মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালিঘাট রোড চৌমুহনা থেকে ফুলছড়া চা-বাগান পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কের সংস্কারকাজ ছয় মাস ধরে বন্ধ। সড়কে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত, খানা-খন্দ। শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালুর কারণে এবং বৃষ্টির দিনে পানি জমে সড়কটির বেহাল দশা হয়ে থাকে। সড়কে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বিজিবি ক্যাম্প শ্রীমঙ্গল সেক্টর, ৪৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন, বর্ডার গার্ড পাবলিক হাই স্কুল, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জালালাবাদ গ্যাস অফিস, দি কনসলিডেটেড টি অ্যান্ড ল্যান্ডস কোম্পানি (বিডি) লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়সহ ১২টি চা-বাগান এ সড়কের পাশে অবস্থিত।
এ ছাড়া রাজঘাট ও কালিঘাট ইউনিয়নের বাসিন্দাদের উপজেলা সদরে যেতে এ সড়ক ব্যবহার করতে হয়। শ্রীমঙ্গলে ভ্রমণে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকরা চা-বাগান ও সাত রঙের চায়ের জন্য বিখ্যাত আদি নীলকণ্ঠ টি কেবিন, রামনগর মণিপুরীপাড়া যাওয়ার জন্যও এ সড়ক ব্যবহার করেন। বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় বাধ্য হয়েই স্থানীয়, শিক্ষার্থী, ভ্রমণকারীদের এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীসাধারণ ও বিভিন্ন যানবাহনের চালকদের। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগী ও তার স্বজনদের।
শ্রীমঙ্গল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গল-ফুলছড়া সড়কটির বেহাল দশার কারণে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রক্রিয়া শেষে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মেসার্স জেরিন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরুই করেছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। তারা প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের পুরোনো ম্যাকাডম তুলে ইটের খোয়া ফেলে কার্পেটিং করে। এরপর মার্চ মাস থেকে কাজটি বন্ধ করে দেয়। শুষ্ক মৌসুমে সড়কের পার্শ্ববর্তী বাড়িঘর, গাছপালা ধুলার আস্তরণে ঢেকে যায়। আর বৃষ্টির দিনে পুরো সড়কের খানা-খন্দে পানি জমে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্ত্রীকে চিকিৎসা করাতে আসা রাজঘাট ইউনিয়নের বিদ্যাবিল চা-বাগানের শ্রমিক স্যামুয়েল মেকলাম বলেন, ‘স্ত্রী সাত মাসের গর্ভবতী। নিয়মিত চেকআপ করাতে হাসপাতালে এসেছিলাম। ফেরার পথে কাটাবট পর্যন্ত যাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পুনরায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হয়েছে। পরে সিন্দুরখাঁন বাজার হয়ে অনেক ঘুরে বাড়ি ফিরেছি।’
ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসছেন নিলীমা পাল চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল দেশের একটি সুপরিচিত পর্যটন এলাকা। এখানে সব রাস্তাঘাট চলাচলের উপযোগী হলেও কালিঘাট-ফুলছড়া সড়কটি যেন মারণফাঁদ।’
কাজ বন্ধ রাখার কারণ জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ইশরাত জাহান জেরিনের মোবাইল ফোনে বারবার কল দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়।
শ্রীমঙ্গল এলজিইডির প্রকৌশলী ইউসুফ হোসেন খান বলেন, ‘সড়কটির বেহাল দশা। ঠিকাদার কাজটি আংশিক করে ফেলে রেখেছে। তাদের জামানত বাজেয়াপ্তসহ কার্যাদেশ বাতিলের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কার্যাদেশ বাতিল হলে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হবে।’
সর্বশেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:৩৫
পাঠকের মন্তব্য