ছড়ার বাঁধ কেটে মাটি বিক্রি, পানিতে তলিয়ে গেছে ক্ষেত

ছবি মুক্তিবাণী
ছবি মুক্তিবাণী
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় গোগালি ছড়ার বাঁধ কেটে মাটি বিক্রি করেছেন পার্শ¦বর্তী জমির এক মালিক। যারফলে এই কাটা বাঁধ দিয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করে হাওরের ক্ষেত তলীয়ে গেছে। তাছাড়া ছড়ার একাধিক স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়া এবং ছড়ায় বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহে বাঁধাগ্রস্থ করায় সামান্য বৃষ্টিতে তলীয়ে যাচ্ছে হাওর। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন শতাধিক কৃষক।

জানা যায়, উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়ন দিয়ে গোগালিছড়া প্রবাহীত হয়ে হাকালুকি হাওরে মিলিত হয়েছে। ২০১৬ সালে তৎকালীন এমপি আবদুল মতিন বরাদ্দ দিয়ে ঘাগটিয়া থেকে আছুরিঘাট পর্যন্ত ছড়াটি পু:নখনন করেন। প্রায় ৪০ ফুট প্রশস্ত করে ছড়াটি খনন করা হয়। হাল-চাষের যানবাহন সহজে যাতায়াতের জন্য ২০ ফুট প্রশস্ত করে ছড়ার দুই পাড় বাঁধা হয়। ছড়া খননের প্রথম ২ থেকে ৩ বছর জয়চন্ডী ইউনিয়নের ৯, ৮ এবং ৭নং ওয়াার্ডের কৃষকরা স্বাচ্ছন্দে হাওরে ক্ষেত করেছেন। শুকনো সময়ে ছড়ার পানি দিয়ে চাষাবাদ হয়েছে আবার ভারী বৃষ্টি হলে ছড়া দিয়ে দ্রæত পানি নেমে গেছে। তবে, এ সুসময় বেশিদিন টেকেনি। মাত্র ৩ বছর পর থেকেই ছড়ার পাড় দখল করা এবং মাটি কেটে ভিটা ভরাটসহ অন্যত্র বিক্রি করা শুরু হয়ে যায়। তখন অনেকেই স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। কিন্তু শক্ত কোন ভূমিকা না নেওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠে ভূমি খেকো চক্র।

সরেজমিনে দেখা য়ায়, কুলাউড়া-বিজয়া রোডের গিয়াসনগর এলাকার পশ্চিমে সোনা মিয়ার বাড়ির উত্তরে গোগালি ছড়ার ৫০ থেকে ৬০ ফুট পাড় কেটে নিয়েছেন পাশর্^বর্তী জমির মালিক। নিজের জমির মাটির সাথে সাথে ছড়ার পুরো পাড়টিও তিনি কেটে নিয়েছেন। যারকারনে এই স্থান দিয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করে উত্তর কুলাউড়া ও জয়চন্ডী এলাকার হাওরে রোপণকৃত ২০ থেকে ৩০ একর সাইল জমি পানিতে তলীয়ে গেছে। উত্তর কুলাউড়া এলাকার বাসিন্দা মইনুল হক বকুল জমির মাটিসহ ছড়ার বাঁধটি কেটেছেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। জয়চন্ডী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডেও দানাপুর এলাকায় গোগালি ছড়ার বাঁধ ভাঙ্গা স্থান দিয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করে ঘাগটিয়া, হোতারপাড়া, কামারকান্দি ও গিয়াসনগর হাওরের সাইল ধানের জমি তলীয়ে গেছে।

গিয়াসনগর এলাকার বাসিন্দা এম এ গনি, আব্দুল খালিক, জাসিম মিয়া, ইসলাম মিয়া, জয়চন্ডী গ্রামের কুটুর মিয়া, নিভু মালাকার, ছঈদ আলী, উত্তর কুলাউড়া এলাকার আব্দুল হান্নান, রংগীরকুল এলাকার মনাফ মিয়া, করিম মিয়াসহ অনেকেই জানান, ছড়ার ভাঙ্গা বাঁধটি সংস্কার না করায় এবং বাঁধ কেটে মাটি বিক্রি করায় ওই স্থান দিয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করে হাওরের ক্ষেত তলীয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শত একর জমির সাইল ক্ষেত।

এছাড়াও ছড়ার বিভিন্ন স্থানে পাড় দখল করে ঘর-বাড়ি বানিয়ে রেখেছেন অনেকেই। আবার অনেক স্থানে ছড়ার পাড় কেটে নিজেদের জমির মধ্যে দখলে নেওয়া হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিন পরেই ৪০ ফুট ছড়াটি আগের ১০ ফুটের খালে পরিনত হয়ে যাবে বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে মইনুল হক বকুল জানান, জমিটি তাঁর নিজের। ছড়া খনন করার সময় পাড়টি তাঁর জমির মধ্যে দেওয়া হয়েছে। তাই তিনি পাড় কেটে নিজের জমি উদ্ধার করেছেন। তবে, মানুষের ক্ষতি হলে পাড়টি তিনি আবার বেঁধে দিবেন বলেও জানান।

এ বিষয়ে জয়চন্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রব মাহাবুব জানান, টানা ভারী বর্ষণের ফলে হাওরে পানি জমেছে। যেখানে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা ছিলো, সেগুলো কেটে দেওয়া হয়েছে, ইতিমধ্যে পানিও নেমে গেছে। ছড়ার পাড় কাটার বিষয়টি জেনেছি, সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং বাঁধ ভাঙ্গা স্থান মেরামত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:২৯
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও