বরগুনা প্রতিনিধি:- করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করার পরপরই বরগুনার আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম দেলোয়ারের বাড়ি লকডাউনের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্ত লকডাউন উপেক্ষা করেও মৃতের জানাযায় অংশ নিয়েছিলেন কয়েক হাজার এলাকাবাসী। শুক্রবার দুপুরে ওই নেতার মেডিকেল রিপোর্টে করোনা পজেটিভ আসার পরপরই মুলত গোটা জেলায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
বৃহষ্পতিবার দুপুরে মৃতের বাড়িতে মৃতদেহ দেখতে আসেন শতশত স্বজনসহ সহস্রাধিক স্থানীয় এলাকাবাসী। অংশগ্রহণ করেছেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনেক রাজনৈতিক নেতাও।
লকডাউন করতে পুরোপুরি ব্যার্থ হয়েছে আমতলী উপজেলা প্রশাসন এমন অভিযোগ স্থানীয় সচেতন মহলের। যদিও শুক্রবার বিকেলে গোটা উপজেলা লকডাউন ঘোষণা করে বরগুনা জেলা প্রশাসন। তবুও এলাকাবাসীর দাবি, জানাযায় অংশ নেয়া সবার হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হোক। এছাড়াও মৃতের ছেলে ফেসবুক পোস্টে সবাইকে নিজ দায়িত্বে নিরাপদ থাকতে আহবান জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন এলাকাবাসী বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা জিএম দেলোয়ার আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার। তিনি স্থানীয়ভাবে অত্যন্ত জনপ্রিয় মানুষ। এসব জেনে শুনেই বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ আওয়ামী লীগ নেতা জিএম দেলোয়ারের মৃত্যুর সাথে সাথে তার নমুনা প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত তাঁর বাড়ি লকডাউন করে দেয়ার নির্দেশ দেন। অথচ সেই লকডাউন উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ নেতা জিএম দেলোয়ারের মৃতদেহ দেখতে সেখানে ভিড় করে শতশত স্বজনসহ সহস্র মানুষ। এমনকি কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতিতে সেখানে অনুষ্ঠিত হয় মরহুমের নামাজে জানযা। এতে মৃত ব্যক্তির দেহ ছাড়াই তার নিকট স্বজনদের মাধ্যমেও জানাযায় অংশগ্রহণকারী জনতার মাঝে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর এর মধ্য দিয়ে পুরো আমতলী উপজেলা তো বটেই, পুরো বরগুনা জেলাই এখন ঝুঁকির মুখে।
তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে, বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ূন শাহিন খান জানান, ‘জিএম দেলোয়ার সাহেব পটুয়াখালী হসপিটালে ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। সেখান থেকে তার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার মহাখালীর ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপিং সাইন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভ-এ পাঠানো হয়েছিল। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তার টেস্ট রিপোর্টটি পাঠানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলাম। শুক্রবার দুপুরে সে রিপোর্ট আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে রিপোর্টে পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভিন বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি লকডাউন কার্য্যকর করতে। তারপরেও বেশ কিছু লোকজন হয়েছে। সীমীত আকারে জানাযা হয়েছে। এখন আমরা পুরো উপজেলা লকডাউন করে দিয়েছি।
এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, আমাদের অফিসাররা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। তারা মাইকিং করেছে। কিন্তু তাদের বাঁধার মুখেও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ অনেকেই সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। এ বিষয়ে এককভাবে উপজেলা প্রশাসনকে দায়ী করা যাবে না। কারণ জনগণ সচেতন না হলে শুধু প্রশাসনের পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় আমতলী সদর ইউনিয়নের লোচা গ্রামের নিজ বাড়িতে করোনা উপস্বর্গ নিয়ে ৭২ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন জিএম দেলোয়ার। এর আগে গত আট- দশ দিন ধরে তিনি জ্বরসহ করোনা উপস্বর্গে ভুগছিলেন।
সর্বশেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২০, ০০:৩২
পাঠকের মন্তব্য