বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য রফতানির ১ হাজার ১৯৯ কোটি বা প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার অর্থ দেশে ফেরেনি। দেশিয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ৩২ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা (১ ডলার= ১১০ দশমিক ২৫ টাকা)। আর সেবা রফতানির ৯ কোটি ডলার বা ৯৯২ কোটি টাকাও দেশে আসেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য রফতানি বাবদ ৩ কোটি মার্কিন ডলার কম এসেছে। যদিও রফতানি বেড়েছিল ৩৪৮ কোটি ডলার। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) দেশের পণ্য ও সেবা রফতানির পরিসংখ্যান আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে। তাদের তথ্যানুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়। এর মধ্যে ৪ হাজার ৩৫৭ কোটি ডলারের রফতানি আয় দেশে এসেছে বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার মানে ওই অর্থবছরের রফতানির ১ হাজার ১৯৯ কোটি ডলার দেশে আসেনি।
বাংলাদেশের পণ্য রফতানির ৮৪ শতাংশ তৈরি পোশাক থেকে আসে। ইপিবি’র হিসাবে, গত অর্থবছরে ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, তৈরি পোশাক রফতানি থেকে গত অর্থবছরে ৩ হাজার ৬৯৫ কোটি ডলার দেশে এসেছে। তার মানে গত অর্থবছরে তৈরি পোশাক রফতানির ১ হাজার ৪ কোটি ডলার গত জুন পর্যন্ত দেশে আসেনি। একইভাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯১ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হলেও দেশে এসেছে ৯১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ১২২ কোটি ডলারের রফতানির মধ্যে দেশে ফিরেছে ১৩১ কোটি ডলার। আবার ১১০ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রফতানি হলেও দেশে এসেছে ৭৩ কোটি ডলার।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরে ৭৪৯ কোটি ডলারের সেবা রফতানি হয়। এর মধ্যে ৭৪০ কোটি ডলার দেশে এসেছে। অর্থাৎ সেবা খাতের রফতানির ৯ কোটি ডলার দেশে আসেনি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, আমরা আগেও বলেছি, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবির হিসাবের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ব্যাংকের মাধ্যমে রফতানির অর্থ যতটুকু আসে, বাংলাদেশ ব্যাংক ততটুকু হিসাব করে। অন্যদিকে ইপিবি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড), শর্ট শিপমেন্ট, ডিসকাউন্টসহ বিভিন্ন হিসাব যুক্ত করে পরিসংখ্যান দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবির পরিসংখ্যানের পার্থক্য ব্যাখ্যা করতে একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি কাজ করছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেলে অনেক কিছু পরিষ্কার হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মেজবাউল হক বলেন, পণ্য রফতানি আয় অনেক ক্ষেত্রে পরেও আসে। পুনরায় রফতানির মতো ঘটনাও ঘটে। অন্যদিকে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমরা বেশ কয়েক মাস ধরে বলে আসছি, ইপিবির পণ্য রফতানির পরিসংখ্যান নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। অন্যদিকে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককেও অনেক দিন ধরে বলছি, ১২০ দিনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারা রফতানি আয় আনছে না তা প্রকাশ করতে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের কোনো তথ্য দেয়নি। ফলে গত অর্থবছরে তৈরি পোশাক রফতানিতে ১০ বিলিয়ন ডলার কেন এল না সেটি ব্যাখ্যা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
সর্বশেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:৫০
পাঠকের মন্তব্য