রুদ্র রুহান বরুগুনাঃ
আলোচিত ’ ওসির কক্ষে আসামীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনাটি নির্যাতনের হত্যা দাবি করে আসছে নিহতের পরিবার। নিহতের পরিবারের দাবি, পুলিশের দাবিকৃত তিন লাখ টাকা না দেয়ায় শানু হাওলাদারকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে এবং পরবর্তিতে তার মরদেহ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়ে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। এরই অংশ হিসেবে চিকিৎসকেরদর সাথে যোগাযোগ করে ময়না তদন্ত রিপোর্টে ‘আত্মহত্যা’ হিশেবে দেখানোর পাঁয়তারা করছে পুলিশ। এছাড়াও বিষয়টি নিয়ে বাড়বাড়ি না করতে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলেও নিহতের পরিবারের অভিযোগ। মঙ্গলবার বরগুনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নিহতের ছেলে নাসির উদ্দীন শাওন লিখিত বক্তব্যে এসব অভিযোগ করেন। এসময় নিহতের স্ত্রী, তিন ছেলে ও দু’বোনসহ কয়েককজন স্বজন উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেণ নিহতের বড় ছেলে নাসির উদ্দীন শাওন। তিনি বলেন, আমার বাবাকে ধরে আনার পর ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রী তিন লাখ টাকা দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ওসি আবুল বাশারের নেতৃত্বে ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রীসহ বাবাকে নির্মম নির্যাতন করে। এ খবর শোনার পর আমার ছোট ভাই সাকিব ওসি মনোরঞ্জন মিস্ত্রীকে ১০ হাজার দিয়ে আসে। কিন্ত তখনও বাবার সাথে দেখা করতে দেয়া হয়নি। পরেরদিন ভোরে আমার বাবার মৃত্যূ খবর শুনে থানায় ছুটে আসি। এসময় আমাদেরকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তরিঘরি করে পুলিশ মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। আমরা বাঁধা দিয়ে একপ্রকার বাধ্য করে আমার বাবার মরদেহ দেখতে পাই। বাবার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্মম নির্যাতনের চিহ্ন দেখেছি। ওইসময়ই আমরা নিশ্চিত হই আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে পুলিশি নির্যাতনে।
কি ঘটেছিল সেদিন রাতে?
: নিহতের স্ত্রী ঝর্না বেগম বলেন, সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে এগারটার দিকে পুলিশ ঘরের দড়জায় কড়া নাড়ে। জানতে চাইলে বলে ‘আইনের লোক’। আমি দড়জা খুলে দিতেই এরপর আমার মা দরজা খুলে দিলে তারা ঘরে ঢুকে আমার স্বামীর খোঁজ করে। আমার স্বামী রুম থেকে বের হয়ে তাদের সামনে এসে দাঁড়ালে তারা বলে, ‘আপনি শানু হাওলাদার?’ বাবা ‘হ্যাঁ’ বললে তারা বলেন, আপনি আবারও বলে ‘আপনি আইন মানেন তো?’ বাবা হ্যাঁ বললে তারা বলে ‘তাহলে আপনাকে একটু থানায় যেতে হবে। ওসি স্যার যেতে বলেছেন।’ এসময় আমার বাবা পুলিশের কাছে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে কুরআন শরীফ নিয়ে এসে শপথ করে বলেন, আমার তিনটা ছেলে, আমি যদি এ ঘটনার কিছু জেনে থাকি তবে আামার ছেলেদের যেন মৃত্যু হয়। তখন মনোরঞ্জন বলেন, ‘আপনি মিজানুর রহমান হাওলাদারকে চিনেন। মার্ডার মামলার আসামি সে। তার বিষয়ে কিছু তথ্য দিতে হবে থানায় চলেন। এ কথা বলেই মনোরঞ্জন আমার স¦ামীকে টেনে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যায়। এসময় আমাদের ঘরে থাকা একমাত্র ফোনটাও মায়ের কাছ থেকে নিয়ে নেয় তারা।’
যা ঘটেছিল আমতলি থানায়ঃ
গত বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) বরগুনার আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) রুম থেকে হেফাজতে থাকা সন্দেহভাজন আসামি শানু হাওলাদারের (৫২) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ওই থানারই পুলিশ। উদ্ধার হওয়া ওই ব্যক্তির শরীরে নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন থাকলেও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বাসারের (ওসি) দাবি, ‘কোনো নির্যাতন করা হয়নি। সে আত্মহত্যা করেছে।’ তবে ভুক্তভোগী পরিবারের ঘটনার পর থেকেই দাবি করে আসছে, এটি আত্মহত্যা নয় বরং ওসির দাবি করা তিন লাখ টাকা দিতে না পারায় নির্যাতন করে তাকে মেরে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। গত সোমবার (২৩ মার্চ) রাত ১১টার দিকে শানু হাওলাদার (৫২) নামের ওই ব্যক্তিকে একটি হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে বরগুনার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালীর নিজ বাড়ি থেকে ধরে আনে আমতলী থানার তদন্ত ইন্সপেক্টর (ওসি) মনোরঞ্জন মিস্ত্রির নেতৃত্বে থাকা একদল পুলিশ। এরপর টানা তিন দিন পুলিশ হেফাজতে রাখলেও শানু হাওলাদারকে আদালতে সোপর্দ করেননি ইন্সপেক্টর মনোরঞ্জন। এমনকি থানায় নিয়ে আসার পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে দেয়নি।
নিহতের ছেলের বর্ননায় ঘটনাঃ
নিহত শানুর মেজ ছেলে বরগুনা পলিটেকনিক্যালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৪র্থ সেমিস্টারের ছাত্র। তিনি বরগুনাতে থাকেন। সাকিব বলেন, বাবাকে গ্রেপ্তারের রাতে আমি বাসায় ছিলাম না। অনেক রাতে মা পাশের বাড়ি থেকে আমাকে কল দিয়ে বিষয়টি জানায়। পরে সকাল সকাল আমি থানায় যায়। কিন্তু আমাকে থানায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমি দুপুরে ওসি আসার পর থানায় ঢুকে বাবাকে দূর থেকে একটু দেখলাম। বাবা দূর থেকে বললেন তাকে বের করতে ‘কিছু একটা’ করার জন্য। তখন আমি ওসির কাছে গেলাম। তিনি বললেন, ওসি মনোরঞ্জনের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। তখন সে থানায় ছিল না। তাই আমি তাকে কল দিয়ে দেখা করার কথা বলে সে জানায় থানার গেটে আসার জন্য।”গেইটে গিয়ে মনোরঞ্জনের সঙ্গে দেখা করলে তিনি বলেন, ‘বাবাকে বের করতে হলে ৩ লাখ টাকা দিতে হবে। দ্রুত ছুটে গেলাম ওসির কাছে। কিন্তু ওসি বললেন, মনোরঞ্জন যা বলে তা শোনার জন্য। নিরুপায় হয়ে আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে ১০ হাজার টাকা ওসিকে দিলাম। তিনি এ টাকা নিয়ে বললেন, ‘বাকি টাকা আনলে বাবাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। পরে আমাদের চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে গেলাম। তিনিও থানায় গিয়ে কিছু করতে পারলেন না।’