মাছ ধরতে গেলে তো আধার দিতে হয় : প্রধানমন্ত্রী

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্সঃ

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ রাখা হয়েছে তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমি বলি মাছ ধরতে গেলে তো আধার দিতে হয়, দিতে হয় না? আধার ছাড়া তো মাছ আসবে না। সেই রকম একটা ব্যবস্থা, এটা আসলে আগেও হয়েছে। সেই তত্ত্বাবধায়ক আমলেই শুরু করেছিল, আর পরেও প্রত্যেক সরকারই করে। তিনি আরো বলেন, ঘটনা কিন্তু এটা না, এটা শুধু কালো টাকা না, জিনিসের দাম বেড়েছে, এখন এক কাঠা জমি যার সেই কোটিপতি। কিন্তু সরকারি যে হিসেব, সেই হিসেবে কেউ বেঁচে না, বেশি দামে বেঁচে বা কিছু টাকা উদ্বৃত্ত হয়। এই টাকাটা তারা গুজে রাখে, গুজে যাতে না রাখে সামান্য একটা কিছু দিয়ে যাতে সেই টাকাটা আসল পথে আসুক, জায়গা মত আসুক। তার পরে তো ট্যাক্স দিতেই হবে। গতকাল শুক্রবার বিকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ৬ দফা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ রাখাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ রাখা, বিশেষ করে খাদ্য মূল্য, সেখানে উৎপাদন এবং সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। বৃষ্টির কারণে যেমন আলুর বীজ নষ্ট হয়ে গেছে, তো এই রকম অনেক কিছু আছে। আমরা এখনো উৎপাদনমুখি হলে খাদ্যে কোন দিন অভাব হবে না। তিনি বলেন, “বিশ্ব পরিস্থিতি মাথায় রেখে আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে চলতে হবে। আমাদের দেশে যারা হচ্ছে… কিছু ভালো লাগে না। তাদের ভালো না লাগাই থাক, কান দেয়ার দরকার নাই।”

বাজেটে এবার মৌলিক চাহিদাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা গতকাল বাজেট দিয়েছি, বিএনপির আমলে সবশেষ বাজেট মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছিল ৬৮ হাজার কোটি টাকা, সেখানে আমরা ৭ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা বাজেট প্রস্তাব করেছি। এই বাজেটে এবার কতগুলো মৌলিক চাহিদা…, মানুষের মৌলিক যে অধিকার, সেটাকে নিশ্চিত করার জন্য যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য তার পর দেশীয় শিল্প, সেগুলো এবং সামাজিক নিরাপত্তা, এই গুলোকে সব থেকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “যা মানুষের জীবনটাকে উন্নত করবে, নিশ্চয়তা দেবে। তার কারণ হচ্ছে, আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম, কোভিড ১৯ এর অতিমারি দেখা দিয়েছে, এই অতিমারির ফলে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা হয়েছে, আমরাও সেই মন্দায় পড়ে গেলাম। সারা বিশ্বে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেল। এর পর আসলো ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ, এরপর স্যাংশন পাল্টা স্যাংশন, স্যাংশনের ফলে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।’’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের মানুষকে খাওয়াতে হবে আগে, আমাদের রিজার্ভ কত আছে না আছে, সেটার চেয়ে বেশি দরকার আমার দেশের মানুষের চাহিদাটা পূরণ করা। সে দিকে লক্ষ্য রেখে আমরা পানির মত টাকা খরচ করেছি। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যে বিনা পয়সায় কোভিড ১৯ এর ভ্যাকসিন দিয়েছি, বিনা পয়সায় টেস্ট করিয়েছি, যেটা কোন উন্নত দেশ করে নাই। সেটা করেছি কেন? মানুষ বাঁচাতে। চিকিৎসা বিনা পয়সায়, যে ডাক্তার চিকিৎসা করেছে তাদের প্রতিদিন আলাদা ভাতা দিতে হতো, তারা যে চিকিৎসা দিচ্ছে এভাবে পানির মত টাকা খরচ হয়েছে। তার পর যখন দাম বেড়েছে তখন ২শ’ ডলারের গম ৬শ’ ডলার করেও আমি কিনে নিয়ে এসেছি।

তিনি আরো বলেন, “ঠিক সেইভাবে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে, উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। তার পরেও আমরা যে এবার বাজেট দিতে পারলাম।”

মানুষের চাহিদা পূরণের ভাবনা থেকেই এই বাজেট দেয়া হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “অনেকে বসে বসে হিসাব কষে, আগে এত পার্সেন্ট বেড়েছে এবার কম পার্সেন্ট বাড়লো কেন? তিনি আরো বলেন, “এখন সীমিত ভাবে খুব সংরক্ষিত ভাবেই আমরা এগুতে চাই। যেটা আমাদের দেশের মানুষের কষ্ট না হয়, মানুষের যে চাহিদাটা সেটা যেন পূরণ করতে পারি, সে দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বাজেট করেছি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পারিবারিক কার্ড আমরা দিচ্ছি, কারণ এখন মূল্যস্ফীতি বেশি। সব থেকে অবাক কাণ্ড আমাদের উৎপাদন বেড়েছে, চাল উৎপাদনই আমরা চারগুন বাড়িয়েছি। প্রত্যেকটা জিনিস আমরা উৎপাদন বাড়িয়েছি। মানুষের অর্থিক সচ্ছলতা বেড়েছে, মানুষের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণও বেড়েছে। এখন আর দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে হয় না। কম পক্ষে দুই বেলা খাবার তো পাচ্ছে মানুষ। সেখানে গ্রহণটাও বেড়েছে চাহিদাটাও বেড়েছে। আমরা সাথে সাথে উৎপাদনও বাড়িয়েছি। তিনি আরো বলেন, ‘‘যেহেতু মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, নিম্ন আয়ের মানুষ যারা এই সীমিত আয়ের মানুষ যারা, তাদের জন্য আমরা পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছি। যারা একেবারে হতদরিদ্র তাদের তো একেবারে বিনা পয়সায় খাবার দিচ্ছি। আর সামাজিক নিরাপত্তা তো বিনা পয়সায় দিয়ে যাচ্ছি।’’

বাজেটে কালো টাকা সাদা করা সুযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা প্রশ্ন আসছে, কালো টাকা নিয়ে। কালো টাকা নিয়ে আমি শুনি, অনেকে বলে কালো টাকা? তাহলে আর কেউ টেক্স দিবে না? শেখ হাসিনা আরো বলেন, “ঘটনা কিন্তু এটা না, এটা শুধু কালো টাকা না, জিনিসের দাম বেড়েছে, এখন এক কাঠা জমি যার সেই কোটিপতি। কিন্তু সরকারি যে হিসেব, সেই হিসেবে কেউ বেঁচে না, বেশি দামে বেঁচে বা কিছু টাকা উদ্বৃত্ত হয়। এই টাকাটা তারা গুজে রাখে, গুজে যাতে না রাখে সামান্য একটা কিছু দিয়ে যাতে সেই টাকাটা আসল পথে আসুক, জায়গা মত আসুক। তার পরে তো ট্যাক্স দিতেই হবে।’’ এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “আমি বলি মাছ ধরতে গেলে তো আধার দিতে হয়, দিতে হয় না? আধার ছাড়া তো মাছ আসবে না। সেই রকম একটা ব্যবস্থা, এটা আসলে আগেও হয়েছে। সেই তত্ত্বাবধায়ক আমলেই শুরু করেছিল, আর পরেও প্রত্যেক সরকারই করে। তিনি বলেন, “সেই সুযোগটা আমরাও দিয়েছি, অল্প টেক্স দিয়ে সেই টাকাটা তোমরা ব্যাংকে নিয়ে আসো, সেই ব্যবস্থাটাই হয়েছে। এটা নিয়ে নানা জনে নানা কথা। কিন্তু তার পরেও যেগুলো মানুষের প্রয়োজন সেই ক্ষেত্রে টেক্স কমিয়ে দিয়েছি।”

এ সময় ৬ দফাকে বাঙ্গালী জাতির জন্য ম্যাগনাকার্টা হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা জানেন, এই ছয় দফাই ছিল বাঙ্গালী জাতির জন্য ম্যাগনাকার্টা, এই ছয় দফার মধ্য দিয়েই আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা জয়ের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে হয়েছিল এই ছয় দফার মাধ্যমে।

এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক ৬-দফা দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলীয় প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকবার ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে ঐতিহাসিক এই দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

উল্লেখ্য, ১৯৬৬ সালের এই দিনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে বাঙালিদের ‘ম্যাগনা কার্টা’ বা ‘মুক্তির মহাসনদ’ ৬-দফা দাবির ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানিদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করেন।

সর্বশেষ আপডেট: ৮ জুন ২০২৪, ০২:৫৭
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও