পরিস্থিতি ঘোলাটে করাসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও ভীতি ছড়াতে রাজধানীতে ডাকাতি করাতে ৩শ’ লোক ভাড়া করে আওয়ামীলীগ নেতারা। পৃথক কয়েকটি বাড়িতে তাদের দিয়ে হানা দেয়ানোর পর ফেসবুকে গণডাকাতির গুজব ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। আ’লীগ এসব নেতার ষড়যন্ত্র ছিলো অশান্ত পরিবেশের কারণে যাতে দেশে কেয়ারটেকার সরকার শপথ নিতে না পারে। একই সাথে সেই সুযোগে দেশে সেনা শাসন আসার সম্ভাবনা তৈরী হবে।
আওয়ামীলীগ নেতাদের পরিকল্পনায় এসব করা হচ্ছে। আর যারা গভীর রাতে ডাকাতি বা আতঙ্ক ছড়ানোর কাজ করছে তারা অধিকাংশ বস্তি এলাকার এবং টোকাই তরুণ। তারা টাকার বিনিময়ে ভাড়া খাটছে। রাজধানীর জেনেভা ক্যাম্প এলাকা থেকে এদের কয়েকজনকে ভাড়া করা হয়।
গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পরবর্তী দু’দিন দেশের থানাগুলো ছিলো পুলিশ শূন্য। দেশের অস্থিতিশীল পরিবেশকে আরো অশান্ত করতে নতুন ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে লোক ভাড়া করে নৈরাজ্য, লুটপাট আর ডাকাতির জন্য লোক ভাড়া করে আ’লীগ নেতারা। গত বুধবার মধ্য রাত থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নয়াবাজার, বসিলা, বসিলা কাদিরাবাদ হাউজিং, শেখেরটেক, জিগাতলা, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, শনিরআখড়া, মিরপুরের পল্লবী, মিরপুর ১০, ইসিবি চত্বর এলাকা, উত্তরার ৮-৯, ১০-১১ নম্বর সেক্টর, গাজীপুর ও টঙ্গী কলেজ রোড এলাকায় ডাকাতির চেষ্টা হয়েছে। কয়েকটি বাড়িতে ডাকাতিও হয়েছে। এসব ঘটনায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং রাজশাহী মিলে প্রায় ২৯ জনকে আটক করা হয়েছে কিন্তু দুষ্ট চক্র ফেসবুকে প্রচার করছে মহল্লায় মহল্লায় গণডাকাতি এমনকি একই সময়ে মিরপুরে ৭০টি বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। কোথাও কোন প্রতিকার নেই। এ ধরনের প্রচারে সরকার পতনের দিন থেকেই রাত গভীর হলে আতঙ্ক বাড়ছে রাজধানীবাসীর মাঝে। এতে করে মসজিদে মাইকিং করে ডাকাতের বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। স্থানীয়রা লাঠিসোঁটা নিয়ে এলাকা পাহারা দিচ্ছেন, নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
মিরপুর পল্লবী এলাকায় ডাকাতি করতে গিয়ে আটক হয়েছেন ১৭ জন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের এ কাজে নামিয়েছেন। নেতাদের হয়ে স্থানীয় নাহিদ নামে এক যুবক তাদেরকে টাকা পয়সা দিয়ে ভাড়া করেছেন। নাহিদ বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩০০ যুবক সংগ্রহ করে। আটককৃতদের সেনাবাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হয়। এছাড়া মোহাম্মদপুর এলাকায় পাঁচজনকে অস্ত্রসহ এবং উত্তরা এলাকায় কয়েকজন আটক করেছে এলাকাবাসী।
সুমি নামে একজন জানান, বসিলা মেট্রো হাউজিং, সিটি হাউজিংয়ে ডাকাত ঢুকেছিল। এ সময় তারা মেট্রোর কয়েকটা বাসা থেকে অস্ত্র ধরে নগদ টাকা ও স্বর্ণ নিয়ে যায়। এরপর সেনা সদস্যরা চলে আসায় আবার সিটি হাউজিং এ ঢুকে পড়ে। তবে সিটি হাউজিংয়ের কারো বাসায় ঢুকতে পারেনি। এর আগেই দুই জনকে ধরতে পারেন এলাকার লোকজন।
যারা ডাকাতি করতে এসেছিল বেশিরভাগ টোকাই এবং উঠতি তরুণ। তাদেরকে অস্ত্র এবং টাকা সরবরাহ করে এসব প্ল্যান করে করা হচ্ছে। স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, আটককৃতরা জানিয়েছেন তারা আওয়ামী লীগের নেতাদের নির্দেশে ডাকাতিতে নেমেছেন। যাতে দেশে কেয়ারটেকার সরকার শপথ নিতে না পারে এবং সেই সুযোগে দেশে সেনা শাসন আসে। মানুষের মাঝে আতঙ্ক তৈরিতেই সারা দেশে একযোগে এই ডাকাতি চলছে বলে মনে করছেন তারা। স্থানীয়রা জানান, এলাকায় ডাকাতি হচ্ছে খবর পেয়ে মসজিদের মাইকে সতর্ক করা হয়। পরে লোকজন লাঠিসোঁটা ও যার যা অস্ত্র ছিল তা নিয়েই রাস্তায় বেরিয়ে আসেন এবং তাদের ধাওয়া করেন।
বুধবার রাতে মিরপুরের ইসিবি চত্বরের একটি টাওয়ারে ঢোকে শতাধিক যুবক। তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তারা এলাকার সব গেট বন্ধ করে দেন। এরপর ধাওয়া দিয়ে তাদের ধরে ফেলেন। পরে এলাকাবাসী দু’জনকে আটক করে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেন। তার আগে এলাকাবাসী বেধড়ক গণপিটুনি দেয় তাদের। এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে আনে সেনাবাহিনী।
সেই এলাকার বাসিন্দা মেরিনা মিতু নামে একজন বলেন, আটককৃতরা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার হয়ে টাকার বিনিময়ে এই ডাকাতি, তা-ব করতে আসছে এরা। তারা কালশি বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দা। রাত তিনটার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তাদের এলাকায় ডাকাতি রোধে সতর্ক আছেন, অন্যদেরও নিজ নিজ এলাকায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান তিনি।
ডাকাতির এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে ডাকাত প্রতিরোধ কমিটি গঠন করেছেন। তারা নিজ উদ্যোগে এই কাজটি করছেন। যতক্ষণ না থানায় পুলিশ ফেরে ততক্ষণ তারা নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন না। এলাকাবাসী জানান, দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে ও বিশৃঙ্খলা করতে মানুষ এর মনে ভয় ঢুকিয়ে দেয়ার জন্য আওয়ামী সন্ত্রাসী ও তাদের বাহিনীর সুপরিকল্পিত কাজ। সকলে সাবধান হয়ে প্রতিহত করুন। বিভিন্ন জায়গায় প্রমাণ হইছে যে আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে এসব করছে।
এদিকে বুধবার আইএসপিআর থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জানমাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে। যেকোনো নাশকতামূলক কর্মকা-, হানাহানি এবং প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখীন হলে নিকটস্থ সেনাবাহিনী ক্যাম্পে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
সর্বশেষ আপডেট: ৯ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৪২
পাঠকের মন্তব্য