সাকিব বলেন,বাবাকে আটকের পরের দিন দুপুরে আমি থানায় গিয়ে খাবার দিয়ে আসি। সন্ধ্যায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের স্মরণাপন্ন হয়ে বাবাকে কেন আটক করা হয়েছে জানতে তার সহযোগীতা চাই। রাত দশটার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম আমায় নিয়ে থানায় যান। বাবার অপরাধ কি সেটি জানতে স্থানীয় নির্বাচিত ইউনিয়ন চেয়ারম্যান থানায় গেলেও বাবার সাথে দেখা করতে দেয়নি পুলিশ। এমনকি তার বিরুদ্ধে কি অপরাধ রয়েছে সে বিষয়টিও ‘জানা নেই’ পুলিশের। পরেরদিন সকাল আটটার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান মুঠোফোনে জনানা, বাবা গুরুতর অসুস্থ্য, তারাতারি সবাইকে নিয়ে থানায় যেতে। আমি তরিঘরি করে থানায় চলে আসি এবং বাবার সাথে দেখা করার জন্য পুলিশকে বলি। কিন্ত পুলিশ থানার ফটক বন্ধ করে রাখে। এসময় ইউপি চেয়ারম্যান আমাদের জানান, বাবা আত্মহত্যা করেছে। এ খবর শোনার পর আমি মুর্ছা যা। পরবির্ত ঘটনার আর কিছু আমার মনে নেই।
শানুর শরীরজুড়ে নির্মম নির্যাতনের চিহ্নঃ
নিহতের বোন জাহানারা বেগম বলেন, অসুস্থ্যতার খবর শুনে আমরা থানায় পৌঁছে ভাইকে দেখতে চাইলে পুলিশ গেট তালাবদ্ধ করে রাখে। পরবর্তিতে পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান ও সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোতাহার মৃধাসহ কয়েকজন থানায় আসলে গেট খুলে দেয় পুলিশ। আমি তাদের সাথে দোতালায় পৌঁছলেও আমাকে গেটে আটকে দেয় পুলিশ। আমি সেখানেই আহাজারি করতে থাকি। কিছুক্ষণ পর খবর পাই আমার ভাই নাকি আত্মহত্যা করেছে। আমি আমার ভাইয়ের মরদেহ দেখতে চাইলেও পুলিশ কিছুতেই দেখাতে রাজি হয়নি। খবর শুনে আমাদের আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয়রা থানায়ঢ জড় হন। এই ফাঁকে পুলিশ মরদেহ গাড়িতে তুলে বরগুনা নেয়ার চেষ্টা করে। আমরা এতে বাঁধা দিয়ে আমার ভাইকে দেখতে চাইলে পুলিশ একপ্রকার বাধ্য হয়ে লাশটি দেখায়। আমি তখন আমার ভাইয়ের শরীরে নির্মম নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পাই। গোটা শরীরে মারের কারণে কালো দাগ ও ফুলা যখম হয়ে যায়। আমি আর দেখতে পারিনি, মাথা ঘুরে পড়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ি।
ইউপি চেয়ারম্যনের বর্ননায় সানুর ঘটনা:
গুলিশাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. নুরুল ইসলাম বলেন, “শানুকে যে সময়ে থানায় ধরে নেওয়া হয়েছে সে সময় আমি ছিলাম ঢাকাতে। এরপর মঙ্গলবার বিকেলে আমি এলাকায় গেলে শানুর ছেলে কান্নাকাটি করে বলল, ‘তার বাবাকে বিনা অপরাধে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।’ এটা শুনে আমি রাতেই থানায় যায়। কিন্তু ওসি কোনভাবেই আমাকে শানুর সঙ্গে দেখা করতে দিলো না। আবার তার অপরাধ কি সে বিষয়েও কোনো কিছু জানাতে পারল না। আমি ওসি কে বলেছিলাম তার বিরুদ্ধে তো কোন অপরাধ নেই, কোন মামলাও নেই। তাহলে তাকে ধরে আনা হয়েছে কেন। জবাবে ওসি বলল, ‘তার থেকে কিছু তথ্য নেওয়ার জন্য আনা হয়েছে। কালকেই ছেড়ে দেওয়া হবে।’ এসব শুনে আমি বাসায় চলে আসি। কিন্তু দুর্ভাগ্য সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুনি শানু নাকি আত্মহত্যা করেছে।”তিনি আরও বলেন, ‘পরে থানায় ছুটে যাই দ্রুত। গিয়ে দেখি ওসির রুমে সে ফ্যানের সঙ্গে রশি গলায় দিয়ে ঝুলছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো পুলিশ হেফাজতে থাকা শানু কিভাবে রশি পেল আর কিভাবে ওসির রুমে গিয়েই বা কিভাবে গলায় দড়ি দিলো?’
