চার ইস্যুতে তোলপাড়আজিজ-বেনজির-আনার খুন-কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্সঃ

দেশের মানুষ চরম বিপর্যয়কর অবস্থায় দিন যাপন করছে। ডলার সংকট, মূল্যস্ফীতি, মুদ্রাস্ফীতিতে সব ধরনের পণ্যের দাম হুহু করে বেড়ে যাওয়ায় সংসারে খাবার যোগানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশি-বিদেশি গবেষণা সংস্থাগুলো বলছে বিপুল সংখ্যা পরিবার দিনের ‘খাবার’ কমিয়ে দিয়েছে। চোখ ধাঁধাঁনো উন্নয়নযজ্ঞ বিপন্ন মানুষকে স্বস্তি দিতে পারছে না। মানুষের এই ত্রাহি অবস্থা থেকে উত্তোরণের কোনো পথ খোঁজা হচ্ছে না। দেশের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত লাখ লাখ পরিবারের যখন ‘খাবার যোগার করাই কঠিন’ তখন এসব নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। এসব সংকটকে কর্পেটের নিচে চাপা দিয়ে সামনে চলে এসেছে চারটি ইস্যু। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাংবাদিকের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজির আহমদের সব সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে আদালতের নির্দেশনা এবং ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি এবং এক সময়ের ভয়ঙ্কর অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত, মাদক সম্রাট আনোয়ারুল আজিম আনারের কোলকাতায় খুন। দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন এই চার ইস্যু নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন সরকার কি এসব ইস্যুতে বিব্রত? সরকারের দায়িত্বশীলদের বক্তব্যে সেটা মনে হচ্ছে না। সুধীজনেরা প্রশ্ন তুলেছেন, আনোয়ারুল আজিম আনারের মতো মাদক চোরাচালানি এবং ভয়ঙ্কর অপরাধীকে আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী দল নমিনেশন দেয় কীভাবে? সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করতেই দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আনার কি ছিলেন সেটা বড় কথা নয়, জনপ্রিয়তা দেখে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়।’ আর সাবেক সেনা প্রধান আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের সম্পতি ক্রোক ও ব্যাংকি হিসাব জব্দ ইস্যুতে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করে ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘সাবেক আইজিপি বা সাবেক সেনাপ্রধান যেই হোক না কেন সরকার কাউকে প্রটেকশন দেবে না। সাবেক আইজিপি বা সেনাপ্রধান হলেও তাদের অপরাধের শাস্তি পেতে হবে।’

বেনজীরের সম্পদ জব্দ : গত ৩১ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে সাবেক আইজিপি বেনজীরের ঘরে ‘আলাদীনের চেরাগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র‌্যাবের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বিপুল অবৈধ সম্পদের তথ্য দেয়া হয়। ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, ৩৪ বছর সাত মাসের দীর্ঘ চাকরিজীবনে বেনজীর আহমেদ বেতন-ভাতা বাবদ উত্তোলন করেছেন মোট এক কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকা। প্রতিবেদনে তার নানা অর্থ সম্পদের বিবরণ তুলে ধরা হয়। বলা হয়, বেনজির আহমেদ বর্তমানে বাংলাদেশেই শত শত কোটি টাকার মালিক। এ ঘটনায় সারাদেশে হৈচৈ পড়ে যায়। এ নিয়ে আওয়ামী লীগে একজন এমপি সংসদে বিতর্ক করেন। বিষয়টি নিয়ে দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের নামে থাকা সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে কক্সবাজারের ৯টিসহ গোপালগঞ্জে তার সম্পদ কেনার মোট ৮৩টি দলিল ও ৩৩টি অ্যাকাউন্ট জব্দের আদেশ দেয়া হয়েছে।

গত ২৩ মে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন। দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, জব্দকালীন সময় কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর যাবে না। যেসব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে সেগুলো থেকে টাকা উত্তোলন করা যাবে না।

জানা গেছে, আদালতে দাখিল করা দুদকের আবেদনে বলা হয়- সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ না করা গেলে, যেকোনো সময় তা হস্তান্তর হয়ে যেতে পারে। পরবর্তীতে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না।

শুনানির পর আদালতের দেয়া আদেশে বলা হয়েছে- মানি লন্ডারিং আইন ২০১২-এর ১৪ ধারা এবং দুদক বিধিমালা ২০০৭-এর বিধি ১৮ অনুযায়ী, গোপালগঞ্জে সব স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং ২৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ ৩৩টি আর্থিক লেনদেনকারী হিসাব জব্দের আদেশ দেয়া হলো।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সব স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং ব্যাংক হিসাব জব্দের জন্য আদালতে আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম। শুনানি শেষে আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন আদালত।

আজিজের ওপর নিষেধাজ্ঞা : বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি। ‘গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস ক্ষুণ্ন’ ও ‘দুর্নীতিতে জড়িত’ থাকার কারণ দেখিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ১৯ মে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণভাবে ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য’ বিবেচিত হবেন।

২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর বাংলাদেশের চিফ অব আর্মি স্টাফ ছিলেন জেনারেল আজিজ আহমেদ। তার আগে ২০১২ সাল থেকে চার বছর বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিজিবির নেতৃত্ব দেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কারণে’ যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায় বাংলাদেশের সাবেক জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তার কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের বিশ্বাসকে ক্ষুণ্ন করতে ভূমিকা রেখেছে।’

সরকারি সেবাপ্রাপ্তির সুযোগ সহজতর এবং স্বচ্ছ করা, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডের উন্নয়ন এবং মুদ্রা পাচার ও অন্যান্য অর্থনৈতিক অপরাধের অনুসন্ধান ও বিচার নিশ্চিতে সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার কথা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, আজিজ আহমেদ নিজের ভাইকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করতে গিয়ে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেন এবং এর মধ্য দিয়ে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত হন। তাছাড়া অন্যায়ভাবে সেনাবাহিনীর কাজ পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন। আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপত্র ম্যাথিউ মিলার সংবাদ সম্মেলনে বলছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসন শক্তিশালী করতে’ যুক্তরাষ্ট্রের যে অঙ্গীকার, আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়ার মধ্য দিয়ে তা ‘পুনর্ব্যক্ত’ করা হলো। এর আগে ‘গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের’ অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের এলিট ফোর্সের র‌্যাবের সাবেক-বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া মেলেনি। অবশ্য সাবেক সেনা প্রধান আজিজ আহমেদ দাবি করেছেন তিনি কোনো অপরাধ করেননি। তবে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে ‘পরিণতি’ মেনে নেবেন।

কোলকাতায় এমপি খুন : কয়েকদিন নিখোঁজের পর ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার কোলকাতায খুন হয়েছেন। গত ২২ মে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধাননগরের নিউটাউন এলাকায় সঞ্জিভা গার্ডেন থেকে তার রক্তমাখা কাপড় উদ্ধার করা হয়। তবে তার লাশ এখনও উদ্ধার হয়নি। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বাংলাদেশি কোনো সংসদ সদস্য ভারতে গিয়ে খুন হলেন। সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এই ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

আনোয়ারুল আজিম আনার খুনের ঘটনায় নিয়ে একের পর এক রহস্য সামনে চলে আসছে। এমপি আনারের মৃত্যু নিশ্চিতের পর থেকেই শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। রহস্য দেখা দিয়েছে তার মৃত্যু ঘিরে। উঠছে নানা প্রশ্নও। তবে সব প্রশ্নের ভিড়ে একটি বিষয় সবাই জানতে চায়। কে এই এমপি আনার, তাকে ঘিরে এত আলোচনা কেন? আনোয়ারুল আজিম আনারের পৈতৃক বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের মধুগঞ্জ বাজার এলাকায়। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিনবার আওয়ামী লীগ থেকে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, এক সময়ের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থিদের নিয়ন্ত্রণ করতেন আনার। অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য পাচারের হোতা হিসেবেও পুলিশের খাতায় নাম ছিল তার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী ও চরমপন্থিদের গডফাদার হিসেবে পরিচিতি পান। আনারের বিরুদ্ধে অস্ত্র, বিস্ফোরক, মাদকদ্রব্য ও স্বর্ণ চোরাচালান, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি এবং চরমপন্থিদের আশ্রয় দেয়ার অভিযোগে ৯টির বেশি মামলা ছিল। ইন্টারপোলের ওয়ান্টেড আসামি হিসেবে পুলিশ একবার তাকে আটক করলেও তার ক্যাডাররা পুলিশের ওপর আক্রমণ করে তাকে ছিনিয়ে নিয়েছিল। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে যৌথ বাহিনীর অপারেশনের সময় আত্মগোপনে ছিলেন আনার।

আনার মাদক কারবারি ছিলেন। ভারতের বাগদা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের বাঘাভাঙ্গা সীমান্ত পথে চোরাচালান করতেন তিনি। এরশাদের শাসনামলে ওই সময় কালীগঞ্জ থানাসহ মহেশপুর, কোটচাঁদপুর ও চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থানা পুলিশের সঙ্গে মাসিক চুক্তিতে ‘টোকেন’ তৈরি করে তার বাহিনী। ওই টোকেন দেখালেই প্রশাসনের লোকজন মাদকদ্রব্য বহনকারী গাড়ি ছেড়ে দিত। এই টোকেন বাণিজ্য থেকে আনার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ‘মাদক সম্রাট’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এই মাদক কারবারের মাধ্যমে বিপুল অর্থবিত্তের মালিকও বনে যান। ১৯৯১ সালে আনার ঝিনাইদহের আরেক চোরাকারবারি পরিতোষ ঠাকুরের সঙ্গে মিলে স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। স্বর্ণের বড় বড় চালান রাজধানী থেকে বাঘাডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে প্রতিবেশী দেশে পাচার করতেন তারা। খবরে প্রকাশ, ১৯৯৬ সালে আনার বিএনপি থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে যোগ দেন। মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালানের কারবারের সঙ্গে কালীগঞ্জ পৌরসভার এক কমিশনারের হাত ধরে অস্ত্র চোরাকারবারে জড়ান তিনি। তার অবৈধ অস্ত্রের চালান চরমপন্থি ক্যাডার সামসেল ওরফে রবিনের কাছে বিক্রি হতো। প্রচারণা রয়েছে সরকারের পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ ভারতে আত্মগোপন করার পর তার মাধ্যমে অস্ত্র চোরাকারবার চালিয়ে যান আনার। বাগদা এলাকার মাদক সম্রাট জয়ন্ত কুমার, কার্তিক, গৌতম সাহা ও বনগাঁর দেবদাসের সঙ্গে আনারের মাদকের কারবার ছিল।

২০০৭ সালে চুয়াডাঙ্গার লোকনাথপুর এলাকা থেকে ১২ কেজি ৯৫০ গ্রাম স্বর্ণ আটক করে তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআর। চোরাকারবারিরা নিশ্চিত হয় যে, দর্শনা শ্যামপুরের সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম স্বর্ণগুলো ধরিয়ে দিয়েছে। ওই ঘটনায় টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হন সাইফুল। তিনি নিজেও স্বর্ণ চোরাকারবারিদের সিন্ডিকেটে যুক্ত ছিলেন। ওই হত্যা মামলায় আনারসহ আসামি করা হয় ২৫ জনকে। কুষ্টিয়ার চরমপন্থি নেতা মুকুল, শাহীন রুমী, ঝিনাইদহের চোরাকারবারি পরিতোষ ঠাকুর, আনারসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে পরের বছর আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত আনার ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে প্রকাশে আসেন। অতঃপর ধীরে ধীরে তার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো কমে যেতে শুরু করে। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হলে ক্ষমতার দাপটে বেশিরভাগ মামলা থেকে নিজেকে মুক্ত করেন আনার। আনার হত্যকাণ্ড ও তার অপরাধকর্ম নিয়ে প্রতিদিন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাংবাদিক নিষেধাজ্ঞা : বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ডলার সংকট, রিজার্ভ তলানিতে, ব্যাংকের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, তারল্য সঙ্কট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা, তদারকি ব্যবস্থার ভঙ্গুরতা, বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাপে নীতির ধারাবাহিকতা রাখতে না পারা এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ভাল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ নিয়ে তড়িঘড়ির কারণে অস্থিরতা তখন হঠাৎ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক নিষিদ্ধকরণ নিয়ে অস্থিরতা শুরু হয়। সম্পাদক, সাংবাদিক, রাজনীতিক, অর্থনীতিবিদসহ সর্বস্তরের মানুষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেন। আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা টিআইবি থেকে তীব্র প্রতিবাদ করা হয়। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টচার্য এক সেমিনারে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভিতরে হয়তো কোনো অঘটন ঘটেছে সে কারণে তারা সাংবাদিক প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করে বলেন, ‘বিশ্বের কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিকরা অবাধে প্রবেশ করতে পারেন না।’ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভিতরে কী হচ্ছে তা জনসন্মুখে প্রকাশে দাবি জানান। সাংবাদিকমহল এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এর মধ্যে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশ করে ভারতের একটি গণমাধ্যম। নর্থইস্ট নিউজ নামের এই সংবাদ মাধ্যমের দাবি, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ হ্যাক করে নিয়ে গেছে ভারতীয় হ্যাকাররা। নর্থইস্ট নিউজের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, প্রায় এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ভারতীয় হ্যাকাররা ডিজিটাল হ্যাকাররা কয়েক বিলিয়ন নিয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে।

প্রতিবেদনটিতে আরো দাবি করা হয়েছে, মূলত রিজার্ভ চুরির খবর গোপন করতেই বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিন জন কর্মকর্তা বিষয়টি নর্থইস্ট নিউজের কাছে স্বীকার করেছে বলেও জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। অবশ্য বিষয়টিকে ভুয়া বলে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘এটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া খবর। বর্তমানে ফেডারেল রিজার্ভের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন স্তরের কনফারমেশন ব্যবস্থা রয়েছে। নিয়মিতই রিজার্ভের হিসাব মেলানো হয়।’

অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন অর্থনীতিবিদরা। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা আগেও হয়েছে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে ৩৫টি ভুয়া বার্তার মাধ্যমে আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভের নিউইয়র্ক শাখায় থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে প্রায় ১০০ কোটি ডলার চুরির চেষ্টা চালানো হয়। শেষ পর্যন্ত ১০ কোটির বেশি ডলার চুরি করতে সক্ষম হয় হ্যাকাররা। এই অর্থের একটি অংশ চলে যায় শ্রীলঙ্কায় আর বাকিটা যায় ফিলিপাইনের। চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ডলার উদ্ধার হলেও বাকিটা আর ফেরত পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় আমেরিকার আদালতে একটি মামলা চলমান আছে। এতো বড় ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংকের সে সময়ের গভর্নর ড. আতিউর রহমান ৩৯ দিন গোপন রেখে দিল্লি চলে যান সেমিনারে যোগদান করতে। ফিলিপাইনের একটি গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ করা হলে প্রথমে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হলেও বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে।

সর্বশেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৪, ০৩:০৭
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও