মৌলভীবাজারে কলেজ ছাত্র রেজাউর করিম ন্ঈাম হত্যাকান্ডের ন্যায়বিচার দাবি করে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মাররক লিপি প্রেরণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারী) দুপুরে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- নিহত কলেজছাত্র নাঈমের বাবা চেরাগ মিয়া, সিলেট সমাজকল্যাণ যুব সংঘের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, মৌলভীবাজার সরকারী কলেজের ছাত্র রাজিব সূত্রধর, সারুফ আহমদ, নাজিম উদ্দিন, সাবুব আহমদ, মীর নিজাম, ডেকোরেটার্স মালিক সমিতির জায়েদ আহমদ, মন্নান আহমদ, শাহিন আহমদ প্রমুখ।
মানববন্ধন শেষে কলেজ ছাত্র রেজাউল করিম নাঈম হত্যার ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বরার স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপি গ্রহণ করেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা নির্মাল্য রায়। ছেলে হত্যার ন্যায়বিচার দাবিতে নিহত কলেজ ছাত্র রেজাউল হক এর পিতা মো. চেরাগ মিয়ার প্রেরিত স্মারকলিপি থেকে জানা যায়, প্রতিবেশী নুরুল ইসলাম, রনি মিয়া, আনোয়ার হোসেন, সোহান মিয়া, ইমন মিয়া, সাইমন ইসলাম, আলামিন মিয়া, সাকিল হোসেন, পারভিন বেগম, জেসি আক্তার ও অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন গত ৭ নভেম্বর রাত আনুমানিক ৭টার দিকে ফেসবুক পোস্ট সংক্রান্ত মিথ্যা অজুহাতে তার বসতগৃহে ঢুকে তার বড় ছেলে মৌলভীবাজার সরকারী কলেজের ছাত্র রেজাউল করিম নাঈমকে দলবেঁধে নির্মমভাবে উপর্যুপরী ছুরিকাঘাত ও লাঠিঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে।
নাঈমকে রক্ষার্থে এগিয়ে আসলে হত্যাকারীরা তাকে ও তার পরিবারের অন্যান্যদেরকে আক্রমনে আহত করে চলে যায়। এরপর আশপাশের লোকজন নাঈমকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন ৮ নভেম্বর ভোর ৫টা ৪৮ মিনিটে সে মৃত্যুবরণ করে।
খবর পেয়ে হত্যাকারীরা পালিয়ে যায়। পরদিন ৯ নভেম্বর তিনি মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলা (নং- ৮, জিআর- ৩৪০) দায়েরের কয়েকদিন পর ৯নং ও ১০নং হত্যাকারী ছাড়া বাকী ৮ হত্যাকারী আদালতে হাজির হয়ে জামিন হলে আদালত সবাইকে জেলহাজতে পাঠান এবং তারা জেলহাজতেই রয়েছে। শুরু থেকেই হত্যাকারীদের স্বজন এবং হিতাকাঙ্খীরা ঘটনা ও মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তাদেরই তৎপড়তায় ৯নং ও ১০নং হত্যাকারী গত ২৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট থেকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিনপ্রাপ্ত হয়।
জামিনপ্রাপ্ত এ ২ জন হত্যাকারীর তৎপড়তাদৃষ্টে তিনি সন্দিহান। তারা ও তাদের স্বজনদের হাতে যেকোন সময় যেকোন স্থানে তিনি বা তার পরিবারের কেউ আক্রান্ত হন কিনা সে আশংকায় পতিত হয়েছেন তিনি। হত্যাকারীরা জামিনে মুক্ত হলে এ আশংকা বহুগুণ বেড়ে যাবে এবং হত্যাকারীদের দ্বারা তার বা তার পরিবারের উপর আবারও কোন অঘটন ঘটাতে পারে বলে তারা আতংকিত। এছাড়াও, অন্য কোন অঘটন ঘটিয়ে নাঈম হত্যাকান্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হত্যাকারীদের পক্ষে তেমন কঠিন নয়। এসব সঙ্গত কারণেই তিনি হত্যাকারীদেরকে আটক রেখে সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবী জানান।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি উল্লেখ করেন- এক চরম বিয়োগান্তক ঘটনার মাধ্যমে আপনি পিতা, মাতা, ভাই, বোন সবাইকে হারিয়েছেন। তাই, কোন বিয়োগান্তক ঘটনায় স্বজন হারানোর ব্যথা কতটুকু কষ্টের তা আপনি আর দশজনের চেয়ে বেশীই বোঝেন। পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ কতটা ভারী তা আপনি অবশ্যই হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন। নির্মমভাবে পরিবারের বড় ছেলেকে হারিয়ে আমি প্রায় জীবন্মৃত অবস্থায় পতিত হয়েছি। সেইসাথে ভূগছি অনিশ্চিত নিরাপত্তাহীনতায়। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে কিছুটা হলেও শান্তি পাবে আমার ক্ষতবিক্ষত বিদগ্ধ আত্না। আমি আমার ছেলে হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার কামনা করছি। তাই, হত্যাকারীদেরকে জেলহাজতে আটক রেখে সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবী জানাচ্ছি এবং এ দাবীতে আপনার বরাবর অত্র স্মারকলিপি প্রদান করছি।
সর্বশেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারী ২০২৪, ০২:১০
পাঠকের মন্তব্য