বিক্রি নিষিদ্ধ না হলে রাস্তায় চলতে বাধা কেন?’ ‘শ্রমিকদের রুটি রোজীকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়ে ব্যাটারি চালিত রিকশা ভ্যান উচ্ছেদ বন্ধ করা’ এসব বক্তব্য ও দাবিসহ প্ল্যাকার্ড ব্যানার নিয়ে মৌলভীবাজার শহরের কয়েকশো রিকশা শ্রমিক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
৩১ জানুয়ারি শহরের চৌমুহনাস্থ কার্যালয় থেকে বিভিন্ন দাবিসম্বলিত প্ল্যাকার্ড সহকারে এক মিছিল শুরু করে চৌমুহনা, সেন্ট্রাল রোড, কুসুমবাগ হয়ে ঢাকা-সিলেট রোড প্রদক্ষিণ করে ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ বন্ধ এবং দ্রব্যমূল্য কমানো, বর্তমান বাজারদরের সমন্বয় করে রিকশা ভাড়া পুণঃনির্ধারণ, রিকশা ও ভ্যান শ্রমিকসহ শ্রমজীবী জনগণের জন্য স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিষপত্রের রেশনিং চালুর দাবিতে মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে এই বিক্ষোভ হয়।
জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনয়িনের সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক দুলাল মিয়ার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রিকশা শ্রমিক ইউনয়িন কালেঙ্গা আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ গিয়াস মিয়া, ঢাকা-বাসস্ট্যান্ড আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন, চাঁদনীঘাট আঞ্চলিক কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সাহেল আহমদ, গোবিন্দশ্রী আঞ্চলিক কমিটর সভাপতি জমিসউদ্দিন সেবক ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, জেলা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ জসিম উদ্দিন।
সভায় বক্তারা বলেন জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রেই লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি ঘটলেও শ্রমিক-কৃষক-জনগণের আয় বাড়েনি। উপরন্তু দরিদ্র জনগণ সহায় সম্বল বিক্রি করে, মহাজন ও এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক কিনে যখন আত্নকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন তখন সরকার কখনো যানজট, কখনো দূর্ঘটনা, কখনো বা বিদ্যুত অপচয়ের অজুহাতে এই বাহনগুলো উচ্ছেদের তৎপরতা চালাচ্ছে। অথচ এখনো বাজারে প্রকাশ্যে ব্যাটারি চালিত রিকশা বিক্রি হচ্ছে অবাধে। শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকার কথা বিবেচনা না করে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত চরম অমানবিক। বর্তমান আধুনিক সমাজে মানুষ হয়ে মানুষকে টেনে নেওয়ার অমানবিক পেশার পরিবর্তে ব্যাটারি/মোটরের সাহায্যে চালিত এই সকল পরিবহণে যেমন চালকের শারিরিক শক্তি কম লাগে; তেমনি অল্প সময়ের মধ্যে যাত্রী সাধারণের কাছে স্বল্প খরচে আরামদায়ক পরিবহণ হিসেবে এই সকল রিকশা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যার কারণে বর্তমানে দেশের অনেক জেলায় এমন কি মৌলভীবাজার জেলার অধিকাংশ উপজেলাতেও ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান অবাধে চলছে, এমনকি পা-চালিত রিকশা প্রায় উঠেই গেছে। তাছাড়া গত ৪ এপ্রিল/২০২২ উচ্চ আদালতের এক রায়ে মহাসড়কে ব্যাটারি চালিত তিন চাকার যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হলেও আঞ্চলিক সড়কে ও শহরের মধ্যে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান চলাচলে কোন নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়নি। সরকারের উচ্চমহল থেকেও স্বীকার করেছেন বিদ্যুতচালিত পরিবহণ জ্বালানি তেলের চেয়ে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব। তাই যেকোন অজুহাতে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ করা অযৌক্তিক।
তাই হাজার হাজার শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকা রক্ষার্থে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করতে হবে। সভায় বক্তারা আরও বলেন গ্রাম্য জোতদার মহাজনের শোষণে জমি-জমা হারিয়ে জীবিকার তাগিদে শহরে রিকশা-ভ্যান চালিয়ে যাত্রী সাধারণের সেবা প্রদানের মাধ্যমে শ্রমিকরা জীবন ও জীবিকা রক্ষার সংগ্রামে লিপ্ত। কিন্ত চাল-ডাল, তেল-লবন-চিনি, মাছ-মাংস, ডিম-দুধ, শাক-সবজিসহ দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কষাঘাতে জর্জরিত শ্রমিকদের জীবন নাভিশ্বাস হয়ে উঠছে। তার উপর বর্তমান দ্রব্যমূল্যের সাথে সমন্বয় করে যথাযথ ভাড়া নির্ধারণ না করায় যাত্রী সাধারণের সাথে ভাড়া নিয়ে বাদানুবাদ লেগেই থাকে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে রিকশা শ্রমিকদের শারিরিক লাঞ্চনার শিকার হতে হয়। তাছাড়া কোন কোন যাত্রী যাত্রা পথে এক মিনিটের কথা বলে রিকশা থামিয়ে সময় ক্ষেপন করলেও সেই অনুপাতে ন্যায্য ভাড়া পরিশোধ করেন না। একশ্রেণির হোমড়া-চোমড়া যাত্রীর জোরপূর্বক রিকশায় উঠা, এক জায়গার কথা বলে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত যাত্রী বহনে বাধ্য করা ইত্যাদি সহ্য করে রিকশা শ্রমিকদের চলতে হয়।
অন্যায়ভাবে মারধোর, হাওয়া ছেড়ে দেওয়াসহ অন্যান্য পরিবহণের শ্রমিক, দোকানদার, পথচারীদের সাথে কোন ঘটনা ঘটলেই ন্যায়-অন্যায় বিচার না করে রিকশা শ্রমিকদের উপর জুলুম নির্যাতন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
বক্তারা বলেন আমাদের দেশের শ্রমিক-কৃষক-জনগণের দুঃখ-দুর্দশা, সমস্যা-সংকটের জন্য দায়ী হচ্ছে প্রচলিত বিদ্যমান বৈষম্যমূলক নয়াউপনিবেশিক-আধাসামন্তবাদী আর্থসামাজিক ব্যবস্থা। জনগণের তিন শত্রু সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা-মুৎসুদ্দি পুঁজিকে উচ্ছেদ করে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সফল করে শ্রমিক-কৃষক-জনতার মুক্তি অর্জিত হতে পারে। অথচ এই সত্যকে আড়াল ও অস্বীকার করে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল শাসক-শোষক গোষ্ঠী এবং তাদের লেজুড় শ্রমিক সংগঠনগুলো বিভক্তি বৃদ্ধি করে জনগণের ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে রিকশা ও ভ্যান শ্রমিকদের দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার পাশাপাশি অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা তথা মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের বাসপোযোগী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য আহবান জানানো হয়।
সভা থেকে ব্যাটারি/মোটর চালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক উচ্ছেদ বন্ধ, রিকশা শ্রমিকদের স্থায়ী স্ট্যান্ড, বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণ ন্যায্য ভাড়ার তালিকা প্রদান, নিত্যপণ্যের উদ্ধগতি রোধ, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা বন্ধ করা, পূর্ণাঙ্গ সার্বজনীন রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবি জানান।
সর্বশেষ আপডেট: ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ২৩:৩৫
পাঠকের মন্তব্য