আচরণবিধি ভঙের প্রশ্ন করতেই সদলবলে সাংবাদিকদের ওপর হামলে পড়েন বিতর্কিত এই আওয়ামী লীগ নেতা এবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সাংবাদিক পেটালেন আলোচিত-সমালোচিত সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করতেই সদলবলে সাংবাদিকদের উপর হামলে পড়েন এই আওয়ামী লীগ নেতা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এমপি নিজেই এক সাংবাদিককে ঘুষি মারেন। এরপর তার ক্যামেরা ভাঙেন।
এর আগে ১০ জন নেতাকর্মীকে নিয়ে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান। কক্ষের বাইরে তখনো আরো ১০ থেকে ১২ জনের মতো নেতাকর্মী দাঁড়িয়ে ছিলেন। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বের হওয়ার পর আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে কি না, এমন প্রশ্ন করলে মোস্তাফিজুর রহমান সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্নকারী ইনডিপেনডেন্ট টিভির সাংবাদিক রাকিব উদ্দিনের দিকে তেড়ে যান এবং কিল-ঘুষিসহ মারধর করেন। ঘটনার পুরো সময় এমপি অশ্রাব্য ভাষায় সাংবাদিকদের গালাগাল দিতে থাকেন।
প্রকাশ্যে সংসদ সদস্যের এমন আচরণে হতবাক হয়ে যান সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যমের কর্মীরা। এ সময় মোস্তাফিজের সঙ্গে থাকা লোকজনও সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন। তারা বিভিন্ন গণমাধ্যমের ক্যামেরা ও ট্রাইপড ধাক্কা মেরে ফেলে ভেঙে দেন। হামলায় আহতরা হলেন- ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির রিপোর্টার রাকিব উদ্দিন, ক্যামেরাপারসন তারাচরণ দাশগুপ্ত, চ্যানেল আইয়ের ক্যামেরাপারসন মোহাম্মদ সোলায়মান, আরটিভির ক্যামেরাপারসন এমরাউল কায়েস মিঠু ও দীপ্ত টিভির ক্যামেরাপারসন সাইমুন আল মুরাদ। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা বলেন, নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শেষে মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়ে প্রশ্ন করেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির স্টাফ রিপোর্টার রাকিব উদ্দিন। প্রশ্নটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তেড়ে গিয়ে তাকে ঘুষি মারেন। এক পর্যায়ে ক্যামেরা ট্রাইপড ও বুম ছুড়ে ফেলে দেন। পরে সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করলে এমপির সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরাও সাংবাদিকদের সঙ্গে হাতাহাতিতে লিপ্ত হন। পরে এমপি দ্রুত গাড়িতে উঠে পালিয়ে যান। এ সময় সাংবাদিকরা গাড়ির গতিরোধ করে তার বক্তব্য নিতে চাইলে সেখানেও এমপির দলবল সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দোতলা থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের টেনেহিঁচড়ে নিচতলা পর্যন্ত নিয়ে যান মোস্তাফিজুর রহমান ও তার কর্মীরা। ক্ষুব্ধ ও হতবিহ্বল সাংবাদিকেরা তৎক্ষণাৎ জেলা প্রশাসক ও এ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় সাংবাদিকেরা বলেন, একজন প্রার্থী এভাবে দলবল নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে। সে বিষয়ে প্রশ্ন করায় তিনি সাংবাদিকদের মারধর করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি তিনি দেখবেন এবং ব্যবস্থা নেবেন।
এ ঘটনার পর বেলা ১টায় সাংবাদিকেরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচে আদালত ভবনের চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও তদন্ত দাবি করেছেন। এর আগেও অস্ত্র হাতে মিছিল করে সমালোচিত হয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। বিগত ২০১৬ সালে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর করেন তিনি। এ ছাড়া সাংবাদিককে ফোন করে মোস্তাফিজুর রহমানের গালিগালাজের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে ‘অশালীন’ মন্তব্যে ভিডিও ভাইরাল হওয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য, তার বিরুদ্ধে মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা, বাঁশখালীতে নিজ দলের বিরোধী নেতা-কর্মীদের দমনপীড়নসহ নানা কারণে তিনি বারবার গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন।
সর্বশেষ আপডেট: ১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:০০
পাঠকের মন্তব্য