আজ থেকে বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার হরতাল সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্স :

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই কঠোর আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তাদের সঙ্গে একইরকম কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকছে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক, জোট এবং এর বাইরের সরকারবিরোধী দলগুলো। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। বিএনপিও তাদের ৫ দফার অবরোধ কর্মসূচির পরিবর্তে আজ থেকে হরতালের কর্মসূচি পালন করছে। ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি শেষে ফের একই কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারণী একাধিক নেতা। একইসঙ্গে অবরোধে সব নেতাকর্মীদের মাঠে নামার নির্দেশনা না থাকলেও হরতালের সকলকে সক্রিয়ভাবে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।

বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, উদ্ভুত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কখন কি ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে তার একটি সম্ভাব্য রোডম্যাপ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে রয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও নির্বাচন প্রতিহতের জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছেন। আগামীদিনে ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে একযোগে কর্মসূচি আরও জোরদার এবং কঠোরভাবে পালন করতে চায় বিএনপি। এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক দায়িত্বশীল নেতারা যার যার স্থান থেকে কাজ করছেন। বিএনপির তৃণমূলের নেতারা জানান, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ক্ষমতাসীন সরকার পরিকল্পিতভাবে পণ্ড করে দিয়েছে। এখন দেশব্যাপী গ্রেফতারের নামে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। এরমাধ্যমে বিএনপির নেতাকর্মীদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। কারও বাসা-বাড়িতে তল্লাশির নামে ঘর-বাড়ি ও আসাবাবপত্র ভাঙচুর করা হচ্ছে। যে কারণে অধিকাংশ নেতাকর্মী ঘরে কিংবা আত্মীয়ের বাসায়ও থাকতে পারছেন না। ইউনিয়ন থেকে মহানগর পর্যায়েও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়েও গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন যে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ধান ক্ষেত, বাগান, বাঁশ ঝাড় এমনকি খোলা আকাশের নিচেও মানবেতর দিনাতিপাত করছেন। এমতাবস্থায়ও প্রতিটি নেতাকর্মী আন্দোলনের মাঠে থাকার বিষয়ে অনড়। ভয়ভীতি উপেক্ষা করে তারা যে কোনো মূল্যে আন্দোলনের সফলতা চান।

পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, এই সরকার মানুষের ভোটাধিকারের নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এদেরকে কেউ বিশ^াস করেনা। তাছাড়া দেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। ভয়-ভীতি, নির্যাতন উপেক্ষা করে আমাদের চলমান আন্দোলন কর্মসূচি আরও তীব্রতর হচ্ছে। সব শ্রেণিপেশার মানুষ আজকে রাস্তায় নেমেছে। তাদেরকে নিয়েই গণঅভ্যুত্থান ঘটবে এবং অবৈধ সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে ইনশাআল্লাহ। আমরা বিশ^াস করি নির্দলীয় সরকারের অধীনেই দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে।

দিনাজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার আহমেদ কচি বলেন, হামলা-মামলায় বিএনপির আন্দোলন থেমে থাকবে না। তারা এখন না ফেরার অবস্থানে চলে গেছেন।

নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. আনোয়ারুল হক বলেন, প্রত্যেকটি নেতাকর্মী কষ্ট করে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কর্মসূচি সফল করতে মাঠে রয়েছে। চাঁদপুর জেলা বিএনপির সদস্য ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম বলেন, সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি এবং প্রহসনের নির্বাচনী তফসিলের প্রতিবাদে হরতাল কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে পালন করা হবে। শেষ পর্যন্ত রাজপথে থেকে দাবি আদায় করা হবে বলে তিনি জানান।

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপি’র চেয়ারম্যান এডভোকেট ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, আবারও একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের লক্ষ্যে একতরফা তফসিলের প্রতিবাদে সারাদেশে ৪৮ ঘন্টার হরতাল পালিত হবে। দেশের জনগণ এই সরকারকে বিদায় করেই ছাড়বে ইনশাআল্লাহ।

নির্বাচনের একতরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে ৪৮ ঘন্টার হরতালে সকলকে রাজপথ নামার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, অবৈধ আওয়ামী সরকারের পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিতসার জন্য বিদেশে প্রেরণ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ হাজার হাজার নেতা-কর্মীর মুক্তিসহ চলমান আন্দোলনের একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এবং নির্বাচন কমিশনের একতরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে রোববার ভোর ৬টা থেকে শুরু হচ্ছে ৪৮ ঘন্টার দেশব্যাপী হরতাল যেটি মঙ্গলবার ভোট ৬টায় শেষ হবে। এটি হবে শান্তিপূর্ণ হরতাল।

তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের পক্ষ থেকে আমি এই হরতালকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য, এই হরতালকে বাস্তবায়ন করার জন্য সর্বমহলে, সর্বদিক থেকে আপামর জনসাধারণ প্রত্যেককে আহ্বান জানাচ্ছি, দলের নেতা-কর্মী ও যুগপত আন্দোলনে থাকা জোট ও দলের প্রতিও উদার্ত আহ্বান জানাচ্ছি। সকলে সাহসের ওপর ভর করে বুক চিটিয়ে রাজপথে উপস্থিত হবেন।

রিজভী বলেন, ৪৮ ঘন্টার এই হরতাল হচ্ছে অধিকার আদায়ের হরতাল, এই হরতাল হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে হরতাল, এই হরতাল হচ্ছে গণতন্ত্রকামী মানুষকে অন্যায়ভাবে জুলুম-নিপীড়ন-নির্যাতন করে ফরমায়েসী রায়ে শাস্তি যে ভয়ংকর এবং পৈশাচিক নির্যাতন করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের হরতাল। এই হরতাল অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে এই হরতাল। এই দাবি জনগণের দাবি, সারাদেশের মানুষ বহুদিন ধরে অধিকার বঞ্চিত, তাদের মালিকানা বঞ্চিত। জনগণের মালিকানা জনগনকে ফেরত দিতেই এই দূর্বার আন্দোলন।

৪৮ ঘন্টার হরতাল শুরু:

পঞ্চম দফার অবরোধ কর্মসূচি শেষ হওয়ার আগেরদিন গত বৃহস্পতিবার দাবি আদায়ে ৪৮ ঘন্টার হরতাল কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বিএনপি ও তার মিত্ররা। একদফা দাবি আদায় এবং নির্বাচন কমিশনের একতরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে ৪৮ ঘন্টার হরতাল আজ ভোর ৬টায় শুরু হয়েছে। ঢাকাসহ সারাদেশে আগামী ১৯ ও ২০ নভেম্বর (রোববার থেকে মঙ্গলবার) ৪৮ ঘন্টার সারাদেশে হরতাল ঘোষণা দেওয়া হয়। এই কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়ে পৃথকভাবে হরতাল পালনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদ, লেবার পার্টি।

মাঠে থাকবে জামায়াতসহ শরিকরা:

এদিকে দ্বাদশ নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করে ৪৮ ঘন্টা হরতালের সমর্থনে দফায় দফায় মিছিল-সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলো। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একতরফা নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন এসব দলের নেতারা। দ্বাদশ নির্বাচনের তফসিলকে নীলনকশা আখ্যা দিয়ে এর প্রতিবাদে জামায়াত ঘোষিত ১৯ ও ২০ নভেম্বর ৪৮ ঘন্টার হরতাল কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকারের একগুঁয়েমি, হঠকারিতা ও ভোটারবিহীন নির্বাচনের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার লক্ষ্যেই হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করতে আমরা বাধ্য হয়েছি। একতরফা ফরমায়েসি তফসিলের প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামী ৪৮ ঘন্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তিনি হরতাল কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে সফল করতে সর্বস্তরের নেতাকর্মী এবং দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

গণতন্ত্র মঞ্চের কয়েকজন নেতা জানান, দলীয় সরকারের অধীনে একতরফা নির্বাচন আয়োজনের তফসিল আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। সেইসঙ্গে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক নির্বাচন কমিশনকেও প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশের জনগণ। চলমান আন্দোলনে দেশবাসী যেভাবে শান্তিপূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন সেভাবে এগিয়ে যেতে থাকলে এই প্রহসনের তপশিলের সঙ্গে সঙ্গে এই লেজুড়বৃত্তিক ইসি ও অবৈধ ভোট ডাকাত সরকারের পতন অবশ্যম্ভাবী। তারা জনগণকে সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ৪৮ ঘন্টার হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে চালিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।

হরতালের সমর্থনে মিছিল-পিকেটিং: এদিকে ৪৮ ঘন্টার হরতালের সমর্থনে গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করেছেন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় হরতালের সমর্থনে রাজধানীর মালিবাগ বিশ্বরোডে মশাল মিছিল করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এতে নেতৃত্ব দেন বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল। গত সন্ধ্যায় রাজধানীর রামপুরা আবুল হোটেল-কাঁচাবাজার এলাকায় মশাল মিছিলে নেতৃত্ব দেন মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক জসিম শিকদার রানা। এসময় মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাবেক নেতা আব্দুল্লাহ আল হামিদ নীরব, রিমন, তৌহিদুল ইসলাম আরিফ, পাভেল, সোহাগ, আরিফ বিল্লাহ, ইমন, নাসির তন্ময়, হাফিজ, জুয়েল, রাহুল, আরিফ, জসিমসহ বিভিন্ন থানার নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও গতকাল বিকেলে সিলেট জেলা ও মহানগর, কক্সবাজার, সিরাজগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামী।

সর্বশেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ০২:৩১
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও