এদেশে বহুল প্রচলিত প্রবাদ হচ্ছে ‘যত গর্জে তত বর্ষে না’। অর্থাৎ বেশি তোড় জোড়ে ভালো ফল হয় না। এবার ১৫ আগস্ট পালন নিয়ে আওয়ামী লীগের হম্বিতম্বি তোড় জোড় এই প্রবাদের মতই হয়েছে। আধিপত্যবাদী ভারতের সহায়তায় প্রতিবিপ্লব ঘটানোর স্বপ্নে বিভোর আওয়ামী লীগ গত কয়েকদিন ধরে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণা চালায়। দিল্লি থেকে শেখ হাসিনার হুঙ্কার ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে সজীব ওয়াজেদ জয়ের হম্বিতম্বি ১৫ আগস্ট ১০ লাখ লোক ঢাকার রাস্তায় নামবে। কিন্তু ১৫ আগস্ট হাসিনার ডাকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাড়া দেয়নি। উল্টো ওই দিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও সাংস্কৃতির সংগঠন গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। আওয়ামী লীগের নেতার্কর্মী ও সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের বিপদে ফেলে ভারতের পালিয়ে যাওয়ায় শেখ হাসিনাকে অনেকেই বিশ্বাসঘাতক বলছেন। তারা এখন আর শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করেন না।
১৫ আগস্ট সারাদিনই ধানমন্ডির ৩২ নম্বরসহ রাজধানী বিভিন্ন রাজপথ ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দখলে। আওয়ামী লীগের কোন পর্যায়ের কোন নেতাকর্মীকে কোথাও দেখা যায়নি। হিন্দুত্ববাদী ভারতের আজ্ঞাবহ তাদের উচ্ছিষ্ট ভোগী ধর্মনিরপেক্ষতার নামে বেলাল্লাপনাকারী কিছু সাংস্কৃতিককর্মী ৩২ নম্বরে জড় হওয়ার চেষ্টা করেছে। আগেরদিন সন্ধ্যায় গুটি কয়েক সংস্কৃতিকর্মী হিন্দুয়ানি সংস্কৃতির আদলে ‘মোমবাতি প্রজ্জ্বলন’ করতে গিয়েছিল। পরে গণধোলাই খেয়ে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এসব সংস্কৃতি কর্মীরা নিজেরা কোনদিন নামাজ-কালামের ধারধারে না। নিজের বাবা মায়ের কবর কোন দিন জিয়ারত করতে যায় না অথচ তারাই মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধার নামে ন্দিুদের মতো পূজা অর্চনায় লিপ্ত হতে চেয়েছিল। এ ছাড়া দেশের আর কোথাও ১৫ াাগস্ট পালনের কোন আয়োজন দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পার্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের ওয়ার্ড পর্যায়ের কোন নেতাকেও কোথাও দেখা যায়নি।
গত ১৬ বছর এ দিনটি ছিল ক্ষমতাসীনদের শোক পালনের মাতামাতিতে ভরপুর। চারদিকে মাইকে উচ্চ ভলিউমে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণ শোনানো হতো। কোথাও কোথাও আগেরদিন রাত ১২টার আগে থেকেই এই ভাষণ-যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে মানুষকে। দেশজুড়ে চলত খিচুড়ি-উৎসব। এই খিচুড়ির জন্য চাঁদাবাজির অর্থে কোন নেতা কয়শ’ গরু জবাই করবেন তাও সংবাদমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হত। প্রচারমাধ্যমগুলোও কম যায়নি। টেলিভিশনগুলো মাসজুড়ে শোকে মুহ্যমান থেকতে। সংবাদপত্রগুলোও পৃষ্ঠা পৃষ্ঠা শোকগাথা রচনাও প্রকাশ করেছে। ঢাউস ছবিসহ বিজ্ঞাপন ও নিবন্ধে মোড়ানো সংবাদপত্রগুলোতে এদিন অন্য কোনো সংবাদ স্থান পেত না বললেই চলে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ১৬ বছরে শোক প্রকাশ বাবদ কত হাজার কোটি টাকা শ্রাদ্ধ করেছে তার হিসাব কষা খুবা কঠিন। এবার সর্বত্রই এর ব্যতিক্রম। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে গেছে দাম্ভিক ও নিষ্ঠুর শাসক, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলের সাধারণ সম্পাদক, আলোচিত চরিত্র ওবায়দুল কাদেরও নিখোঁজ। অন্য নেতারা কেউ গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ড ও বিচারের মুখোমুখি, আবার অনেকে দেশ-বিদেশে আত্মগোপনে। অবিস্মরণীয় গণঅভ্যুত্থানের পর সারাদেশে যে গণবিস্ফোরণ ঘটেছিল তার সহিংস প্রতিক্রিয়ায় সারাদেশে শেখ মুজিবের প্রায় সব ভাস্কর্য ও নামফলক ভেঙে ফেলেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। রাজধানীর ধানম-ি ৩২ নম্বর বাড়িতেও বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করেছে। ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালী সরকার ১৫ আগস্টের সাধারণ ছুটি বাতিল করেছে। এ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, তাজা লাশের গন্ধ নাকের ডগায় রেখে ৫০ বছর আগের শোক পালন করা ভ-ামি। এ অবস্থায় রাজনৈতিক পালাবদলের প্রেক্ষাপটে শুধু ধানমন্ডি ৩২ নম্বর নয় সারাদেশেই কোন শোক পালনের আয়োজন ছিল না। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের কাইকেই কোথাও দেখা যায়নি। ১৫ আগস্ট সারাদেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো রিপোর্ট তুলে ধরা হলো।
চট্টগ্রাম থেকে রফিকুল ইসলাম সেলিম জানান, ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু বার্ষিকীতে চট্টগ্রামে মাঠে নামেনি আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা। আওয়ামী সমর্থিত পেশাজীবীদের দেখা মেলেনি কোথাও। দলীয় সভাপতি পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আহ্বানেও কোন সাড়া পাওয়া যায় নি। গর্তে লুকিয়ে থাকা কোন নেতাই প্রকাশ্যে আসার সাহস দেখাতে পারেননি। বিগত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার হালুয়া রুটি খেয়ে মোটা তাজা হওয়াদেরও দখা যায় নি। ১৫ আগস্ট দিনভর মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের আশপাশে কেউ আসেনি। নেতাদের বাসা বাড়িতে পালিত হয়নি কোন কর্মসূচি। তবে সন্ধ্যায় নগরীর চেরাগি মোড়ের গলিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করতে আসেন কিছু লোকজন। মোমবাতি জ্বালানোর আগেই স্থানীয়রা তাদের ধাওয়া করে। নিমেষেই পন্ড হয়ে যায় তাদের বাতি জ্বালিয়ে শেখ মুজিবকে স্মরণের আয়োজন। স্থানীয়রা জানান, পতিত স্বৈরাচারের উচ্ছিষ্টভোগী নাস্তিক হিসেবে পরিচিত আওয়ামী সমর্থিত কিছু বাম সংগঠনের কর্মী সেখানে জড়ো হয়েছিল। তারা ভারতীয় এজেন্ডায় রাস্তায় নামার চেষ্টা করে, এটা বুঝতে পেরেই তাদের হঠিয়ে দেওয়া হয়। ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন এক সফল গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালানোর খবরে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, মেয়র, এমপিসহ নেতাকর্মীরা গর্তে লুকিয়ে যায়। নেতাদের বাসা বাড়িতে তালা লাগে। বন্ধ রাখা হয় দলীয় নেতাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দলীয় কার্যালয় এখন পরিত্যক্ত। অনেক কার্যালয় জনরোষের শিকার হয়েছে। সরকারি জমি ও ভবন দখল করে গড়ে তোলা দলীয় কার্যালয়েও তালা ঝুলছে। অনেকের ধারণা ছিল অন্তত শেখ মুজিবের মৃত্যুর দিনে কেউ না কেউ মাঠে নামবেন। আর কিছু না হোক দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উড়বে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জনরোষের ভয়ে আওয়ামী লীগের কেউ রাস্তায় নামার চেষ্টা করেনি। দলীয় কর্মীদের মাঠে নামতে ভারত থেকে হাসিনার আহ্বানের পর আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ১৪ আগস্ট থেকে নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমে আসে সবাই। নগরীর মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। অনুরূপ কর্মসূচি ছিল বিএনপি জামায়াতেরও। পতিত হাসিনার আওয়ামী লীগের কর্মীদের প্রতিহত করতে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামে। আর তাতেই গর্তের ভেতর থেকে বের হওয়া নিরাপদ মনে করেনি টানা পনের বছর ক্ষমতায় থাকা দলটির নেতাকর্মীরা।
বগুড়া থেকে মহসিন রাজু জানান, দিল্লি ও ওয়াশিংটন প্রবাসী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের ভিডিও -অডিও নির্দেশনা, উষ্কানি সত্ত্বেও বগুড়ায় ১৫ আগষ্টের কর্মসুচি পালন করেনি আওয়ামী লীগ। এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দলের বগুড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গদল সমুহের নেতা কর্মিরা কেউ একবারের জন্য দূর থেকে উঁকিঝুঁকি দিয়েও দেখে যায়নি। দলের বেশ কয়েকজন আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীর সাথে মোবাইলে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া যায়। আওয়ামী লীগের মত একটা প্রাচীন ও বিশাল দলের এই করুণদশার জন্য তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাইব্রিড প্রীতি,পুলিশ ও আমলা নির্ভরতা, এবং চরম স্বেচ্ছাচারী মানসিকতাকে দায়ী করেন। তথ্য নিয়ে দেখা যায়, বগুড়ায় ১ আগষ্ট থেকেই ছাত্র আন্দোলনের চাপে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঘর ছাড়া হয়েছিল। এসময়ে দফায় দফায় দলীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাংচুর, লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এইসব হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ছবি ফেসবুকে দেখে নেতা কর্মিরা ক্ষোভে দুঃখে হতাশায় ভেঙে পড়ে তারা। তবুও তাদের আশা ছিলো শেষতক নেত্রী শেষ পর্যন্ত ম্যানেজ করবেন। কিন্তু ৫ আগষ্ট প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও দিল্লিতে পলায়ন তাদের সব আশা ভরসা শেষ হয়ে যায়। চিহ্নিত হয়ে আক্রমণের স্বীকার হওয়ার ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, ১৫ আগষ্ট বা অন্য কোনো কর্মসুচি পালনতো পরের কথা আপাতত স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা তারা কবে নাগাদ করতে পারবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বরিশাল থেকে নাছিম উল আলম জানান, পনের আগস্টের কর্মসূচীতে বরিশালে কিছুটা চাপা উত্তেজনা ও জনমনে নানা সংশয় থাকলেও আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের ছোটখাট মিছিল এবং আইনজীবী ফোরাম শোক মিছিলের চেষ্টা ভন্ডুলের মধ্যে দিয়ে দিন অতিবাহিত হয়েছে। অপরদিকে শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার দাবীতে বৈশম্য বিরোধী ছাত্ররা নগরীর নথুল্লাবাদে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় একঘন্টা অবরোধ কর্মসূচী পালন করে। ওইদিন ভোরে নগরীর কোর্ট কম্পাউন্ডে আওয়ামী আইনজীবী ফোরামের সদস্যরা মিছিল বের করবে, এ খবরের প্রেক্ষিতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কর্মীর সবগুলো গেটে অবস্থান নেয়। শেষ পর্যন্ত ঐ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়নি। নগরীর সোহেল চত্তর সংলগ্ন সিটি করপোরেশনের এনেক্স ভবনের নিচ তলায় আওয়ামী লীগের পরিত্যক্ত অফিসও ছিল ফাঁকা। পাশে শেখ মুজিব ও আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিকৃতিতে কেউ ফুল দিতেও আসেনি।
কুষ্টিয়া থেকে এস এম আলী আহসান পান্না জানান, আগাম বার্তা দিয়েও কুষ্টিয়ায় ১৫ আগস্ট উপলক্ষে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি জেলা আওয়ামী লীগ। অন্য বছরের মতো জেলার কোথাও মাইকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাজাতেও শোনা যায়নি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ কার্যালয়েও কোনো নেতা-কর্মীদের দেখা যায়নি। ১৪ আগস্ট বিকেল ৫টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দীন খান বলেছিলেন, তাঁরা শোক দিবসে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে ১৫ আগস্ট এ বিষয়ে জানার জন্য তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। ১৫ আগস্ট সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুল আসকর বলেন, ৭৫-পরবর্তী সময়ে যা হয়েছিল, এখন সে সময় চলছে। আমার জানামতে দলীয়ভাবে কোথাও শোক দিবসের কর্মসূচি পালিত হয়নি। দলীয় কর্মীরা বলেন, ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর স্থানীয় নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। সরকার শোক দিবসের ছুটি বাতিল করায় জেলা প্রশাসন থেকেও শোক দিবসের কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি। জেলা শহরে পাঁচটি স্থানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও ভাস্কর্য রয়েছে। সেগুলো ৫ আগস্ট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ভেঙে দেওয়ার আগে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এসব স্থানে ফুল দিতেন। করতেন নানা অনুষ্ঠান।
খুলনা থেকে আসাফুর রহমান কাজল জানান, ১৫ আগষ্ট ঘিরে খুলনায় কোন আয়োজন চোখে পড়েনি। কোথাও বিরিয়ানি, খিচুঁড়ী রান্নার আয়োজন হতে দেখা যায়নি। বাজেনি মাইক, সড়কে হয়নি হাজারো মানুষের শোক র্যালি। দিনটি উপলক্ষে সকাল ৮টায় খুলনা নগরীর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কিছু নেতাকর্মী। গত ৪ তারিখে কার্যালয়ের সব কিছু পুড়িয়ে দেওয়ায় সেখানে সকালে ব্যানার-ফেস্টুনে শেখ মুজিবুরের একটি ছবি টানিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে খুলনা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন সমূহের ব্যানারে শোক মিছিলের ফটো সেশন করা হয়। যদিও এ আয়োজনে কোন পদধারী কোন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন না।
দিনাজপুর থেকে মাহফুজুল হক আনার জানান, দিনাজপুরে আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মী শুন্য ১৫ আগষ্ট পার হলো। গত বছর এই দিনে পাড়ায় মহল্লায় এমনকি ব্যাক্তিগত উদ্যোগে খিচুড়ী বিতরণ দোয়া মাহফিল কতভাবেই সরগরম ছিল এই দিনটি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পদচ্যুত এবং নেত্রীর দেশ থেকে পালানোর ঘটনায় সবকিছুই হারিয়ে গেছে। দলের কারনে আজ মহান হয়েও ম্লান হয়ে গেলেন শেখ মুজিবুর রহমান। যার জন্য একটা শিশুকেও ফুল নিয়ে তার ছবিতে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা গেলো না।
কুমিল্লা থেকে সাদিক মামুন জানান, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ১৫ আগস্ট পালন করতে কুমিল্লার শহর, গ্রাম-গঞ্জ ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে যেতো। মাইকের আওয়াজে কানে এসে লাগতো শেখ মুজিবুর রহমানের রেকর্ডকৃত ভাষণ। কুমিল্লা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও নগর উদ্যানের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য দেখা যেতো আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী এবং অঙ্গ সংগঠনের দীর্ঘ লাইন। কিন্তু, এবারের ১৫ অগাস্টে একটি ব্যানার, ফেষ্টুনেরও দেখা মেলেনি কুমিল্লায়। জেলার কোন এলাকায় এই দিনটি ঘিরে কর্মসূচি বা অনুষ্ঠানের কথাও শোনা যায়নি। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় ছিল নেতাকর্মী শূন্য। আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে কোনো নেতা-কর্মী পা রাখেন নি ১৫ আগস্টে ফুল নিয়ে। বরং দেখা গেছে, যেসব স্থানে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সকাল থেকেই নেতাকর্মীদের ঠেলাঠেলি লেগে থাকতো সেখানে ১৫ আগস্ট ঘিরে আওয়ামী লীগের তৎপরতা প্রতিহত করতে জোরদার ও সতর্ক অবস্থান নিয়ে ছাত্র ও যুবকদের পাহাড়া দিতে দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহম মুস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল ও সাধারণ সম্পাদক মজিবুল হক দেশের বাইরে। আবার মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি আকম বাহাউদ্দিন বাহার ও সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মেয়র তাহসীন বাহার সূচনা এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ডাকসাইটের নেতারা জনরোষ থেকে বাঁচতে আত্মগোপনে রয়েছেন। আর সাধারণ কর্মীদের তো আচমকা দেখা মেলে। তাদেরও বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই সাহস ছিল না ১৫ আগস্ট অন্তত ঘরোয়াভাবে পালনের।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে মো. আতিকুল্লাহ জানান, এ উপজেলায় গত ১৬-১৭ বছর ধরে ছিল আওয়ামী লীগের আধিপত্য। অথচ এখানে ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুরের মৃত্যুবাষিকী এবার পালন করা হয়নি। দলের সভাপতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে দেশ ছাড়ার পর থেকে উপজেলা আ,লীগের সভাপতি, পৌরসভা আ,লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১৫টি ইউনিয়নের আ,লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা শাখা যুবলীগের নেতৃবৃন্দ ও উপজেলা শাখা ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ৫ আগস্টের পর পালিয়েছে। তাদের নানান ধরনের অপর্কমের কারণে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। ফলে উপজেলা থেকে ইউনিয়ন র্পযন্ত ১৫ আগষ্ট পালন হয়নি। প্রতিটি ওর্য়াডের আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আতœগোপনে চলে গেছে।
সর্বশেষ আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০১:২৩
পাঠকের মন্তব্য