রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ডলার সংকটের মধ্যেই নতুন করে অনিশ্চয়তায় পড়ে যাচ্ছে পোশাক শিল্প। ৪০ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের এই শিল্প চরম অস্থিরতার মুখে পড়েছে। রুটি-রুজি তথা বর্তমান বাজার মূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে হাজার হাজার শ্রমিক রাজপথে নামে এসেছে। ন্যূনতম ‘গ্রহণযোগ্য’ মজুরি ঘোষণার দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে চলা আন্দোলন গতকাল ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।
আশুলিয়া, গাজীপুর ও সাভারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলনে অস্থির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হার্ড লাইনে সরকার। গতকাল গাজীপুরে বাসন থানা এলাকায় আন্দোলনরত শ্রমিক মো. রাসেল হাওলাদার (২৬) গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায়। রাশেলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ায় গাজীপুরসহ অন্যান্য এলাকায়ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের এলাকার গার্মেন্টস শ্রমিকরা রাজপথে নেমে আসে। উত্তপ্ত হয়ে পড়ে গাজিপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা। শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ। পুলিশের সাথে সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। এছাড়া সভার-আশুলিয়ায়ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। গাজিপুরে দুই গার্মেন্টসে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। উল্লেখ্য ২০১২ সালে আমিনুল ইসলাম নামের এক গার্মেন্ট শ্রমিকের মৃত্যু নিয়ে ভয়াবহ অবস্থায় পড়েছিল এই শিল্প। আন্তর্জাতিক মহলে ওই হত্যাকাণ্ড নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল।
গার্মেন্টসের এই অস্থিরতা গোটা পোশাক শিল্পে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তারা বলেন, করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর হামলায় গোটা বিশ্বের অর্থনীতির নাজুক অবস্থা। এরই প্রেক্ষিতে ডলার সঙ্কটের ফলে পোশাক শিল্পে এমনিতেই খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। ইউরোপীয় দেশগুলোসহ অন্যান্য দেশেও গার্মেন্টস পণ্যের রপ্তানি অনেক কমে গেছে। নতুন করে কোন অর্ডারও পাচ্ছে না। এর ফলে অনেক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় যদি শ্রমিক অসন্তোষ এভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে এ শিল্পখাতটিতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতিও অস্থির হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় গার্মেন্টস সেক্টরের এই অস্থিরতা আগুনে ঘি ঢালার মতো অবস্থা হতে পারে বলেও অনেকের আশঙ্কা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহি পরিচালক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে পোশাক শিল্পে অর্থাৎ গার্মেন্টস সেক্টরে যে শ্রমিক অসন্তোষ চলছে তা এ খাতে তথা দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। শ্রমিকরা তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছেন। তাদের এ দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। দ্রব্যমূল্য যে ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে সামান্য বেতনে শ্রমিকদের জীবন ধারণ সম্ভব নয়। তাদের একটি গ্রহণযোগ্য বেতন নির্ধারণ ও ঘোষণার জন্য মজুরি কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই মজুরি কমিশন শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি নিয়ে তালবাহানা করছেন। এতে শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে, অসন্তোষ বাড়ছে। তাই আমি মনে করি, এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার করে দ্রুত শ্রমিকদের গ্রহণযোগ্য বেতন-ভাতা ঘোষণা করা হোক। অন্যথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তা পোশাক শিল্পখাতে বিপর্যয় ডেকে আনবে।
পোশাক কারখানার ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা শ্রমিকদের ‘মর্যাদাপূর্ণ’ ন্যূনতম মজুরি যত দ্রুত সম্ভব ঘোষণার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মাসিক খরচ মেটাতে না পারায় শ্রমিকরা এই আন্দোলন করছেন। মালিকপক্ষের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের প্রস্তাবিত সর্বনিম্ন বেতন আট হাজার ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার ৪০০ টাকা করার প্রস্তাব যথেষ্ট নয় বলে শ্রমিকরা মনে করেন। আর তাই একটি সম্মানজনক বা গ্রহণযোগ্য বেতন-ভাতা ঘোষণার দাবিতে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এ দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।
পোশাক শ্রমিকদের জন্য গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি ইনকিলাবকে বলেন, এ বিষয়ে মজুরি বোর্ড কাজ করায় আমরা আশা করছি সময়মতো বেতন-ভাতা ঘোষণা করা হবে। শ্রমিক নেতারা ২৩ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা দাবি করলেও শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন হিসেবে মজুরি বোর্ডে ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা প্রস্তাব করেছেন রনি।
পোশাক শ্রমিকদের সংগঠন গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ বলেন, শ্রমিকরা হতাশ। তাদের শান্ত করতে মজুরি বোর্ড ন্যূনতম বেতন শিগগিরই ঘোষণা না করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
এদিকে তৈরি পোশাক শিল্প সেক্টরের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সচিবালয়ে এক প্রেসব্রিফিংয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দশ হাজার ৪০০ নয়, আরও বেশি হবে। গুজবে কান না দিয়ে শ্রমিকদের কারও কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে এমন গুজব উড়িয়ে দিয়ে বলেন, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকার বেশিই নির্ধারিত হবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মজুরি বোর্ড ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করবেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, মজুরি নির্ধারণের জন্য এখনো এক মাস বাকি আছে। ১ নভেম্বর মজুরি বোর্ডের সভা আছে। শ্রমিকরা কারও কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে কাজে ফিরে ফ্যাক্টরির নিরাপত্তা বিধান করবেন আমি এই আহ্বান জানাই। কারও ফাঁদে যেন তারা পা না দেন।
গাজীপুর থেকে আমাদের সংবাদদাতা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, গাজীপুরের বাসন থানা এলাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে রাসেল হাওলাদার (২৬) নামে এক পোশাক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। রাসেলের সহকর্মী অভিযোগ করেন, পুলিশের গুলিতে রাসেল নিহত হয়েছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোশারাফ হোসেন বলেন, সকাল ১০টার দিকে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। তারা কয়েকস্থানে ভাঙচুর করেছে, টায়ার জ্বালিয়ে একটি জিপ গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য শর্টগান, টিয়ার শেল ও জলকামান ব্যবহার করা হয়েছে।
রাসেলকে হাসপাতাল নিয়ে আসা সহকর্মী মো. আবু সুফিয়ান জানান, তারা ডিজাইন এক্সপ্রেস লিমিটেডের কারখানায় কাজ করেন। রাসেল ওই কারখানাটির ইলেক্ট্রিশিয়ান ছিলেন। নিহত রাসেল ঝালকাঠি সদর উপজেলার খাগুটিয়া গ্রামের আব্দুল হান্নান হাওলাদারের ছেলে। তিনি মালেকের বাড়ি এলাকায় একটি মেসে থাকতেন। সুফিয়ান বলেন, স্থানীয় ৫-৬টি গার্মেন্টসের কর্মীরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। সেজন্য সকালে আমাদের কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এরপর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কারখানা থেকে বের হয়ে আমরা হেঁটে বাসার দিকে রওনা দেই। তখন কারখানার সামনে পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে গুলি করে। পুলিশের ছোড়া গুলিতে রাসেল গুরুতর আহত হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিক্যালে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রাসেলের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
এ দিকে রাসের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যায় শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী এলাকায় এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড নামে এক পোশাক কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও এলাকাবাসী জানিয়েছে, কাশিমপুর রোডে কোনাবাড়ী থানা সংলগ্ন এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড কারখানায় শ্রমিকরা ভাঙচুর করার পর আগুন দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে।
সভার থেকে সেলিম আহমেদ জানান, সাভার ও আশুলিয়ায় ন্যূনতম ২৩ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে কয়েকটি কারখানার কয়েক হাজার আন্দোলনরত শ্রমিকদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ইটপাটকেল, কাঁদানে গ্যাস ও পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে শ্রমিক-পুলিশসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের আশুলিয়ার জামগড়া, ছয়তলা, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর এলাকায় ও সাভারের হেমায়েতপুরে পুলিশ ও শ্রমিকদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আন্দোলনের মুখে কর্তৃপক্ষ বেশকয়েকটি কারখানা একদিনের ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। পুলিশের রাবার বুলেটে আহত এনভয় গার্মেন্টসের শ্রমিক নজরুল ইসলাম, ভার্চুয়াল গার্মেন্টসের শ্রমিক সীমা আক্তার, পথচারী বিমল শীল ও মজনু মিয়ার পরিচয় জানা গেলেও আহত অন্যদের পরিচয় জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সকাল ৮টার দিকে শ্রমিকরা কাজে যোগদানের পরপরই কারখানার ভেতরে আন্দোলন শুরু করেন। এ সময় কর্তৃপক্ষ কারখানা ছুটি ঘোষণা করে দিলে শ্রমিকরা বের হয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়কে নেমে টায়ার ও কাঠের গুঁড়ি দিয়ে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। পরে পুলিশ তাদের সড়ক থেকে তুলে দিতে গেলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে পুলিশ। তখন শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয় যায়। পরে বেলা ১০টার দিকে আবারও সড়ক অবরোধ করে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে বিক্ষোভকারীরা।
জামগড়া এলাকার ভার্চুয়াল গার্মেন্টসের অপারেটর মোসাম্মত লাইলী বলেন, বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে আর আমরা যে মজুরী পাই তাতে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বাসাভাড়া, বাজার খরচ, চিকিৎসা খরচ, বাচ্চাদের লেখাপড়া খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমরা মজুরী বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছিলাম কর্তৃপক্ষের কাছে। তারা আমাদের দাবির বিষয়ে কোন কথা না বলায় শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেছে। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ সময় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। বেশকিছু কারখানায় একদিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাজোয়া যানসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে শ্রমিকদের দাবি ও আন্দোলনের বিষয়ে একাধিক কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও কাউকে পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম থেকে রফিকুল ইসলাম সেলিম জানান, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চট্টগ্রামে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মাঝে চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা শ্রমিকেরা একই দাবিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় নেমে মিছিল, সমাবেশ, অবরোধ করছে। চট্টগ্রামে শ্রমিকেরা এখনও রাস্তায় না নামলেও মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছেন। এনিয়ে কোন কোন কারখানায় অসন্তোষ বিরাজ করছে। তাতে উৎপাদনও বিঘ্নিত হচ্ছে। কারখানা মালিকেরা যথাসময়ে মজুরি বাড়ানোর আশ^াস দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন। শ্রমিক অসন্তোষ ঠেকাতে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, কারখানা মালিক এবং শিল্প পুলিশের মনিটরিংও জোরদার করা হয়েছে।
জানা গেছে, দ্রব্যমূল্য ও আর্থিক নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখে পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ৮ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা দাবি করেছেন শ্রমিকরা। তবে মালিকপক্ষ ২৪০০ টাকা বাড়িয়ে সর্বনিম্ন বেতন ১০ হাজার ৪০০ টাকা দিতে চান। এ নিয়ে শ্রমিকদের মাঝে অস্থিরতা বিরাজ করছে। শ্রমিক নেতারা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের নজিরবিহীন ঊর্ধ্বগতিতে শ্রমিকরা এখন দিশেহারা। তারা তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায়ও সঙ্কটের কথা বলে অনেক কারখানায় বেতন-ভাতা বকেয়া রাখা হচ্ছে। কোথাও আবার কাজ নেই অজুহাতে নীরবে শ্রমিক ছাটাই চলছে। এর ফলে পোশাক শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এদিকে পোশাকখাতে মন্দা অবস্থা অব্যাহত রয়েছে। ইউরোপ আমেরিকায় রফতানি কমে গেছে প্রায় ৪০ শতাংশের মতো। বিজিএমইএর হিসেবে, গত মাসের তুলনায় চলতি মাসে চট্টগ্রাম থেকে রফতানি কমেছে নয় শতাংশ। বৈশি^ক মন্দার কারণে বিশ^বাজারে তৈরি পোশাকের চাহিদা কমে গেছে। এদিকে দেশে ক্রমবর্ধমান গ্যাস, বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে কারখানায় উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। জ¦ালানি সঙ্কটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। লোডশেডিংয়ের কারণে পোশাক কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সম্প্রতি গ্যাস সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এলএনজি স্টেশনে সংস্কার কাজের কারণে চট্টগ্রামে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে অন্যান্য শিল্প কারখানার মতো তৈরি পোশাক কারখানায়ও উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। বিকল্প জ¦ালানি দিয়ে কারখানার উৎপাদনের চাকা সচল রাখতে গিয়ে বাড়ছে ব্যয়। একদিকে রফতানি কমে গেছে, বিশ^বাজারে পোশাকের দামও পড়ে গেছে। তার উপর উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় লোকসান গুনছেন পোশাক মালিকেরা। পোশাকখাতে এমন দুঃসময়ের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কারখানা মালিকেরা।
বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব বলেন, হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে আমরা এখন চরম শঙ্কিত। এমনিতেই আমেরিকা, ইউরোপের বাজারে রফতানি কমে গেছে। বৈশি^ক অর্থনৈতিক মন্দায় পোশাকখাত ধুঁকছে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক অস্থিরতা বিশেষ করে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির কারণে যথাসময়ে পণ্য উৎপাদন ও জাহাজিকরণ করা না গেলে এ খাত আরও ক্ষতির মুখে পড়বে। শ্রমিক অসন্তোষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে কিছুটা অস্থিরতা রয়েছে। তবে আমরা গভীর তদারকির মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখছি। সরকারিভাবে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হলে দ্রুতসময়ে তা বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।
সর্বশেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০১:২৪
পাঠকের মন্তব্য