কোটা বিরোধী আন্দোলনকে সরকার বিরোধী আন্দোলনের রুপ দেয়ার চেষ্টা করছে : ওবায়দুল কাদের

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্সঃ

সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কোন কোন রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক চরিতার্থের জন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্ররোচনা দিচ্ছে বলে অভিযোগ ক্ষমতাশীন দল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের।

তিনি আরো বলেছেন, বিএনপি সহ কয়েকটি দল প্রকাশ্যেই কোটা আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে। কোটা বিরোধী আন্দোলনকে সরকার বিরোধী আন্দোলনের রুপ দেয়ার চেষ্টা করছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম প্রকাশ্যে বলেছেন মুক্তিযোদ্ধা কোটার দরকার নেই। এ থেকে বোঝা যায় বিএনপির মুক্তিযুদ্ধের প্রতি কোন সম্মানবোধ নেই। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এটা মনে করার আর কোন কারণ নেই। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আদালতের নির্দেশ মেনে নিয়ে আবারও নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি এও বলেছেন, আন্দোলনে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ব্যবস্থা নিতে হবে।

কোটা নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সকল প্রকার কর্মসূচি বন্ধ করে আদালতের নির্দেশনা মেনে অবিলম্বে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের আবেগকে পুঁজি কোন মহল যদি দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় তাহলে সরকারকে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে সব কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। সম্প্রতি এক রিট আবেদনে হাই কোর্ট মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করলে নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়। এর পর গত ১লা জুন থেকে কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা বুধবার সকাল থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক আটকে বিক্ষোভ শুরু করে। গতকাল আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সারা দেশে কয়েক জায়গায় সংঘাত হতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির ‘বাংলা ব্লকেড’ নিয়ে সরকারী পক্ষগুলো বলেছে, তারা আদালতের রায়ের দিকে তাঁকিয়ে রয়েছে। আর শিক্ষার্থীদেরও একইভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

কোটা নিয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে গতকাল ওবায়দুল বলেন, ‘কোটা বিরোধী আন্দোলনকে বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনে রুপ দিতে চায়। তাদের সে খায়েশ পূরণ হতে দিবে না আওয়ামী লীগ। কোটা বিরোধী অরাজনৈতিক এই আন্দোলনকে কেউ যদি রাজনৈতিক ফাঁদে ফেলতে চায় তাহলে আমরা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করব। এ নিয়ে সকলকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, কোন কোন অশুভ মহল দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে ব্যাহত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটা নিয়ে দেশের উচ্চ আদালত চার সপ্তাহের স্থিতাদেশ দিয়েছেন। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি উচ্চ আদালতের বিচার প্রক্রিয়া চলমান এবং আদালতের নির্দেশনার প্রতি কোন প্রকার সম্মান প্রদর্শন না করে তথাকথিত বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির নামে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন আহত করার চেষ্টা চলছে। অন্য দিকে কোন কোন রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক চরিতার্থের জন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্ররোচনা দিচ্ছে। বিএনপি সহ কয়েকটি দল প্রকাশ্যেই কোটা আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে। কোটা বিরোধী আন্দোলনকে সরকার বিরোধী আন্দোলনের রুপ দেয়ার চেষ্টা করছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম প্রকাশ্যে বলেছেন মুক্তিযোদ্ধা কোটার দরকার নেই। এ থেকে বোঝা যায় বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের প্রতি কোন সম্মানবোধ নেই। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এটা মনে করার আর কোন কারণ নেই।

ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটা যুক্ত বিসিএসের তুুলনায় কোটামুক্ত বিসিএসে নারীরা পিছিয়ে ৩.৪৩ শতাংশে নেমে এসেছে। একটি বিসিএসে কোটা না থাকায় পুলিশে মাত্র ৪ জন নারী সুযোগ পেয়েছে। ফরেন ক্যাডারে সুযোগ পেয়েছে ২ জন নারী। কোটামুক্ত একটি বিসিএসে ২৪টি জেলার কোনো প্রার্থী চাকরি পায়নি। ৫০ জেলার নারীরা সরকার চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কোটা পদ্ধতি থাকা অবস্থায় সর্বোচ্চ ২৬ ভাগের বেশি নারীরা চাকরি পেয়েছে। কোটা তুলে দেওয়ার পর ১৯ ভাগে নেমে এসেছে।

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ নিয়ে যে সব তথ্য দেওয়া হচ্ছে তা অবাস্তব ও বিজ্ঞানসম্মত নয় উল্লেখ করে কাদের বলেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বিদ্যমান পদ্ধতি মেধায় নিয়োগ হওয়ার কথা শতকরা ৪৪ ভাগ কিন্তু বিভিন্ন কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী না থাকায় ৬৬.২ ভাগ মেধা ভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন কোটায় যারা চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছেন তারা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের একই নিয়মে প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষা দিয়ে সমান যোগ্যতার ভিত্তিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটা পদ্ধতি বাতিলে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কোনো কোনো নিয়োগ পরীক্ষায় একজন প্রার্থীও নিয়োগ লাভের সুযোগ পাননি। তাই বৈচিত্র্যময়, সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে কোটার গুরুত্ব রয়েছে। রাষ্ট্র সর্বজনীন পবিত্র সংবিধানের অধীনেই পরিচালিত হয়।

ক্ষমতাশীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোটা মানেই বৈষম্য নয় বরং বৈষম্য নিরসনে কোটা প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের সম্পূর্ণ রায় আসার পরে সরকার সব জনগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আন্দোলনকারীদের জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে সব প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ করে আদালতের নির্দেশক্রমে অবিলম্বে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সর্বোচ্চ আদালতের বিচার কার্যক্রম পুরোপুরি সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা তারুণ্যের শক্তি ও আবেগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যেহেতু আবেগকে পুঁজি করে যদি দেশে অরাজক পরিস্থিতি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায় তাহলে সরকারকে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

শিক্ষকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো যোগাযোগ হচ্ছে কী না এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বৈঠক করিনি, কিন্তু আমাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই, এমনটি নয়। শিক্ষকদের ব্যাপারটা কোটা থেকে আলাদা বিষয়। আমরা সতর্কভাবে বিষয়টি দেখছি, আমার বিশ্বাস অচিরেই বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, এ্যাড. আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়াসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।

সর্বশেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪, ০২:০০
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও