কমলগঞ্জে ড্রাম্পার ট্রাক: সড়কে ক্ষত, ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য

ছবি মুক্তিবাণী
ছবি মুক্তিবাণী
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি ।।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ মৌলভীবাজারের সহকারী প্রকৌশলী মো. কায়ছার হামিদ বলেন, ‘সড়ক নষ্টের অন্যতম কারণ এ ধারণক্ষমতার বেশি বা ওভারলোড বাহন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের বিভিন্ন রাস্তায় আইন অমান্য করে ধারণক্ষমতার বেশি বালু উন্মুক্তভাবে বহন করে বেপরোয়া গতিতে চলছে ১০ চাকার বালুবাহী ডাম্পার ট্রাক।এতে বালু রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরে ছড়িয়ে পড়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। একই সঙ্গে এসব ভারী যানের চাকার আঘাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কগুলো ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের পাশে চাতলাপুর ঘাট বালুর গদি থেকে প্রতিদিন বালু নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছে ১০ চাকার ডাম্পার ট্রাকগুলো। বালুবাহী ট্রাকগুলো নামছে নদীর তীরে। এসব ট্রাকে করে ১১ থেকে ১৪ টন বালু বহন করা হচ্ছে। আর চালকরা বেখেয়ালভাবেই এসব ডাম্পার ট্রাক চালান বলে অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসন-পুলিশ সদস্যদের সামনে দিয়ে অবাধে চলাচল করছে বালুবাহী ডাম্পার ট্রাক, কিন্তু এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কোনো আইন প্রয়োগ হচ্ছে না।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি গাড়িতে বালুর পরিমাণ উল্লেখ করার কথা থাকলেও নেই টোকেনে বালুর পরিমাণ। তা ছাড়া বালুবোঝাই ট্রাকগুলো সম্পূর্ণ খোলা। এতে বালু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে।

শমশেরনগর এলাকার বাসিন্দা মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমার বাড়ি রাস্তার পাশে। আমার বাড়ির পাশ দিয়ে প্রতিদিন ১০ চাকার ডাম্পার বালুবাহী ট্রাকসহ ছোট ছোট ডাম্পার ট্রাক দিয়ে মাটি বালু পরিবহন হয়। এতে বাড়ির পরিবেশ নোংরা হয়ে গেছে, আর শব্দদূষণও হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’

স্থানীয় বাইকচালক আলমগীর হোসেন ও নিবাস চন্দ বলেন, ‘খোলা ট্রাকে বালু পরিবহনের ফলে সড়কে চলার সময় ট্রাক থেকে ধুলাবালু চোখে পড়ে।’

শমশেরনগর বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবদুল হান্নান বলেন, ‘বালু বহনকারী বেপরোয়া যান চলাচলে ধুলাবালি উড়ে রাস্তার দুই পাশের দোকানপাট বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য। এ ছাড়া ওভারলোড বহনকারী গাড়ির কারণে শমশেরনগর-চাতলাপুর রোডে সবসময় যানজট লেগেই থাকে।’

ধারণক্ষমতার বেশি বালু পরিবহনের বিষয় জানতে চাইলে চাতলাপুর বালু ঘাটের প্লাটিনাম বিজনেস কনসোর্টিয়ামের নেজার (ম্যানেজার) জুয়েল মিয়া বলেন, ‘সারা দেশেই এভাবে অবৈধভাবে বালু ব্যবসা চলছে। আমাদের স্থানে এলে মাপ দেয়, ঘাটে মাপ দেয়া হয় না।

‘গন্তব্যে যাওয়ার পর বালু পরিমাপ করা হয়; ঘাটে মাপ দেয়া হয় না। ইউএনও সাহেব বলার পর থেকে ব্রিজের পাশ থেকে মেশিন সরিয়ে নিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একট ডাম্পার ট্রাকের চালক বলেন, ‘প্রতি ট্রাকে সাড়ে ৮০০ ফুট বালু নেয়ার কথা, তবে আমাদেরকে আরও বেশি পরিমাণ করে দেয়া হচ্ছে।’

সড়ক ও জনপথ বিভাগ মৌলভীবাজারের সহকারী প্রকৌশলী মো. কায়ছার হামিদ বলেন, ‘সড়ক নষ্টের অন্যতম কারণ এ ধারণক্ষমতার বেশি বা ওভারলোড বাহন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

কমলগঞ্জের ইউএনও জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘শরীফপুর বালুঘাটটি কুলাউড়া উপজেলার ইউএনও দেখার কথা, তবে আমরা বিষয়টি নজরে রাখব।’

কুলাউড়ার ইউএনও মাহমুদুর রহমান খন্দকার বলেন, ‘ব্রিজের পাশ থেকে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করিয়েছি। ওভারলোড বিষয়ে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সর্বশেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:৪৬
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও