সামনে কঠিন পথ সতর্ক থাকুন : ওবায়দুল কাদের

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেক্স :

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনের আগে দুটি কাজ নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে একটি কাজ হলো, নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া। আর আরেকটি কাজ হলো, বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী দলের আন্দোলনের নামে চোরাগোপ্তা হামলা মোকাবিলা এবং নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখা।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে সহযোগী সংগঠনের যৌথসভায় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। ‘সামনে কঠিন পথ’ এমন উল্লেখ করে তা অতিক্রম করার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক পাহারায় থাকতে এ সময় আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে বলে এ সময় অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। দেশে বিভিন্নভাবে সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে উল্লেখ করে গত ২৮ তারিখে বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, স্বাভাবিক আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার পর তারা অস্বাভাবিক পথে যাচ্ছে। তাদের পুরোনা চোরাগোপ্তা হামলা, গাড়ি পোড়ানো, আগুন সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি করছে। তারা সরকার তথা আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে হটানোর জন্য হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সরাসরি পারছে না, তাই চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে।

‘সামনে কঠিন পথ’ এমন উল্লেখ করে তা অতিক্রম করার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক পাহারায় থাকতে এ সময় আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আপনাদের আরো সতর্ক থাকতে হবে, যে সব জায়গায় তারা হামলা চালায়, সে সব জায়গায় আমাদের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি জোরদার করতে হবে। প্রস্তুতি নিয়ে, জায়গা চিহ্নিত করে অবস্থান নিয়ে সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। সরকারি দলের অনাগ্রহ, আলস্য আমরা দেখিনি। আমরা লক্ষ্য করছি আদর্শের প্রশ্নে নেত্রীর প্রতি আনুগত্য, নেত্রীর নির্দেশে আদেশ পালনে প্রত্যেকে সক্রিয়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ সময় বলেন, সামনে আরও কঠিন পথ আমাদের পাড়ি দিতে হবে। সে ভাবে আপনাদের প্রস্তুত করুন। এটা শুধু নির্বাচনের জন্য নয়, এটা আদর্শের লড়াই। উন্নয়ন আর অর্জনের জন্য শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। এই যুদ্ধ জয়ের প্রতিজ্ঞা নিয়েই নেমেছে আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা। এই সংকট আস্তে আস্তে কেটে যাবে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিকূল পরিস্থিতি চলছে বলে এ সময় মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, আজকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা দলের কার্যক্রমকে জোরদার করতে সহায়ক হবে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, আমাদের হাতে সময় একেবারেই কম। নির্বাচন জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হলে আমাদের হাতে সময় একেবারেই কম।

পোশাক শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনে বিএনপির উসকানি আছে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ইন্ধন তো আছেই। এখানে পরিষ্কারভাবে বিএনপি এবং তার দোসরদের কালো হাত বিস্তৃত হয়ে আছে। তারাই উসকানি দিচ্ছে, তারাই গুজব সৃষ্টি করছে। তিনি আরো বলেন, উসকানি আর গুজব সৃষ্টি করে তারা নিরীহ শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করছে। কোথায় ছিল শ্রমিকদের বেতন ৮০০ টাকা। আর সেই বেতন এখন ১২ হাজার ৫০০ টাকা। যেটা ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন দেশের অবস্থাও বুঝতে হবে। নেত্রী গতকাল পরিষ্কার করে সেটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেখানে বিজিএমইএএর দু-একজন নেতারাও ছিলেন। তাঁরা শুনেছেন। এ ব্যাপারে বেশির ভাগ সমাধান হয়ে গেছে।

তবে কোনাবাড়ী ও আশুলিয়া, এই দুটি জায়গায় কিছু সমস্যা আছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা মনে করি, আমাদের শ্রমিকেরা বর্তমান বাস্তবতার বিষয়গুলো উপলব্ধি করে সমাধানে এগিয়ে আসবেন। পোশাক শ্রমিকদের পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত মনিটর করছেন উল্লেখ করে সরকারের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা নিয়ে খুব একটা ষড়যন্ত্র করে, ওই ২৮ তারিখের মতো কিছু একটা করবে সে আশার গুড়ে বালি। শ্রমিকেরা কারো কথায় বিভ্রান্ত হয়ে নিজেরা নিজেদের ক্ষতি করবে না বলে তিনি আশা করেন।

যৌথ সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া, দলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসিম কুমার উকিল, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

এর আগে শুক্রবার সকালে রাজধানীর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে শহীদ নূূর হোসেন স্কয়ারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বর্তমান বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা যেটা সবার সামনেই পরিষ্কার। আমার দেশের গণতন্ত্র কঠিন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে। যে চ্যালেঞ্জটা এসেছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, জঙ্গিবাদী শক্তি ও গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির কাছ থেকে। এর আগেও তারা গণতন্ত্রে আঘাত এনেছে। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, তারাই (বিএনপি) আজকে গণতন্ত্রের নামে আন্দোলন করছে। সেই আন্দোলনের ব্যর্থতার একপর্যায়ে অগ্নিসন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা এখন আগুন দিয়ে বাস পোড়ানো, পরিবহন পোড়ানো ও আগুন সন্ত্রাসের মতো অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তারা সেই ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালের মতো নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব অপতৎপরতার পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে। আসলে এরা গণতন্ত্র চায় না। এরা নির্বাচন চায় না। আজকে তারা যে আন্দোলন করছে, সেই আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততার অভাব। তিনি বলেন, আন্দোলনের ব্যর্থতাকে তারা চোরাগোপ্তার দিকে নিয়ে গেছে। চোরাগোপ্তা আন্দোলন চালিয়ে তারা বর্তমান সরকার এবং শেখ হাসিনাকে হঠাতে চায়। এর মাধ্যমে তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়— এটাই হচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধীদলের আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য।

শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক এই স্লোগান নূর হোসেন বুকে ও পিঠে লিখে রাজপথের কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন। নূর হোসেনের রক্ত গণতন্ত্রকে শিকলমুক্ত করার লড়াইয়ে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এটা ছিল অনেকটা টার্নিং পয়েন্টের মতো। আজকের দিনে অনেক বাধা বিপত্তি ও চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা আমাদের দেশে অব্যাহত রয়েছে। গণতন্ত্রকে শিকলমুক্ত করতে আমাদের দেশে স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে আপসহীন সংগ্রামের ভূমিকা পালন করেছিলেন আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পৃথিবীতে গণতন্ত্র নিয়ে যত কথাই বলুক, গণতন্ত্র কোথাও পারফেক্ট নয়। গণতন্ত্রের ত্রুটি আছে। বিশ্বের গণতান্ত্রিক বড় বড় শক্তিগুলো, যারা নিজেদেরকে গণতন্ত্র মানবাধিকারের প্রবক্তা ভাবেন… তাদের গণতন্ত্রেও অনেক ত্রুটি লক্ষ্য করা যায়। আমরা আমাদের দেশে গণতন্ত্রকে অনেকটা ত্রুটিমুক্ত করেছি।

সর্বশেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৩, ০১:০২
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও