করতে উৎসাহিত করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে, তারেক রহমান স্থানীয় পর্যায়ের সমস্যা এবং সুশাসনের উপর গবেষণা করার জন্য ঢাকায় একটি অফিস প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। সেসময় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে হয়েও এবং তৃণমূল থেকে ব্যাপক সমর্থন পাওয়া সত্ত্বেও স্বজনপ্রীতি না করে, মন্ত্রীত্ব গ্রহণ না করে তিনি তৃণমূলের ক্ষমতায়নে মনোনিবেশ করেছিলেন। দল গঠনে তাঁর প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে ২০০২ সালে স্থায়ী কমিটি তাঁকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম স¤পাদক পদে নিয়োগ দেয়। ২০০৫ সালে তারেক রহমান দেশব্যাপী তৃণমূল ফোরাম আহবান করেন, যাতে বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলা বা উপজেলা অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি প্রতিটি উপজেলা পরিদর্শন করেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলেন, সাধারণ মানুষের সাথে একের পর এক কথোপকথন করে, তাঁর মতামত দিয়েছেন এবং সমর্থকদের মতামত শুনেছেন এবং জনগণের কাছে বিএনপির ভিশন প্রচার করেছেন। তিনি কৃষকদের জন্য সরকারী ভর্তুকি, বয়স্কদের জন্য ভাতা, পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্লাস্টিক ব্যাগবিরোধী আন্দোলন এবং মহিলা শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি বিতরণ স¤পর্কে জনগণকে অবহিত করেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে সম্মেলনে নিবন্ধনকারীদের অন্তত ১৮ হাজার চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। এই চিঠিগুলো আঞ্চলিক সমস্যা তুলে ধরার পাশাপাশি সম্ভাব্য সমাধানের প্রস্তাব করেছিল। তারেক রহমান জানেন, গ্লোবালাইজেশন বা আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো দিক থেকে বিশ্বনাগরিক। বিশ্বদরবারে একজন নাগরিকের মর্যাদা নির্ভর করে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বিভিন্ন সূচকে তার নিজ দেশের সামাজিক নিরাপত্তাজনিত অবস্থানের ওপর, ব্যক্তিগত আর্থিক সচ্ছলতার মাপকাঠিতে নয়। তারেক রহমান এই বিশ্বব্যবস্থা ভালো করেই জানেন। ২০০৭ সালে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আর্মিব্যাকড তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলেন তারেক রহমান। সেই সরকারের একজন আমার কাছে স্বীকার করেছিলেন, সে সময় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের বাধ্য করেছিল অভিযোগ দায়ের করতে।
তিন.
পলিটিক্যাল টার্মস অনুসারে, কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, সংবিধান, নাগরিক অধিকার এবং সার্বজনীন ভোটাধিকার, যা ইউরোপ এবং অন্যান্য দেশে অতীতে অর্জিত হয়েছে। (সাধারণত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে)। আবার সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার নীতি আদর্শের ভিত্তিতে গণতন্ত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যদিকে রয়েছে, রাজনৈতিক সমতার ধারণা। কেবল সেনা পরিবারের সন্তান হিসেবে নয়, রাজনৈতিক পরিবারের কৃতি সন্তান তারেক রহমান এসব ভালো করেই জানতেন। ২০২৪ সাল তাঁর জীবনের মাহেন্দ্রক্ষণ। ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা কলঙ্কিতভাবে ক্ষমতাসীন হলেও দেশের বৃহত্তম বিরোধীদল বিএনপি সেই নির্বাচন বর্জন করেছিল। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য গত এক দশকের বেশি সময় ধরে সারা দেশে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে দলটি। নির্বাচন বর্জন নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ব্যাখ্যা করেছিলেন, কেন তাঁর দল নির্বাচন বয়কট করেছিল। তিনি বলেছিলেন, শেখ হাসিনার নির্বাচনে শুধু রাজনৈতিক দলগুলোই অংশগ্রহণ করেনি, সাধারণ ভোটাররাও অংশগ্রহণ করেনি। সেসময় তিনি যুক্তি দেন যে, জামায়াতে ইসলামীর সাথে বিএনপির স¤পর্কের বিষয়ে ভারতের উদ্বেগ ভুল, কারণ আওয়ামী লীগ অতীতে বেশ কয়েকবার ইসলামী দলের সাথে জোট করেছে। অন্যদিকে, নির্বাচন বয়কট ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইকে জয়ী করার প্রাথমিক ধাপ। কারণ, সেসময় একা বিএনপি নয়, আরও ৬২টি গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দল ৭ জানুয়ারি তথাকথিত নির্বাচন বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিনিধিত্ব করার মতো একটি অর্থবহ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য বিএনপির অঙ্গীকার থেকে এই সিদ্ধান্তের উদ্ভব হয়েছে। তারা যাতে অবাধে তাদের ভোট দিতে পারে এবং সেই ভোটগুলো সত্যিকার অর্থে গণনা করা হবে, এই প্রত্যাশা ছিল তারেক রহমানের। গণতন্ত্র লুণ্ঠিত হয় স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে। ২০১৪ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৫৪টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়। ২০১৮ সালে রাতের ভোট করে। দমন-পীড়নের শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ ২০২৪ সালে আরেকটি জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচনের আয়োজন করে। এ নির্বাচনকে ডামি নির্বাচন বলা হয়। শেখ হাসিনা নিজ দলের প্রার্থীদের ডামি প্রার্থী হওয়ার নির্দেশ দেন। এর মধ্যেই রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে বিএনপিকে বিভক্ত করার অপচেষ্টা করেছিলেন। হাজার হাজার প্রার্থীর সাথে অন্তর্ভুক্তির মিথ্যা ধারণা তৈরি করতে তথাকথিত কিংস পার্টি গঠনে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন। এতকিছু করেও তার শেষ রক্ষা হয়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে হাসিনাকে। হাসিনা তার ফ্যাসিবাদী শাসনবিরোধী বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী দমন-পীড়ন জোরদার করেছিল, যাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন না হয়। অথচ এটা ¯পষ্ট যে, শুধুমাত্র একটি অরাজনৈতিক, নিরপেক্ষ, নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে পরিচালিত একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বিশ্বাসযোগ্য এবং স্বচ্ছ নির্বাচনী প্রক্রিয়াই বাংলাদেশে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং একটি পাবলিক ম্যান্ডেট পেতে পারে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা ২৬৮৭ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, যার সাথে অন্তত ৬৭৫টি নথিভুক্ত গুমের ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০টিরও বেশি মামলা করা হয়েছে। গত বছর ২৮ অক্টোবর জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচনের আগে বিএনপির মহাসমাবেশকে পণ্ড করে দেয়া হয়। এই কঠিন পরিস্থিতিতে তারেক রহমান বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশার কথা। তারেক রহমান বৈশ্বিক রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিত্ব। তাঁর মতে, আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং চরমপন্থা মোকাবেলায় একটি শক্তিশালী পদ্ধতির উপর জোর দেয়। আমরা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, বাংলাদেশের ভূখণ্ড কোনো রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহার করা হবে না। ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বলেই তিনি এরকম দূরদৃষ্টিস¤পন্ন। ২০০৮ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত তারেক রহমান লন্ডনে বসে বিএনপির নেতাকর্মীদের ক্লান্তিহীনভাবে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। উল্লেখ করা প্রয়োজন, শেখ হাসিনা তারেক রহমানকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে তাঁর মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করে। তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে কাল্পনিক মামলা দেয়, যার কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে তারেক রহমানের স¤পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সেনানিবাসের পারিবারিক বাড়ি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করেছে। খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে দেয়া হয়নি। তারেক রহমান এবং তাঁর পরিবার গণতন্ত্রের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের লাখ লাখ পরিবারের কষ্ট থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে তিনি ট্র্যাজিক হিরোর মতো অমৃতের সন্তানে পরিণত হয়েছেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তারেক রহমানের অনন্য বক্তব্য হচ্ছে, প্রবাসে থাকাকালীন, আমি বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং জনগণের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত, আমার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দেশব্যাপী ফোন কল এবং অনলাইন মিটিংয়ে উৎসর্গ করেছি। আমি প্রতিদিন দেখি, আমাদের নেতাকর্মীরা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে নির্ভীক ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠছেন। গণতান্ত্রিক আদর্শের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা পরের দিন পথসভা বা জনসভায় যোগ দেন। আমি এই সাহস এবং উদ্দীপনা দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং গণতন্ত্রপন্থী জনগণের আপসহীন অবস্থানের প্রশংসা করি। আমার দিক থেকে অবদান রাখার জন্য, আমি স্টেকহোল্ডারদের একত্রিত করতে, তৃণমূলকে একত্রিত করতে এবং তাদের সংকল্পকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করি। আবারও একটি নিপীড়নমুক্ত জাতির মতো বেঁচে থাকার জন্য আমাদের ভাগ করা আবেগ এই বিশ্বাস থেকে উদ্ভূত যে গণতন্ত্রের সাধনা, তা অমূল্য। এমনকি দুর্ভোগ এবং প্রতিকূলতা থাকলেও এটি একটি চ্যালেঞ্জিং রাজনৈতিক যাত্রা। প্রকৃতপক্ষে, শহীদ জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তারেক রহমান মানুষের কল্যাণে নিবেদিত দেশনায়ক। ইতোমধ্যে তিনি দলের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছেন। কেউ চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত হলে দল থেকে বহিস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন। নেতৃত্ব কতটা গণতান্ত্রিক হতে পারে তার দৃষ্টান্ত রয়েছে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তাঁর মতামতের মধ্যে। তারেক রহমান বলেছেন, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল রাষ্ট্র ও প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে সব সহায়তা করতে প্রস্তুত। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাঁর বক্তব্য হচ্ছে, অতীতে নির্যাতনের শিকার হওয়ার কারণে দলের কেউ যাদে প্রতিশোধ পরায়ণ না হয়। কেউ যাতে নিজের হাতে আইন তুলে না নেয়। অন্যায়-অবিচারের শিকার হলে দলীয় শাস্তি ও আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। কেউ যাতে হয়রানিমূলক হামলা-মামলার শিকার না হয়। তিনি আরও বলেছেন, আমাদের দল বিএনপি মনে করে, জনগণের কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ গঠনের জন্য রাষ্ট্র ও রাজনীতি সংস্কারের বিকল্প নেই। দীর্ঘমেয়াদি রাষ্ট্রীয় সংস্কারের কার্যক্রমগুলো জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে হলে সেটি বেশি কার্যকর বলে জনগণ বিশ্বাস করে। গণতান্ত্রিক বিশ্বেও এটি স্বীকৃত।
চার.
ট্র্যাজিক হিরো দেশনায়ক তারেক রহমান জনগণের মধ্যমণিতে পরিণত হয়েছেন। জনগণ তাঁর কাজ ও কথায় আস্থাশীল। অন্যদিকে, নেতাকর্মীদের তিনি যে বার্তা দিচ্ছেন, নিঃসন্দেহে তা অনুসরণীয়। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, আপনারাই বিএনপির প্রাণ। শত নির্যাতন-নিপীড়ন, হামলা-মামলা, হয়রানির শিকার হয়েও আপনারা জাতীয়তাবাদের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। আমি জানি, অতীতে বছরের পর বছর ধরে আপনাদের অনেকে মাফিয়া সরকার এবং তাদের দোসরদের দ্বারা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তাঁর কথা মেনে ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নেতাকর্মীরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিয়েছে। আর এই নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য তিনি নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। সেই বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য আজকে বিএনপির সকলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠা করা, মুক্ত বাজার অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ের মধ্যেই দেশনায়ক তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাহাত্ম্য রয়েছে। তিনি ট্র্যাজিক হিরো কিন্তু তিনি অজেয়। তিনি দুঃখবিনাশী, তিমিরনাশক অর্কেস্ট্রা।
লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সূত্র :ইনকিলাব
সর্বশেষ আপডেট: ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৪৬
পাঠকের মন্তব্য