এমপি আনার ঘটনায় নতুন মোড়!

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্সঃ

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের ঘটনায় আবারো সামনে এসেছে অনুমান নির্ভর একটি তথ্য। এ তত্যের ভিত্তিতে শুরু হয়েছে সিআইডির দৌড়ঝাঁপ।

বুধবার কলকাতার গোয়েন্দারা জানিয়েছে, কলকাতার চিনার পার্কের কাছে ব্লু মুন নামে একটি হোটেলে তল্লাশি চালানো হয়েছে। সেই হোটেলের সুয়ারেজ পাইপ ভেঙে বেশ কিছু ব্যবহৃত বস্তু সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়াও উদ্ধার করা হয়েছে দুটি দেশীয় ধারালো অস্ত্র। একই সঙ্গে একটা গুলি উদ্ধারের খবরও পাওয়া গেছে। উদ্ধার করা ছুরিগুলো ১০ সেন্টিমিটার লম্বা। তবে ভারতীয পুলিশ বলছে, উদ্ধার করা ছুরি দুটি আনার খুনে ব্যবহৃত হয়েছিল কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে একমাত্র ফরেনসিক প্রতিবেদনের পরে। ইতিমধ্যে সেগুলো ফরেনসিককে পাঠানো হয়েছে। তবে ওই হোটেলের মালিক এবং অ্যাক্সিস মলের রিলায়েন্স ডিজিটাল শোরুমের ম্যানেজার ও কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

এদিকে, মুম্বাই থেকে ডেকে আনা অভিযুক্ত কসাই জিহাদকে তোলা হয়েছে কলকাতার বারাসাত আদালতে। উভয় দেশের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা দাবি করছে, আনার খুনের পর কসাই জিহাদই শরীর থেকে চামড়া আলাদা করে তাতে হলুদ মেশায়। পরে ৮০ টুকরো করে প্লাষ্টিকের ব্যাগে ভরে ফ্রিজে রাখে। এক সময় সহযোগীরা তা ট্রাভেল ব্যাগে করে পাশ্ববর্তী খালে ফেলে দেয়।

এর আগে আনারের নিখোঁজ সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করতে কলকাতার সঞ্জিভা গার্ডেনের সেপটিক ট্র্যাংক থেকে প্রায় ৪ কেজি মাংস উদ্ধার করে ঢাকা মহানগর ডিবি প্রধান হারুনের নেতৃত্বে থাকা গোয়েন্দা দল। ওই সময় হারুন অর রশিদ দাবি করেছিলেন, উদ্ধার হওয়া মাংসের টুকরোগুলো এমপি হারুনের শরীরের অংশ। তবে তিনি বলেন, তার দাবি পুরোপুরি নিশ্চি হতে ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য আনারের কন্যা কলকাতায় যাবারও প্রস্তুতি সেরে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে ভিসাও হাতে পেয়েছেন। এখন সেখানকার তদন্ত সংশিষ্টদের সংকেত পেলেই আনার কন্যা ডিএনএ টেষ্টের জন্য কলকাতায় যাবেন। যদিও দেশের দুই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা বলেছে, উদ্ধার করা মাংসগুলো প্রায় পঁচে গেছে। যা দিয়ে ডিএনএ পরীক্ষায় সঠিক রিপোট হবে না।

পুলিশ বলেছে, আনার খুন হয়েছেন। তার হত্যার ঘটনায় আরও দুজনের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের একজন তাজ মোহাম্মদ খান ওরফে হাজী, অন্যজন মো. জামাল হোসেন। দুজনেরই বাড়ি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত মো. আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীনের বাড়িও একই এলাকায়। খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন যে ১০ আসামির ব্যাংক হিসাবের তথ্য অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিবি, সেখানে তাদের নাম রয়েছে। ডিবির আবেদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে ওই দুজনসহ ১০ জনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য সরবরাহ করতে নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ। যে ১০ জনের ব্যাংক হিসাব খোঁজা হবে, তাদের মধ্যে পলাতক রয়েছেন পাঁচজন। তারা হলেন মো. শাহীন, মোস্তাফিজুর রহমান, ফয়সাল আলী সাজি, চেলসি চেরি ওরফে আরিয়া, তাজ মোহাম্মদ খান ওরফে হাজী ও মো. জামাল হোসেন। এর মধ্যে তাজ ও জামাল কীভাবে আনার খুনের ঘটনায় জড়িত, সেটি আদালতে দেয়া ডিবির আবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। তবে আবেদনে বলা হয়েছে, খুনের ঘটনার তদন্তে ওই দুজনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে।

ডিবি সূত্র বলছে, সন্দেহভাজন আসামিদের মধ্যে মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল গত ২ মে কলকাতায় যান। তারা দেশে ফিরে আসেন ১৯ মে। দুজনের বর্তমান অবস্থান এখন কোথায়, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দুজনের বাড়ি খুলনার ফুলতলায়। খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী হিসেবে চিহ্নিত শিমুল ভূঁইয়ার বাড়িও একই এলাকায়।

গত ২০ মে শাহীন ঢাকা থেকে প্রথমে দিল্লি যান। সেখান থেকে নেপালের কাঠমান্ডু যান তিনি। এরপর দুবাই হয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন বলে ডিবির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানতে পেরেছে।

উল্লেখ্য, আনার চিকিৎসা করানোর নামে গত ১২ মে ভারতে যান। কলকাতার অদূরে বরাহনগরে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে এক রাত থাকার পর ১৩ মে দুপুর থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি। ১৮ মে সংশ্লিষ্ট থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন তার বন্ধু গোপাল। ২২ মে নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্সের ৫৬-বিইউ ফ্ল্যাটে খুন হওয়ার কথা জানায় সিআিইডি। এ ঘটনায় বাংলাদেশে চারজন ও কলকাতায় দুজন গ্রেফতার হয়েছেন।

সর্বশেষ আপডেট: ৬ জুন ২০২৪, ০২:১৮
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও