মৌলভীবাজার জেলার উপজেলা বড়লেখায় আগর-আতরের জেলা বলা হয়। এই শিল্প থেকেই সরকার বছরে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। গ্রামীণ রাস্তার দুপাশে সারি সারি আগরগাছ। সচ্ছলতার ছাপ রয়েছে ঘরবাড়ির চেহারায়। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই গড়ে উঠেছে কারখানা। গ্রামের পথ ধরে হাঁটলেই নাকে আসবে আগর-আতরের সুঘ্রাণ। বাড়ির উঠানের এক পাশে ফালি ফালি করে কাটা হচ্ছে আগরগাছ, আরেক পাশে চলছে কাটা টুকরো থেকে পেরেক খোলার কাজ। বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নে প্রায় বড়লেখায় ২৫০/৩০০ ছোট ও মাঝারি আগর-আতর কারখানা গড়ে উঠেছে।
তারপর এই গাছের মধ্যে ইনভেস্ট করি,৩/৪বছরের মধ্যে গাছগুলো কেটে এনে শ্রমিকদের দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করি, অনেক শ্রমিক প্রয়োজন হয়। এদিকে দেশের পাশাপাশি বিশ্ববাজারেও দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে । ২০১৩ সালে তো প্রধানমন্ত্রী বড়লেখায় এসে শিল্প ঘোষণা করেন, কিন্তু সেইভাবে তো এখন শিল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। ২০১৩ সালের আগে তো আমরা কোনো অনুদান পাইনি, প্রধানমন্ত্রী শিল্প ঘোষণার পর আমরা ১০০০ ডলার আনছি, এর আগে তো আমরা ১০০ ডলারও লিগ্যাল ভাবে আসছে না,এখন প্রতি মাসে নাইলে ২০০/৪০০ কোটি টাকা আসছে বাংলাদেশে। গ্যাসের বিলের কারণে বা সরকার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না এই কারণে আগর আতর কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এখন সরকার যদি আমাদের সাহায্য করে, আমাদের জন্য উদ্যোগ নেয় তবে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।
পার মেগাওয়াট ৩০ টাকা গ্যাস বিল দিযে পোষায় না গ্যাসের ক্ষেত্রে আমরা বাণিজ্যিক নামধারী শিল্প এটাই আমাদের দূর্ভাগ্য। বর্তমানে হরতাল অবরোধের কারণে গাড়ি যাচ্ছে না, একারণে অনেক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। আতরের দাম তো বৃদ্ধি পায় না,১০বছর আগে যে দাম ছিল সেরকমই আছে, বর্তমানে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে আগের মতো মুনাফা আসে না, অনেক কারখানা এখন বন্ধের পথে।
কয়েকজন শ্রমিকরা বলেন প্রথমে ছল্লা করি,করিয়া পরে টুকরা করি,পরে এগুলা বালতি হিসেবে বিক্রি করি, ১০০ টাকা করে ১ বালতি । এক বস্তায় ২০ কেজি দরে,২০কেজিতে হয় ৫ বালতি তো ৫০০ টাকা দেন আমরারে।তারা নিয়া অন্য দামে বিক্রি করেন, সারা দিনে আমরা ২/৩ বালতি কাটতে পারি।সকাল ৯ টা থাকি ৪টা পর্যন্ত আগরের কাজ করি,যে পরিমাণ কাটতে পারি কোনো দিন বেশি কোনো দিন কম কাটি,রোজ ৩৫০ টাকা করে পাই।
আতরের চা বাগান মালিক এমদাদুল হক বলেন প্রথমতো আমরা গাছটা ফ্যাক্টোরিতে নিয়ে আসি,তারপর আমাদের শ্রমিকদের দিয়ে গাছের সাদা অংশ ও কালো অংশ টা আলাদা করে ফেলি। দুবাই,কাতার, কুয়েত, সৌদি,বাহরাইন,ভারত এসব অঞ্চলে যায়। আতরের ব্যবসায়ী আব্দুল রহমান শামসু জানান আমার পিছনে যে ঘরটা দেখা যাচ্ছে আগর আতরের ফ্যাক্টোরি, বর্তমানে গ্যাসের বিল যে পরিমাণে বাড়ছে, আমরা গ্যাসের বিল দিয়া মুনাফা করতে গিয়া বড় কষ্ট হয়। আমরা পারি না,তার কারণে আমরার অনেক ক্ষতি হই যায়,ক্ষতির কারণে এই ফ্যাক্টোরিটা বন্ধ করে রাখছি।
গ্যাসের বিল অতিরিক্ত হয়ে গেছে, পণ্যের দাম কম,গ্যাসের দাম বেশি,আতর যেগুলো বিক্রি করি, দামে বিক্রি করতে পরছি না,কমে বিক্রি করতে হচ্ছে,কমে বিক্রির কারণে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে,আতর দামে বিক্রি করতে পারলে আমরা লাভবান হতে পারতাম। দীর্ঘ ১৫/২০ ধরে আগরের ব্যবসা করে আসছি। বর্তমানে আমরা আগর ব্যবসায়ীরা আসলে নামমাত্র কিন্তু,আগর ব্যবসা বর্তমানে বন্ধ হওয়ার উপক্রম, কারণ আগর ব্যবসা বিশেষ করে গ্যাস বিল আমরা জালালাবাদে ৪ /৫ ধাপে বর্ধিত করে আমরা ৩/৪ গুণ গ্যাস বিল দিতেছি।
আগর-আতর ম্যানুফেকচারার এন্ড এক্সপোর্টার এসোসিয়েশন সভাপতি আনসারুল হক জানান মৌলভীবাজার থেকে ঢাকায় মাল পাঠাতে হয়। বর্তমানে হরতালের কারণে আমাদের এক্সপোর্ট মাল গুলো যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। অনেক ঝুঁকি নিযে এই পণ্যগুলো পাঠাতে হচ্ছে। গ্যাসের দাম আগে ছিল ১০ টাকা আর এখন ৩০ টাকা অর্থাৎ দুই তৃতীয়াংশ বাড়ছে, এজন্য অনেক কারখানা বন্ধ থাকে, উৎপাদন কম হচ্ছে, আর গ্যাস নতুন সংযোগও দিচ্ছে না,যার কারণে কারখানাও বাড়ছে না, কারখানা না বাড়ার কারণে ব্যবসায় বাড়ছে না। ব্যবসায় বাড়াতে হলে কারখানা বাড়াতে হবে ,তার জন্য গ্যাস থাকতে হবে।
সর্বশেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ০১:৩৩
পাঠকের মন্তব্য