সরকারি এক কর্মকর্তার ছেলে কোরবানির জন্য ১২ লাখ টাকায় ছাগল কিনবেন-এই খবরে শোরগোল পড়ে গেছে চারদিকে। বুকসমান উঁচু সেই ছাগলের সঙ্গে নিজের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন ইফাত। ৬২ ইঞ্চি উচ্চতার ছাগলটির ওজন ১৭৫ কেজি। এত বড় ছাগল সচরাচর দেখা যায় না। সাদিক অ্যাগ্রো ছাগলটির দাম হেঁকেছিল ১৫ লাখ টাকা। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয় ১২ লাখ টাকায়। এত দামের পেছনে তাদের ব্যাখ্যা ছিল, উন্নত জাত ও বংশমর্যাদা। তবে এক লাখ বুকিং দিলেও ছাগলটি কেনেননি ইফাত। কিন্তু কোরবানির জন্য ১২ লাখ টাকার ছাগল কেনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের শোরগোলের কারণে দুটি নাম অবিচ্ছেদ্যভাবে বহুল আলোচিত মুশফিকুর রহমান ইফাত ও ড. মো. মতিউর রহমান। ইফাত ও তার মাতৃকূল ড. মতিউর রহমানকে তার বাবা হিসেবে দাবি করলেও ইফাতকে নিজের ছেলে বলে স্বীকার করেননি ড. মতিউর। অবশ্য ছাগল ছাড়াও এর আগে ইফাতের ৫২ লাখ টাকা দামের গরু কেনা এবং দামি গাড়ি ব্যবহার নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা চলছে। এই ঘটনায় বাবা-ছেলে হিসেবে ইফাত ও মতিউরের যৌথ একাধিক ছবি ভাইরাল হয়েছে। নেটিজেনরা মতিউর রহমানের সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। আর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বাবা-ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার করেছেন মতিউর রহমান। দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বাঁচতেই ড. মতিউর সম্পর্ক অস্বীকার করছেন বলে মানুষ মনে করছে। তার বিরুদ্ধে সেই প্রশ্ন তোলার সুযোগও আছে। কারণ, এর আগে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে চারবার মতিউরের সম্পদের উৎসের অনুসন্ধানে নেমেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে কোনোবারই কোনো প্রমাণ পায়নি দুদক। কিন্তু ছাগল-কা-ের পর এবার পঞ্চমবারের মতো অনুসন্ধানে নামছে দুদক।
এদিকে এক ছাগলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ড. মো. মতিউর রহমানের এনবিআর’র সদস্য পদ এবং সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদ হারিয়েছেন। এছাড়া নতুন করে আবার অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। অবশ্য ছাগল কা-ের পর শুধু মতিউরই ফাঁসছেন তা নয়; তার নামে-বেনামে এবং স্ত্রী ও সন্তানদের সম্পদের উৎসও খোঁজা হচ্ছে। একের পর এক বেরিয়ে আসছে মতিউর রহমানের অঢেল সম্পদের তথ্য। মতিউর রহমানের ছেলের দামি ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন; মতিউর রহমান ও পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে সম্পত্তি থাকার বিষয়ে উঠে আসছে। এমনকি উঠে এসেছে মতিউরের প্রথম স্ত্রী একটি সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক লায়লা কানিজ লাকীর অঢেল সম্পদের তথ্য। তিনি কীভাবে এত সম্পদের মালিক হয়েছেন, তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
সূত্র মতে, কোরবানি উপলক্ষে ১২ লাখ টাকায় ছাগল কিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত হয়েছেন মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের এক তরুণ। তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ড. মো. মতিউর রহমানের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর ছেলে। তার বাবা মতিউর রহমানের পরিচয় প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় শুরু, যা এখনো থামছে না। অবশ্য আলোচিত ড. মতিউর শুধুমাত্র এনবিআর’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তাই নন; তিনি দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক সোনালী ব্যাংক পিএলসিরও একজন পরিচালকও। ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিন বছরের জন্য তাঁকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তখন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ছিলেন শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। অভিযোগ আছে বড় অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে ওই সময়ে শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ মতিউরকে পরিচালক পদে বসান। আর পরিচালক পদে বসাতে অপর দিক থেকে কলকাঠি নাড়েন বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর এবং তৎকালীন অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার। নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ পুনর্নিয়োগ না পেয়ে গত মাসে অবসরে গেছেন। যদিও মতিউরকে পরিচালক পদে বসানো আবদুর রউফ তালুকদার এখনও স্বপদে বহাল আছেন। সূত্র মতে, মতিউর রহমানের সঙ্গে আবদুর রউফ তালুকদারের পারিবারিক ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। এছাড়া বিতর্কিত দেশের বেসরকারি একটি শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গেও দীর্ঘদিনর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে মতিউরের। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে ওই শিল্পগোষ্ঠীকে অনানুষ্ঠানিকভাবে কর ও ব্যাংকিং বিষয়ে নানা পরামর্শ দিয়ে আসছেন। একই সঙ্গে দুই পরিবার একসঙ্গে বিদেশ সফরও করেছে বলে দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। অপরদিকে গভর্নর এবং সাবেক ব্যাংকিং সচিবের ক্ষমতায় ক্ষমতায়িত হয়ে মতিউর সোনালী ব্যাংকে ঋণ, বদলী ও পদোন্নতীতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সুপারিশ ও গভর্নরের তদবির পর সোনালী ব্যাংকের বোর্ড আর ড. মতিউরকে আটকায়নি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকও সহজেই অনুমোদন দিয়ে দেয়। যদিও সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক ছাগল কা-ের পর মতিউর রহমানের সবকিছু উন্মোচিত হতে থাকলে ব্যাংকটির অন্য পরিচালকেরা বেঁকে বসেন। তারা আর মতিউর রহমানকে বোর্ডে চাইছেন না। এই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটির বোর্ড সভায় দেখা যায়নি মতিউরকে। সরেজমিনে সোনালী ব্যাংকে গিয়ে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ১১টায় বোর্ড সভা শুরু হলেও তিনি এই সভায় আসেননি। এছাড়া সরেজমিনে এনবিআর’র এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত রাজস্ব ভবনের ১১ তলার অফিস কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, তিনি অফিসে আসেননি। তার দপ্তরের কর্মচারীরা জানান, ঈদের পর মতিউর রহমান আর অফিসে আসেননি।
পঞ্চম দফায় অনুসন্ধানে দুদক
ছাগলকা-ে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমানের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য অনুসন্ধানে তিন সদস্যের টিম গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন সংস্থাটির সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন। দুদকের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্ব তিন সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে। গত ৪ জুন দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মইনউদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে কমিশন সভায় এনবিআর সদস্য (শুল্ক ও আবগারি) ড. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়। সূত্র জানায়, দুদকের মহাপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. মোকাম্মেল হক অভিযোগ তুললে অনুসন্ধানে একটি দল গঠন করতে বলা হয়। এর আগে ২০০৪, ২০০৮, ২০১৩ ও ২০২১ সালে মোট চারবার মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করে দুদক। কিন্তু নথিভুক্তির মাধ্যমে এসব অনুসন্ধানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করে দুদক। এর অর্থ হলো-অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। পরে মতিউর রহমানকে নিয়ে কমিশন থেমে যায়।
এনবিআর থেকে সরানো হলো
প্রেসিডেন্টের আদেশক্রমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের উপসচিব মকিমা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারের কর্মকর্তা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মো. মতিউর রহমানকে তার পদ থেকে সরিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে জনস্বার্থে এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সোনালী ব্যাংক বোর্ড থেকেও বাদ
ছাগলকা-ে আলোচিত এনবিআর সদস্য মো. মতিউর রহমানকে সোনালী ব্যাংকের বোর্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী এ তথ্য জানিয়েছেন। গতকাল বোর্ড সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন তিনি। জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে- মতিউর রহমান আর সোনালী ব্যাংকের বোর্ড সভায় আসবেন না। সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের সবাইকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী বলেন, সোনালী ব্যাংকের বোর্ড কোনও পরিচালককে নিয়োগ দিতে পারে না, আবার কাউকে বোর্ড থেকে বাদ দিতেও পারে না। ব্যাংকের মালিক হিসেবে সোনালী ব্যাংকের বোর্ডের পরিচালক নিয়োগ দেয় সরকার। আবার কাউকে বাদ দিতে চাইলে সেটাও করে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আর কখনও মতিউর রহমান আমাদের বোর্ড সভায় আসবেন না।
মতিউরের প্রথম স্ত্রীর সম্পদের পাহাড়
মুশফিকুর রহমান ইফাতের ছাগল কান্ডে বাবা মতিউর রহমানের পরিচয় প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় শুরু, যা এখনো থামছে না। একের পর এক বেরিয়ে আসছে মতিউর রহমানের অঢেল সম্পদের তথ্য। এবার প্রকাশ্যে এসেছে তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকীর সম্পদের পাহাড়ের তথ্য। নামে-বেনামে অঢেল সম্পদ গড়েছেন লায়লা কানিজ। একজন সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হয়ে লায়লা কানিজ লাকী কীভাবে এত সম্পদের মালিক হয়েছেন, তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
লাকী ছিলেন রাজধানীর তিতুমীর সরকারি কলেজের বাংলা বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক। ২০২৩ সালে কলেজ থেকে অবসরে যান। ২০২৩ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান সাদেকুর রহমান মারা গেলে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে উপনির্বাচনে প্রার্থী হন এবং অবৈধ টাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন লায়লা কানিজ। জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির তিনি দুর্যোগ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক। অবৈধ টাকায় তিনি রায়পুরা উপজেলার মরজালে নিজ এলাকায় প্রায় দেড় একর জমিতে ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্ট নামের একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন। তার নির্বাচনী হলফনামা থেকে জানা গেছে, বাৎসরিক আয় বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট-দোকান ও অন্যান্য ভাড়া থেকে ৯ লাখ ৯০ হাজার, কৃষি খাত থেকে ১৮ লাখ, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র-ব্যাংক আমানতের লভ্যাংশ থেকে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫০০, উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্মানি বাবদ ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৭৫, ব্যাংক সুদ থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৩৯ টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার জমা রয়েছে ৩ কোটি ৫৫লাখ টাকা। তার কৃষিজমির পরিমাণ ১৫৪ শতাংশ, তার অকৃষিজমির মধ্যে রয়েছে রাজউকে পাঁচ কাঠা, সাভারে সাড়ে ৮ কাঠা, গাজীপুরে ৫ কাঠা, গাজীপুরের পুবাইলে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ ও ২ দশমিক ৯০ শতাংশ, গাজীপুরের খিলগাঁওয়ে ৫ শতাংশ ও ৩৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, গাজীপুরের বাহাদুরপুরে ২৭ শতাংশ, গাজীপুরের মেঘদুবীতে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ, গাজীপুরের