নজিরবিহীন দুর্নীতি, যন্ত্রপাতি না কিনেই ৪ কোটি টাকা গায়েব

৪ কোটি টাকা গায়েব
৪ কোটি টাকা গায়েব

রংপুর মেডিকেল কলেজের (রমেক) চিকিৎসা সামগ্রী ও মালামাল কেনায় সাড়ে চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলার অন্যতম আসামি ডা. সরোয়াত হোসেন চন্দনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (০১ জানুয়ারি) বিকেলে রংপুর মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সরোয়াত হোসেন চন্দন রংপুর জেলা ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক বেগম রাশেদা সুলতানা।

ডা. সরোয়াত হোসেন চন্দনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদকের আইনজীবী পিপি হারুনর-উর-রশীদ।

রংপুর মেডিকেল কলেজের যন্ত্রপাতি কেনাকাটার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নূর ইসলামসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গত ১২ সেপ্টেম্বর মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় রংপুরে মামলাটি করেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক ফেরদৌস রহমান।

ফেরদৌস রহমানের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, রংপুর মেডিকেল কলেজের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদির প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ব্যতীত কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য অধ্যক্ষ ডা. মো. নূর ইসলাম কর্তৃক বিধিবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়। তিনি যথাযথ চাহিদা ব্যতীত স্পেসিফিকেশন ছাড়াই দরপত্র আহ্বান করেন এবং পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানি’কে কার্যাদেশ দেন।

অসৎ উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালের ২১ জুন দরপত্র মূল্যায়ন করে একই তারিখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে একই তারিখে কার্যাদেশ দেন অধ্যক্ষ ডা. মো. নূর। কার্যাদেশ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ প্রাপ্তির পঞ্চম দিনে অর্থাৎ ২৬ জুন কার্যাদেশের শর্ত অনুযায়ী যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করলেও নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত বিল একই তারিখে পাস করেন। প্রশাসনিক অনুমোদনসহ ব্যয় মঞ্জুরি প্রাপ্তির আগেই বিল স্বাক্ষরপূর্বক জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে দাখিল করেন ডা. নূর।

এভাবে বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির মালিক জাহের উদ্দিন সরকারকে চার কোটি ৪৮ লাখ ৮৯ হাজার ৩০০ টাকা আত্মসাতে সহায়তা করেন তিনি।

দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ও দরপ্রস্তাব দাখিলকারী বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোংয়ের মালিক জাহের উদ্দিন সরকার, মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক যথাক্রমে আব্দুস সাত্তার সরকার (জাহের উদ্দিন সরকারের বাবা), আহসান হাবীব (জাহের উদ্দিন সরকারের ছেলে) এবং ইউনির্ভাসেল ট্রেড কর্পোরেশনের মালিক আসাদুর রহমান (জাহের উদ্দিন সরকারের বোন জামাই) পরিচয় গোপন করে পরস্পর যোগসাজশে সিন্ডিকেট করে সাজানো দরপত্র দাখিল করেন। এরপর কার্যাদেশ প্রাপ্ত হয়ে কার্যাদেশের শর্ত অনুযায়ী যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করে অপ্রয়োজনীয় ও নিম্নমানের ব্যবহার অনুপযোগী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে সরকারের উল্লেখিত পরিমাণ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।

দুদকের আইনজীবী হারুন-উর-রশীদ বলেন, আসামি ডা. সারোয়াত হোসেন চন্দন প্রধান আসামি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ নূর ইসলামের অন্যতম সহযোগী ছিলেন। ডা. চন্দন ওই মালামাল ক্রয় কমিটি, দরপত্র কমিটি, বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন। ফলে মামলায় তাকেও আসামি করেছে দুদক। বুধবার আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

প্রসঙ্গত, মামলার প্রধান আসামি রংপুর মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ নূর ইসলাম গত ২৬ নভেম্বর আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। বর্তমানে তিনি কারাগারে।

সর্বশেষ আপডেট: ২ জানুয়ারী ২০২০, ০১:০৬
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও