মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পূর্ব গোয়ালবাড়ি এলাকায় বিদ্যুৎ পৃষ্ট দিন মজুর ফয়জুর রহমান সহ পরিবারে ৫ সদস্যের জানাযা শেষে নিজ এলাকায় পাশাপাশি পৃথক ৫টি কবরে দাপন শেষ হয়েছে। তাদের এমন মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। সেহরির পর ঝড় শুরু হলে বিদ্যুৎ চলে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার বিদ্যুৎ এলে বিকট শব্দে ঘড়ে আগুন লেগে যায়। ঘটনাটি ঘটে ২৬ মার্চ মঙ্গলবার সেহরির পরে ৪টা ৫০ মিনিটে। মুহুর্থের মধ্যে ঘরের ভেতর ৫টি তাজা প্রাণ পুড়ে মারা যাওয়ার এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে ।
পুলিশ ও এলাকাবাসি জানান, পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের পূর্ব গোয়াবাড়ি এলাকায় ফয়জুর রহমান পেশায় একজন ঠেলা চালক। এর পাশাপাশি সংসারের টানে তিনি বাড়ির কাছে ইনজাদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরীর কাজ করতেন। পবিবারের ৬ সদস্যসহ ওই টিনের ঘরে বসবাস করতেন তারা। ঘরের উপর দিয়ে উচ্চ ভোল্টেজ ক্ষমতা সম্পন্ন পল্লী বিদ্যুতের লাইন পাড়ি দেয়। সেহরির পরে ঝড়-বৃষ্টি হলে বিদ্যুতের লাইন ছিড়ে ঘরের চালে পরলে আগুন লেগে যায়। মর্মান্তিক মৃত্যু হয় পরিবারের ৫ সদস্যের। গুরুত্বর আহত হয় তাদের এক শিশু।
ঘরের ভেতরে থাকা ফয়জুর রহমান, স্ত্রী শিরিন বেগম, ষোল বছরের বড় মেয়ে সামিয়া, তের বছরের মেঝ মেয়ে সাবিনা ও আট বছরের ছেলে সায়েম আগুনে পুড়ে ঘরের ভেতর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ছয় বছরের মেয়ে সোনিয়াকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রেনে আনে ও ৫ জনের লাশ উদ্ধার এবং ছয় বছরের এক শিশুকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। বিকেল ৪ নিজ এলাকায় নামাজে জানাজা শেষে পাশাপাশি ৫টি কবরে দাপন করা হয়। আপন সন্তান আহত ৬ বছেরের শিশু ছাড়া নিকট আত্মীয় কেউ না থাকলেও এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেননা। তাদের মৃত্যুর পর এলাকার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠে।
ঘটনার পর পুলিশ সুপার মো: মনজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোআর আলম, জুড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা এমএ মোঈদ ফারুক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুসিকান্ত হাজং, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাইন উদ্দিন সহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ সময় পুলিশ সুপার বলেন, এটি একটি মর্মান্তিক ঘটনা। আমার মনে হয় একই পরিবারের এক সাথে ৫ জনের মৃত্যু মৌলভীবাজার জেলায় একটি বড় ঘটনা। এ ঘটনায় পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। থানা পুলিশ ও বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে সচেতনতামূলক সভা করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পাঁচজন নিহতের ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হবে। নিহতদের পরিবারের একটি কন্যা সন্তান বেঁচে আছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মেয়েটিকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।
পূর্বজুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রুয়েল উদ্দিন জানান, নিহত ফয়জুর রহমান একজন বাক প্রতিবন্ধী লোক ছিলেন। তিনি সহ তার পরিবারের পাঁচ জন ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। পল্লী বিদ্যুতের অবহেলার কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। পল্লী বিদ্যুতের আরও ঝুঁকিপূর্ণ লাইন মানুষের বাড়ীর উপর থেকে না সড়ানো হলে এ ধরনের আরো ঘটনা ঘটতে পারে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পল্লি বিদ্যুৎ মৌলভীবাজার কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক এ.বি.এম মিজানুর রহমান বলেন, পাঁচ জন নিহতদের ঘটনায় আমরা শোকাহত। এ ঘটনায় আহত চিকিৎসাধীন শিশুর চিকিৎসায় আমরা পাশে থাকব।
জুড়ী থানার ওসি তদন্ত হুমায়ুন কবির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান নিহতদের লাশ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে এলাকাবাসি জানাযা ও দাপন কাপনের ব্যবস্থা নেন। জুড়ী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে ।
সর্বশেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৪, ০২:৫০
পাঠকের মন্তব্য