দিনরাত কর্মব্যস্ত ড. ইউনূস

ছবি সংগ্রহঃ
ছবি সংগ্রহঃ
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্সঃ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারিণী শেখ হাসিনা পালানোর পর আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। দেশের আইন-শৃংখলার উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ, ভারতের ষড়যন্ত্র প্রতিহতে তৎপর হয়ে উঠেছে। গতকাল শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে ভোর থেকে শুরু করে সারাদিন এমনকি রাতেও কর্মব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেছেন ৮৪ বছর বয়সী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আন্তর্জাতিক মহল তাকে পুরো সমর্থন দিচ্ছে এবং তিনি উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যে দফতর বণ্টন এবং প্রথম বৈঠকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

জানা গেছে, ড. ইউনূসের উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠকে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা, একটি গণতান্ত্রিক দেশের যাত্রা শুরু করতে পারে তার প্রস্তুতি নেয়া, নতুন সরকারে শিক্ষার্থীরা ‘সহ-উপদেষ্টা’ হিসেবে যুক্ত করা, সড়ক ও মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক এবং মানুষের জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আনা, পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার এবং কাজে ফেরানো, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, দেশের চলমান উন্নয়ন স্বাভাবিক রাখা, বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা, সীমান্ত এলাকাগুলোতে বিজিবির নিরাপত্তায় জোরদার করা, সকল কারাগারের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বৈঠকে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠকে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে ব্যবসায়ীদের উজ্জীবিত করা, যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া, বাজার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের রংপুরের পীরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে যাওয়া, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধান উপদেষ্টা সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় তাঁর উপদেষ্টা পরিষদের নতুন সদস্যরাও সঙ্গে ছিলেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রথমে ড. ইউনূস সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টারাও পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের প্রথম বৈঠক হয়। বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালানো পর গত বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গভবনে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ জন শপথ নিয়েছেন। ২৫টি মন্ত্রণালয় ও দুইটি বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গতকাল শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদের মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা গেছে। প্রজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ ২৭টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন। এসব মন্ত্রণালয় গুলো হচ্ছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়া অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন, আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান পেয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের, হাসান আরিফ স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়, শারমিন এম মুরশিদ সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ড. আ.ফ.ম. খালিদ হোসেন ধর্ম মন্ত্রণালয়, ফরিদা আখতার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নূরজাহান বেগম স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, নাহিদ ইসলাম ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। এই সরকারে মোট উপদেষ্টা ১৬ জন। সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা, চিকিৎসক বিধান রঞ্জন রায় ও নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারুক-ই-আজম ঢাকার বাইরে থাকায় শপথ নিতে পারেননি।

জানা গেছে, গত সোমবার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। মাত্র সাত মাসের মাথায় তাঁর টানা চতুর্থ মেয়াদের সরকারের অবসান ঘটে। পরদিন প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন সংসদ ভেঙে দেন। এতে দেশ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিশূন্য হয়ে পড়ে। সরকার না থাকা এবং সংসদ ভেঙে দেয়ার পরই দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি ওঠে। কারণ, গত তিন দিনে দেশে বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ নানা ঘটনা ঘটতে থাকে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রথম প্রস্তাব করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা। তাঁদের ৩৬ দিনের টানা আন্দোলন সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে। ৪ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এক দফা দাবি ঘোষণার পরদিন গত সোমবারই পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর গত মঙ্গলবার ভোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নাম প্রস্তাব করেন।

এর আগে সোমবার বিকালে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের নিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও অন্য দুই বাহিনীর প্রধান সেনানিবাসে বৈঠক করেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে রাতে বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আরেকবার বৈঠক হয়। এতে রাজনীতিক, ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও তিন বাহিনীর প্রধানেরা অংশ নেন। তবে কোনো বৈঠকেই আওয়ামী লীগ বা তাদের সমমনা দলের কোনো প্রতিনিধিরা আসেনি। এসব বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোও ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে সম্মতি দেয়। এ সময়টায় ড. ইউনূস প্যারিসে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকেই তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার প্রস্তাবে তাঁর সম্মতি জানান। গতকাল বেলা ২টা ১০ মিনিটে ঢাকায় আসেন ড. ইউনূস।

এদিকে নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ১৩ জন উপদেষ্টা গতকাল সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। প্রথমে ড. ইউনূস সকাল ১০টার দিকে ভারী বৃষ্টির মধ্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধার জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল অনুষ্ঠানে অভিবাদন জানায়। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাগণ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ এবং ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরে, অন্যান্য উপদেষ্টাদের সাথে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আরও একটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। তিনি দর্শনার্থী বইয়েও স্বাক্ষর করেন। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা হেলিকপ্টারযোগে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসে পৌঁছালে তিন বাহিনীর প্রধানগণ তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যান্য উপদেষ্টাবৃন্দ ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উদ্দেশে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করেন।

পুষ্পস্তবক অর্পণের পর উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার পর আমরা মানুষের জীবন-জীবিকার উন্নয়নে মনোযোগ দিয়ে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কাজ করব। ছাত্র প্রতিনিধিদের থেকে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রদের আন্দোলনে বৈষম্যমূলক সরকার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা তাদের আবেগের সাথে পুরো সিস্টেমটি সংস্কার করব।’

এরআগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্যান্য উপদেষ্টারা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। নোবেল বিজয়ী এবং বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন। ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর তিনি দায়িত্ব নেন।

এদিকে এগার দফা দাবিতে আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে এবং তাদের অভিযোগ শুনতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সঙ্গে রয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। পুলিশ সদস্যদের ১১ দফা দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বিবেচনা করবেন বলে জানা গেছে। পুলিশকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশ দিয়েছিলেন পুলিশের নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম। সেই ২৪ ঘণ্টা অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন জেলায় কিছু কিছু থানায় পুলিশ কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাচ্ছে। তবে এখনও পুলিশের অনেক সদস্য কর্মস্থলে ফেরেননি। অধস্তন পুলিশ সদস্যরা ১১ দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন। দাবি মানা না হলে দায়িত্বে ফিরবেন না পুলিশ সদস্যরা। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিকভাবে যাতে পুলিশকে ব্যবহার করা না যায় এ কারণে কমিশন গঠন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশ সদস্যদের হত্যার বিচার, পুলিশ কোনো সরকার বা রাজনৈতিক দলের অধীনে কাজ করবে না, পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশের জনগণের সেবা তথা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত থাকবে, সারা দিনে আট ঘণ্টার বেশি ডিউটি করানো যাবে না, অধস্তন কর্মচারীরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কোনো অবৈধ বা মৌখিক আদেশ পালন করতে পারবেন না, অধস্তন কর্মচারীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদোন্নতির মতো পন্থা অবলম্বন করতে হবে, বার্ষিক নৈমিত্তিক ছুটি ২০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিন করতে হবে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতো অধস্তন কর্মচারীদের সোর্স মানি দিতে হবে, বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি ইউনিটে ১০ তারিখের মধ্যে টিএ এবং ডিএ বিল পরিশোধ করতে হবে, নতুন বেতন স্কেল প্রণয়ন করতে হবে, ঝুঁকিভাতা বাড়াতে হবে, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে শুরু করে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি পুলিশ লাইনস, থানা, ফাঁড়ি, গার্ড, ক্যাম্পের নিরাপত্তা বেষ্টনী জোরদার করে নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে হবে।

গতকাল শুক্রবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম অনানুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এ তথ্য জানান। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টাদের পাশাপাশি কাজের ক্ষেত্রে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদেরও সম্পৃক্ত করার আলোচনা করা হয়। এ বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের উপদেষ্টা প্যানেলে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ ব্যক্তিদের মনোনীত করেছি এবং ছাত্রদের পক্ষ থেকে আমরা দু’জন উপদেষ্টা মনোনীত হয়েছি। এর পাশাপাশি উপদেষ্টাদের সঙ্গে সহকারী হিসেবে ছাত্ররা কাজ করার সুযোগ পাবেন।’ তাদের জন্য ‘সহকারী উপদেষ্টা’ পদ সৃষ্টি করে সরকারের সঙ্গে যুক্ত করার আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি। রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বলা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। এখনো রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ নেই, শিক্ষার্থীরা রাস্তা ম্যানেজমেন্ট করছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি না যে কালই (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) খুলে দেব। শিক্ষক সমাজের সঙ্গে আলোচনা করা হবে, শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে এনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার চেষ্টা করা হবে।

প্রথম বৈঠকে সব সেক্টরের সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিজওয়ানা হাসান। সমাজের সবার সঙ্গে কথা বলা হবে, সবার সঙ্গে কথা বলে রিফর্ম এজেন্ডা ঠিক করে আলাপ-আলোচনায় যাওয়া হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘বৈঠকে অর্থের বিষয়ে কথা হয়েছে। আর্থিক খাতগুলো শুধু চালু করলেই হবে না, সক্রিয় করতে হবে। সেখানে নেতৃত্বের স্থানে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন যেগুলোতে আছে, অনতিবিলম্বে সেসব পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। জনগণের জীবন-জীবিকার কষ্ট লাঘব হবে, বাজারের ক্ষেত্রে যে নিয়ন্ত্রণ, অর্থের ক্ষেত্রে যে নিয়ন্ত্রণ, সেটাও অগ্রাধিকার পাবে অর্থ মন্ত্রণালয় যখন পরিকল্পনা করবে সেখানে।

সর্বশেষ আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২৪, ০২:০৯
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও