দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন বিক্রির প্রথম দিনে ১,০৭৪টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ। যার মধ্যে সরাসরি ১,০৬০টি এবং অনলাইনে ১৪টি দলীয় মনোনয়ন বিক্রি করা হয়েছে। এতে দলটির আয় হয়েছে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। গতকাল সকালে দলের ২৩ বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ওই মনোনয়ন ফরম বিক্রির উদ্বোধন করেন দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সকলের জন্য মনোনয়ন ফরম কেনা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়ন বিক্রির প্রথম দিনে সর্বোচ্চ ফরম বিক্রি হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগ থেকে ২১৪ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফরম বিক্রি হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগ থেকে ২০১ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া রাজশাহী বিভাগ থেকে ১৭৬ জন, খুলনা বিভাগ থেকে ১২৫ জন, রংপুর বিভাগ থেকে ১০৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে ১০৫ জন, বরিশাল বিভাগ থেকে ৭৫ জন এবং সিলেট বিভাগ থেকে ৫৫ জন নেতা আওয়ামী লীগের দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া অনলাইনে বিভিন্ন বিভাগ থেকে ১৪টি মনোনয়ন ফরম কিনেছেন নেতারা। এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরমের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা।
এর আগে দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শনিবার (১৮ নভেম্বর) থেকে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) পর্যন্ত (প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা) দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেয়া যাবে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী প্রার্থীদের ২৩ বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সুনির্দিষ্ট বুথ থেকে দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে হবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ এবং তৃতীয় তলায় রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় সব বিভাগের মনোনয়নপত্র জমা নেয়া হবে। আবেদনপত্র সংগ্রহের সময় অবশ্যই প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সঙ্গে আনতে হবে এবং ফটোকপির ওপর মুঠোফোন নম্বর, বর্তমান সাংগঠনিক পরিচয়সহ তিনটি পদ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। সেখানেই মোট বিভাগ হিসেবে ১০টি বুথে দলীয় মনোনয়ন বিক্রি করা হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ২টি করে ৪টি বুথ রাখা হয়, এছাড়া বাকি ৬টি বিভাগের জন্য একটি করে মোট ৬টি বুথ রাখা হয়েছে।
এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র বিক্রি করা হচ্ছে দলের ২৩ বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সেখানেই দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রির উদ্বোধন করে শেখ হাসিনার পক্ষে গোপালগঞ্জ-৩ আসনে কেনা হয়। শেখ হাসিনার পক্ষে গোপালগঞ্জ-৩ আসনের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহমুদ আলী খান ও সাধারণ সম্পাদক বিএম সাহাবউদ্দিন আজম।
দুপুরের দিকে অতিরিক্ত লোকসমাগম ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। তবে দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কেউই তা মানেননি। এতে করে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালের সামনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কর্মী-সমর্থকদের প্রচণ্ড ভিড় তৈরি হয়। এ পরিস্থিতিতে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের মূল ফটকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কার্যালয়ের ভেতর থেকে মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়, শৃঙ্খলা না ফিরলে মনোনয়নপত্র বিক্রি করা হবে না। কিন্তু এরপরও ওই পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন হতে দেখা যায় নি।
সরেজমিন দেখা যায়, শত শত নেতা-কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে মিছিল করে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দিকে আসছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তাঁদের কারো কারো অনুসারীরা একই রঙের টি-শার্ট পরেন। অনেকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্লাকার্ড নিয়ে আসেন। অনেকে আবার বাদ্য বাজাতে বাজাতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আসেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যেক মনোনয়ন প্রত্যাশীকে সর্বোচ্চ দু’জনকে সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র কিনতে আসতে বলা হয়েছিল, তবে সেই নির্দেশনা অনেকেই দিনভর মানেন নি। কার্যালয়ের ভেতরে শত শত নেতা-কর্মী অবস্থান করার কারণে মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। এদিকে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর উপস্থিতির কারণে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউসহ আশপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পল্টন মোড় হয়ে গুলিস্তানের দিকে আসা রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
