ইজারা দলিলের শর্ত পরিপন্থি ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর টি গার্ডেন মৌজার ২১ শতক ভূমি একসনা বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে।
ঐ ভূমিতে আদালতের স্থিতাবস্তা বলবৎ থাকা সত্ত্বেও কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শমশেরনগর বিমান বন্দর সড়কের বাসিন্দা মৃত মো. ইন্তাজ আলীর নামে নামজারি করেন। এতে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর টি গার্ডেন মৌজার এসএ খতিয়ান নম্বার ১০২ এর দাগ নম্বর ৮৮৬ শমশেরনগর চা বাগান কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ মেয়াদি ইজারা ও অপরাপর ভূমি ভোগ দখলে রয়েছে। ভূমিসহ বাগানের সাকূল্য ভূমি আদালতের মাধ্যমে দখলপ্রাপ্তে ভিন্ন ভিন্ন মোকদ্দমা পরিচালনা করে আসছে।
চা বাগান কোম্পানী তাদের দীর্ঘ মেয়াদি ইজারা দলিলভূক্ত ভূসম্পদ সুরক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে।
চা বাগানের ওই ভূমি ইজারা দলিলের শর্ত পরিপন্থি এখতিয়ার বহির্ভূত মতে কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) একসনা বন্দোবস্ত প্রদানের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরে দি লংলা (সিলেট) টি কোম্পানী লিমিটেড এর স্বত্ত্বাধীন শমশেরনগর চা বাগান এর ব্যবস্থাপক বাদি হয়ে সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, মৌলভীবাজারে স্বত্ব মামলা (১৫৪/২০২০) দায়ের করেন।
মামলার বিবাদী মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ও কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)। পরবর্তীতে সহকারী জজ আদালত কমলগঞ্জে বদলীকৃত ২০২১ সনে স্বত্ব (নম্বর ৯৩) মামলায় আদালতের আদেশে বলা হয়, ‘এই মামলার দুই নম্বর বিবাদী কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) যাতে নালিশা ভূমি অপর কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ বরাবরে একসনা বা অন্য কোনভাবে বন্দোবস্ত প্রদান পূর্বক হস্তান্তরের কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারেন তদমর্মে দুই নম্বর বিবাদী কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে কেন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দ্বারা বারিত করা হবে না তা অত্র নোটিশ প্রাপ্তির ত্রিশ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়া গেল। ইতবস্যরে নালিশা ভূমিতে উভয় পক্ষকে আপত্তি দাখিল না হওয়া পর্যন্ত স্থিতাবস্তা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়া গেল।’
আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত স্থিতাবস্তা বলবৎ থাকা সত্ত্বেও কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মৃত ইন্তাজ আলীর নামে ১৪২৭ বাংলা হতে ১৪৩০ বাংলা পর্যন্ত ২০২৪ টাকা নবায়ন ফি গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে শমশেরনগর বিমান বন্দর সড়কস্থ মৃত ইন্তাজ আলীর পুত্র রুহুল মুছাল্লিন ভূমির মধ্যাংশে আইন বিরুদ্ধ মতে পাকা দেয়াল বেষ্টিত গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেন।
এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবি শান্তি পদ ঘোষ বলেন, বিজ্ঞ আদালতের আদেশ ও স্থিতাবস্তা থাকার পর নবায়ন ফি গ্রহণ করা ও পুণ: বন্দোবস্ত দেয়ার কোন বিধান নেই। এহেন কার্যক্রম আদালতের ভাবমূর্তি ও প্রদত্ত স্থিতাবস্তা লঙ্ঘন ও দন্ডনীয় অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে শমশেরনগর চা বাগান ব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, আমাদের ভূমির বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। ভূমির উপর যিনি পাকা গৃহ নির্মাণের জন্য দেয়াল তুলেছেন সে বিষয়ে আমরা কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে বিজ্ঞ আইনজীবির মাধ্যমে অবহিত করেছি।
অভিযোগ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রইছ আল রিজুয়ান বলেন, চা বাগান বন্দোবস্ত নিলেও সম্পত্তি সরকারের। সরকার যেকোন সময়ে বন্দোবস্ত বাতিল করে নিতে পারে। তবে আদালতের মামলার জবাব প্রদানের জন্য উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেছেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, সরকারের সম্পত্তি এবং হাটবাজারের স্বার্থে সরকার যেকোন সময়ে বন্দোবস্ত বাতিল করে নিয়ে যেতে পারে। তবে মামলাধীন থাকার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
সর্বশেষ আপডেট: ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ২২:৩৩
পাঠকের মন্তব্য