খুন হয়েছিলেন সানুর বাবা ও বোনওঃ
নিহতের বোন জাহানারা বেগম বলেন, জমি নিয়ে বিরেধের জেরে ১৯৭৪ সালে বাবা হজরত আলিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ মামলায় আসামী ছিলে হজরত আলীর চাচাত ভাই হোসেন আহমদ গংসহ বেশ কয়েকজন। মামলাটি পরবর্তিতে প্রভাবশালীদের চাপে আপোষে নিষ্পত্তি করতে বাধ্য করা হয়। এরপর বিরোধিয় ওই জমি নিয়ে ফের আদালতে লড়াইয়ে নামেন আমার ফুপু আলেয়া বেগম। ২০০৩ সালে আমার ফুপু আলেয়া বেগমকেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই মামলায় হোসেন আহমেদের ভাই মজিবর হাওলাদার, মজিবরের স্ত্রী’র বড় ভাই হারুন মোল্লাসহ আরো কয়েকজন আসামী ছিলেন। ওই মামলাটি পটুয়াখালী পিবিআইতে প্রিপিয়ার্ড অবস্থায় আছে।
পুলিশের বক্তব্যঃ
সানুর ঘটনার পর পুলিশ কিছুটা ‘নিশ্চুপ’ কেন শানুকে থানায় নেওয়া হলো, কিভাবে তার শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন এলো, সন্দেহভাজন আসামি কি করে ওসির রুমে গেলেন- এসবের কোনো উত্তরই নেই থানা পুলিশের কাছে। ঘটনায় তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ‘তদন্তের স্বার্থে’ এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। ঘটনার দিনই হত্যা না আত্মহত্যা তার কারণ খুঁজতে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. তোফায়েল আহম্মেদকে প্রধান করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বরগুনা সদর) মো. মহব্বত আলী ও সহকারী পুলিশ সুপার (আমতলী-তালতলী সার্কেল) সৈয়দ রবিউল ইসলামকে নিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে সুনির্দিষ্ট কোন সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে না বলা হলেও জরুরি ভিত্তিতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন।
এসপি মারুফ হোসেন বলেন, ‘থানায় লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের জরুরি ভিত্তিতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) আবুল বাসার, তদন্ত ওসি মনোরঞ্জন মিস্ত্রি ও সে সময়ের ডিউটি অফিসার এএসআই আরিফুর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।’ তারা দোষী প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
থানার ভেতরে নিরাপরাধ ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তিনদিন আটকে রাখা এবং স্বজনদের সঙ্গে কোনো রকমের যোগাযোগ করতে না দেওয়া কি দোষের নয় এমন প্রশ্নে এসপি মারুফ বলেন, ‘যেহেতু বিষয়টি তদন্ত চলছে, তাই এ মুহূর্তে এ বিষয়ে আর কিছু বলা সম্ভব নয়।’চার দিন পার হয়ে গেল, তদন্ত শেষ হবে কবে? জবাবে তিনি বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন জরুরি ভিত্তিতে দিতে বলেছি।
তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগঃ
নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে, তদন্ত কমিটিও আত্মহত্যার পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করার চেষ্টা করছেন। এজন্য ভুক্তভোগীদের নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পরিবারটির। নিহত শানু হাওলাদারের কিছু স্থিরচিত্রও এসেছে এ প্রতিবেদকের হাতে। সেই সব ছবিতে দেখা যায়, নিহত শানুর শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের পর কালো দাগ ও ফোলা জখম হয়ে আছে। নিহত শানুর ছেলে সাকিব হাওলাদার অভিযোগ করেছেন, এমন দৃশ্য খালি চোখে স্পষ্ট দেখা যাওয়ার পরও ময়নাতদন্তে ‘পুলিশের কথা মতো’ আত্মহত্যা লেখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার বাবার শরীরে যে পরিমান আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে তাতে ময়নাতদন্ত ছাড়াও বলা যায় এটা নির্যাতন। কিন্তু তারপরও ময়নাতদন্তে নাকি আত্মহত্যা লিখেছে। যদিও হাসপাতাল থেকে আমাদের এ বিষয়ে কেউ কোন তথ্য দিচ্ছে না। জিজ্ঞেস করলে বলে মামলা হলে আদালতে জমা দেবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন।’তিনি আরও বলেন, ‘তবে থানার একটি সোর্সের মাধ্যমে জানতে পেরেছি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে আত্মহত্যা উল্লেখ করা হয়েছে। তাই আমরা বুঝতে পারছি না আমাদের সঙ্গে কি হচ্ছে! একদিকে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বলছে, অন্যদিকে উপর থেকে চাপ দিচ্ছে এ বিষয়ে চুপচাপ থাকতে। আবার তদন্তও করছে পুলিশ। পুলিশ কি পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেবে?’
ঘটনার তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, ‘বিষয়টি এখন তদন্তাধীন। তাই এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।’ তদন্তে নির্যাতনের কোনো প্রমাণ পেয়েছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা তো মেডিকেল রিপোর্টই বলবে আমরা এখনও সেটি পাইনি। তবে যাদের বিরুদ্ধে গাফলতি পাওয়া গেছে তাদের তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে যদি আরও দোষ পাওয়া যায় তাহলে আরও শাস্তি হবে।’তবে তদন্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে স্বজনদের শঙ্কার বিষয়টি তিনি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত তো পুলিশই করবে। অন্য কেউ করলে করুক, আমরা আমাদেরটা করছি।
সিভিল সার্জণের বক্তব্যঃ
’ময়নাতদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা জেলা সিভিল সার্জন হুমায়ুন শাহিন খান বলেন, ‘ময়নাতদন্তেরর প্রতিবেদন থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’নির্যাতনের কোন আলামত পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কথা বলব না কারও সঙ্গে। যা যা পেয়েছি তা লিখে দিয়েছি। দরকার হলে থানা থেকে জেনে নেন।’ এমনিতে করোনা নিয়ে ঝামেলায় আছি বলেই তিনি ফোন কেটে দেন। তবে তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এখনও মেডিকেল রিপোর্ট পাননি।
নিহতের পরিবারের দাবিঃ ঘটনার পর থেকেই নিহতের পরিবার দাবি করে আসছে, টাকা না দেয়ায় সানুকে হত্যা করেছে পুলিশ। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে আত্মহত্যার নাটক সাঁজানো হয়েছে এবং আত্মহত্যা চালিয়ে দেয়ার সব আয়োজন করছে পুলিশ। সানুকে কেন আইন ভঙ্গ করে তিনদিন থানায় আটক রাখা হল, আত্মহত্যাই যদি করে থাকে তবে শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন এল কোথা থেকে এবং রশীই বা কে জোগার করে দিয়েছে এসব প্রশ্ন নিহতের পরিবারের। তাঁেদর দাবি, এ ঘটনাটি সুষ্পষ্ট একটি হত্যাকান্ড এবং আদালত খোলার পর তাঁরা থানায় মামলা করবেন। পরিবারের সদস্যরা সানু হত্যার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।
প্রতিবেদনে উর্লেখিত ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিধিমোতাবেক নয় বলে আপলোড দেয়া হয়নি।
সর্বশেষ আপডেট: ১ এপ্রিল ২০২০, ১১:০৪
পাঠকের মন্তব্য