প্রথম দিনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনেছেন নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলা) দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, চাঁদপুর-৩ আসনে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, দিনাজপুর-২ আসনে দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মাগুরা-১ ও ২ আসনে এবং ঢাকা-১০ আসনে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। সাকিবের পক্ষে তার স্বজনরা এ মনোনয়ন কিনেছেন। কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দীয়া) আসনে আলোচিত পুলিশ অফিসার আব্দুল কাহহার আকন্দ, মাদারীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের যুুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, মৌলবিবাজার-২ আসনে সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, নরসিংদী-৫ আসনে আওয়ামী লীগ নেতা রিয়াজুল কবির কাওছার, নেত্রকোনা-৪ আসনে সাজ্জাদুল হাসান, সুনামগঞ্জ-৩ আসনে আজিজুস সামাদ ডন, নেত্রকোনা-২ আসনে আরিফ খান জয়, টাঙ্গাইল-৬ আহসান খান টুটুল, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদ, শরীয়তপুর-৩ আসনে বাহাদুর বেপারী, শরীয়তপুর-১ আসনে আব্দুল আলীম ব্যাপারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহি, কুমিল্লা-৭ আসনের ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, জয়পুরহাট সদর-১ অ্যাডভোকেট সামসুল আলম দুদু, জয়পুরহাট-২ আসনে গোলাম মাহফুজ চৌধুরী, পিরোজপুর-১ আসনে শ ম রেজাউল করিম মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। ঢাকা-১ আসনের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও ঢাকা-৬ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি ও পাবনা-৪ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল মোহাম্মদ রেজাউল রহিম লাল।
ঢাকা-৫ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আলহাজ্ব কামরুল হাসান রিপন। মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার পর কামরুল হাসান রিপন বলেন, আমি ঢাকা-৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী। আমি দীর্ঘদিন যাবত ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। একজন আদর্শ জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে মানুষের কল্যাণে নিবেদন করতে চাই। বর্তমানে এই এলাকায় (ঢাকা-৫) আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে অন্য কারো ছাত্র রাজনীতির এমন বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার নেই। আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি। এছাড়া ওয়ান ইলিভেনে নেত্রীর (শেখ হাসিনা) মুক্তি আন্দোলনে আমি সক্রিয় ছিলাম। সে সময় পুরান ঢাকায় নেত্রীর মুক্তির সর্বোচ্চ আন্দোলন করেছি। তিনি বলেন, আমি করোনা মহামারীর সময় প্রায় ৩০ হাজার পরিবারকে সহায়তা করেছি। এছাড়া সাংগঠনিকভাবে যতগুলো কাজ করা দরকার সবগুলোতে আমি ছিলাম।
সাম্প্রতিক সময়ে এলাকায় নিজের জনসম্পৃক্ততা নিয়ে তিনি বলেন, এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে প্রত্যেকের সঙ্গে আমার বিশেষ সম্পৃক্ততা রয়েছে। সবাই আমাকে ভালোবাসে, আমিও সবাইকে ভালোবাসি। এলাকার মানুষের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা রয়েছে। এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমার বিশেষ সখ্যতা রয়েছে। সে হিসেবে এবার আমি দলের মনোনয়নের বিষয়ে আশাবাদী। বিরোধী দলের কর্মসূচিতে সবসময় সামনের কাতারে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই নেতা। তিনি বলেন, আমি আসলে দায়িত্বের বিষয়ে সবসময় সচেতন। আমি যখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সভাপতি ছিলাম, আমরা বিরোধীদলে ছিলাম। সে সময়ও আমি রাজপথ কখনো ছাড়ি নি। এখনও আমি বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও এবং অবরোধে সবসময় রাজপথে আছি। ঢাকা-৫ আসনের প্রত্যেকটি স্পটে আমি শক্ত অবস্থান রাখি। এটা আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকেই করি।
দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট আমিরুল ইসলাম বলেন, আমি প্রায় ৬০ বছর যাবত আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এবং অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা, লড়াই-সংগ্রাম, চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে এখন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হই এবং জাতির পিতার ডাকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। পরবর্তীতে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি এবং আমি কখনোই আওয়ামী লীগের পথ থেকে বিচ্যুত হই নাই। রাজনৈতিকভাবে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে এবং তাদের অবস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে সবসময় রাজনীতি করেছি। তাই সরাসরি মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দিতে এবং এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশীদার হতে জনপ্রতিনিধির বিকল্প কোন রাস্তা নেই। তাই আমি আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
সর্বশেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ০২:৩৭
পাঠকের মন্তব্য