ধোপাপাড়ায় ১৭ শতাংশ, রায়পুরায় ৩৫ শতাংশ, ৩৫ শতাংশ ও ৩৩ শতাংশ, রায়পুরার মরজালে ১৩৩ শতাংশ, সোয়া ৫ শতাংশ, ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ ও ৪৫ শতাংশ, শিবপুরে ২৭ শতাংশ ও ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ, শিবপুরের যোশরে সাড়ে ৪৪ শতাংশ, নাটোরের সিংড়ায় ১ একর ৬৬ শতাংশ। এদিকে, মরজাল বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মতিউর রহমান ও লায়লা কানিজ দম্পতির কয়েক কোটি টাকায় নির্মিত আধুনিক স্থাপত্যের ডুপ্লেক্স বাড়ি। বাড়িটির ভেতরে রাজকীয় সব আসবাবপত্র ও দামি জিনিসপত্র রয়েছে।
ইফাতকে নিয়ে দেশ ছেড়েছেন মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রী
ছাগল-কা-ে আলোচিত-সমালোচিত মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলী দুই সন্তান নিয়ে দেশ ছেড়েছেন। মতিউরের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ও ইরফানকে নিয়ে গত বুধবার মধ্যরাতে মালয়েশিয়া গেছেন শিভলী। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে কুয়ালালামপুর রওনা হন তিনি। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মতিউরের প্রথম স্ত্রীর পরিবারের সঙ্গে দ্বিতীয় স্ত্রীর পরিবারের দ্বন্দ্ব বহুদিনের। ছাগল-কা-ের সুযোগ কাজে লাগান প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ। তিনি স্বামীকে বোঝাতে সক্ষম হন, ইফাতের পরিচয় অস্বীকার করলেই আপাতত ঝামেলা থেকে রক্ষা পাবেন মতিউর। কানিজের কথাতেই ইফাতকে গণমাধ্যমের কাছে নিজের সন্তান হিসেবে অস্বীকার করেন তিনি।
মতিউরের বিরুদ্ধে দুদকে যত অভিযোগ
দুদক সূত্র বলছে, এনবিআরের সদস্য ড. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, দেশে একটি গ্রুপ অব কোম্পানিতে দুই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং কানাডায় বাড়ি, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ রয়েছে।
দুদক বলছে, অভিযোগ অনুসন্ধান করে এ পর্যন্ত মতিউর রহমান, তার দুই স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের নামে রাজধানীতে অন্তত ১৫টি ফ্ল্যাট ও তিনটি বাড়ির সন্ধান পেয়েছে। এগুলোর মধ্যে ধানমন্ডিতে একটি, সেগুনবাগিচায় দুটি, শান্তিনগর টুইন টাওয়ারে একটি, লালমাটিয়ায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি-ব্লকে একটি সাততলা বাড়ি, আই-ব্লকে তার যৌথ মালিকানাধীন ডেভেলপার কোম্পানি জেসিক্সের তত্ত্বাবধানে একটি বহুতল ভবনে অংশ আছে। দুদকের অনুসন্ধানে মতিউর রহমানের মালিকানায় ময়মনসিংহের ভালুকার সিডস্টোর এলাকার পাশে প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে গ্লোবাল ম্যাক্স নামের জুতার কারখানা, রাজধানীর নিকেতনের ৮ নম্বর সড়কে গ্লোবাল ম্যাক্সের প্রধান কার্যালয় এবং চাঁদপুরে একটি গরুর খামার পাওয়া গেছে।
নরসিংদীর রায়পুরার মরজালে ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্টের পরিচালক মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রীর ঘরের দুই সন্তান ফারজানা রহমান ঈপ্সিতা ও আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব। ফারজানা ও আহমেদ তৌফিকুরের নামে গাজীপুরের পুবাইলের খিলগাঁওয়ে রয়েছে আপন ভুবন পিকনিক ও শুটিং স্পট। সোনাগাজীর সোনাপুরে শ্বশুরবাড়িতে রয়েছে বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি। দুদকের সূত্র বলছে, এনবিআরের এই কর্মকর্তার স্ত্রী-সন্তান ছাড়াও শ্যালক, শ্যালিকা, ভাই ও আত্মীয়স্বজনের নামে- বেনামে সম্পদের তথ্য রয়েছে দুদকের কাছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মতিউর রহমানের দুই পরিবার সাতটি গাড়ি ব্যবহার করে। গাড়িগুলো মতিউর রহমানের স্ত্রী, সন্তান ও গ্লোবাল ম্যাক্স প্যাকেজিংয়ের নামে। গ্লোবাল ম্যাক্স প্যাকেজিংয়ের নামে নিবন্ধিত গাড়িটি ব্যবহার করেন শাম্মী আখতার।
সর্বশেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ০১:৩২
পাঠকের মন্তব্য