মৌলভীবাজার জেলা কারাগারের অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে দাপটের সহিত। বন্দীদের অভিযোগের যেন শেষ নেই। অনিয়ম এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে,মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে বিরুদ্ধে সিট বাণিজ্য,ওয়ার্ড বাণিজ্য,মোবাইল কল বাণিজ্য, সাক্ষাৎ বাণিজ্য ও বন্দীদের খাবার চড়া দামে কেন্টিনে বিক্রিসহ নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন জেলা কারাগারের কর্মকর্তাসহ কারারক্ষীরা।
কারাগার থেকে জামিনে বের হওয়া শয়ন তাঁতী (শিক্ষক),রিপন রায় (জনপ্রতিনিধি), নামের দুই ব্যক্তি জানান, কারাগারে হাসপাতালের বেড পেতে হলে অসুস্থ হওয়া জরুরী নয়। কোন নিয়ম ও বিধি অনুসরনেরও প্রয়োজন নেই। প্রতিমাসে ৬ হাজার টাকা দিলেই সুস্থ বন্দীদের দিয়ে দেয়া হয় কারা হসপিটালের বেড। আর অসুস্থ বন্দীরা কম্বল বিছিয়ে থাকেন মেঝেতে। কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোন রোগী যদি সাহস করে মুখ খোলে তাহলে তাদের উপর চলে নির্যাতন। এভাবে ১০-১২ জনের অধিক প্রভাবশালীদের মাসের পর মাস মেডিকেলে রেখে সিট বাণিজ্যের মাধ্যমে কারা কর্তৃপক্ষ প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও জানান তারা।
আরোও জানান তারা, শুধু তাই নয় কারাগারের সরকারী খাবার নিম্নমানে হওয়াতে অনেকই এমন খাবার খেতে নারাজ। টাকা হলেও মিলে ভিআইপি খাওয়া দাওয়ারও রাজকীয় ভাবে। কারা ফটকে দায়িত্বরত কারারক্ষীর সহযোগিতায় বাহির থেকে মাছ, মাংস,ডিম, ফল ও সবজি কিনে এনে দুই বেলা বিক্রি হয় ডায়েড নামের খাবার। বিক্রি হয় ১টি ডিম ৭০ টাকা,১পিচ পোনা মাছ ১০০-১২০ টাকায়,সবজি ৬০ টাকা। চৌখার মাধ্যমে বন্দীদের দিয়ে রান্না করে সরবরাহ করা হয় এসব ডায়েড নামীয় খাবার বন্দীদের কাছে। ডায়েড বিক্রি,সিট বানিজ্যের ব্যাপারে সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন কারাগারের জেল সুপার মোঃ মুজিবুর রহমান মজুমদার।
সদ্য নাশকতার মামলায় হাজতে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন্দির পিতা জানান, তার ছেলে প্রায় ১ মাস ধরে একটি মামলায় কারাগারে রয়েছে। ছেলের প্রতিমাসের চাহিদা মেটাতে নগদ টাকা প্রয়োজন হলে কারাগার কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিকাশে টাকা পাঠান তিনি। সেক্ষেত্রে বিকাশে প্রতি হাজারে কারা কর্তৃপক্ষকে কমিশন দিতে হয় ২’শ টাকা। অর্থাৎ ১ হাজার টাকা তার বন্দী ছেলের জন্য পাঠালে সে পায় ৮শ টাকা। সপ্তাহে একদিন সাক্ষাৎ নিয়ম থাকলেও প্রতিদিন ৫শত টাকার বিনিময়ে করা যায় সাক্ষাৎ। প্রতিদিন এই ভাবেই বন্দীর স্বজনদের কাছ থেকে কারাগারের কর্তৃপক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায় বন্দীদের দেখতে আসা স্বজনদের কাছ থেকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কারারক্ষী জানান, কারাগারের ক্যান্টিনে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ টাকায় বন্দিদের কাছে খাবার বিক্রি করে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন কারাগারের কর্তৃপক্ষ। বন্দীদের বরাদ্দকৃত খাবার পরিমাণে কম দিয়ে গুদামে বোঝাই করে পূর্ণরায় দেখানো হয় বিল ভাউচার। বন্দীদের তৈল,সাবান ক্যান্টিনে নিয়ে বিক্রি করে বাহির থেকে বানিয়ে আনা হয় কেন্টিনের নামে বিল ভাইচার। আর এসব কাজ করেন অসীম পাল,ও কিবরিয়া নামের দুই কারারক্ষী তাদের মাধ্যমেই বিল ভাউচার সংগ্রহ করে ক্যান্টিনের নামে ক্রয় দেখানো হয় পণ্যগুলোর। বন্দীদের প্রতিটি পণ্য কিনতে হয় বাজার মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি দাম দিয়ে। এ ছাড়াও তাদের কারা ক্যান্টিনের বিক্রি বাড়ানোর জন্য সরকারি খাবারের নীতিমালার কোন তোয়াক্কা না করে বন্দীদের দেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের খাবার। যা খাওয়ার উপযোগী নয় বলেও জানান অনেকেই। কিনেই যদি খেতে হয় সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে দুপুর ও রাতের খাবার মাছ,মাংস,ডিম তাকলে বরাদ্দের সরকারী খাবার যায় কোথায়? এমন প্রশ্ন অনেকের মাঝে বিরাজ করছে!
আদালতে হাজিরা দিতে আসা কয়েকজন আসামী জানান, কারাগার থেকে ৭ দিন পরপর ফোনে স্বজনদের সাথে কথা বলার নিয়ম থাকলেও টাকার বিনিময়ে প্রতিদিন কথা বলার সুযোগ রয়েছে কারাগারের কর্তৃপক্ষের কাছে। কারাগারে বন্দী আসামীরা জানান, কারাগারের টেলিফোন অবৈধভাবে লিজ দেওয়া হয়েছে ইয়াবা কারবারিদের কাছে। আর এসব দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মাদকের অভিযোগে চাকুরিচ্যুত হয়ে চাকুরী ফিরে পাওয়া কারারক্ষী ইকবাল হাতে। গেইটে দাঁড়িয়ে স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ এর জন্য আসা দর্শনার্থীদের কাছ থেকে নিয়ম ভেঙ্গেও টাকা হাতিয়েও নিচ্ছেন এই কারারক্ষী ইকবাল। মৌলভীবাজার জেলা কারাগারের এমন অনিময় দুর্নীতির নিয়মের আমুল পরিবর্তন করছেন সদ্য যোগদানকারী জেল সুপার মোঃ মুজিবুর রহমান মজুমদার।
এ বিষয়ে সিলেট বিভাগীয় কারা উপ মহাপরিদর্শক মোঃ ছগির মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,বিষয়টি দুঃখজনক এব্যাপারে খতিয়ে দেখবো। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার মোঃ জুবাইর হোসেন এর মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে (ভারপ্রাপ্ত) জেলার হিসেবে যোগদান করেছে ওনার সাথে এব্যাপারে কথা বলুন।
সর্বশেষ আপডেট: ৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:১৮
পাঠকের মন্তব্য